আম একটি সুস্বাদু রসালো ফল। আম পছন্দ করেন না এমন লোক পাওয়া ভার। আমের মিষ্টি ঘ্রাণ ও স্বাদ দুটোই মনোমুগ্ধকর। বাংলাদেশের আমের দুনিয়া জোড়া খ্যাতি থাকা সত্ত্বেও গত কয়েক বছর ধরে পাকা আমে নানা ধরনের বিষাক্ত ক্যামিকেল মিশ্রণের ফলে এই জনপ্রিয় ফলটি শরীর ও স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর হিসেবে প্রতীয়মান হয়েছে। আশার বিষয় হচ্ছে, এ বছর ক্যামিকেলমুক্ত আম পাওয়া যাচ্ছে। গতকাল রোববার দৈনিক ইনকিলাবে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এবারের আমে ফরমালিন নেই। গত শনিবার রাজধানীসহ দেশের কয়েকটি বিভাগীয় ও জেলা শহরে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইন্সটিটিউশন-এর পরীক্ষায় বাজারে আসা আমে ফরমালিন পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে বিএসটিআইয়ের সহকারী পরিচালক রিয়াজুল হক। রাজধানীর কয়েকটি এলাকায় ফলের বাজার ঘুরে প্রতিবেদক জানিয়েছেন, এবার ভরা মৌসুমেও ফরমালিন মিশ্রিত আম পাওয়া যাচ্ছে না। এমনকি পুরনো ঢাকার পাইকারী আড়তেও ফরমালিন দেয়ার প্রবণতা নেই। রিপোর্টে বলা হয়েছে, এক সময়ে পাইকারী বাজারগুলোতে যেখানে র্যাব-পুলিশের কড়া প্রহরাতেও ফরমালিনের মিশ্রণ ঠেকানো কষ্টকর ছিল, এখন সেখানে কোনো তদারকি ছাড়াই বিষ মেশানো বন্ধ রয়েছে। পাইকারী ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, আমরা সচেতন হয়েছি। কেউ আমে বা মৌসুমী অন্য কোনো ফলে ফরমালিন বা কার্বাইড দিচ্ছে এমন খবর শুনলেই মার্কেটের ব্যবসায়ীরা মিলে প্রতিবাদ করছি, বাধা দিচ্ছি। পরিস্থিতি সম্পর্কে ভেজালবিরোধী অভিযানের এক সময়ের ম্যাজিস্ট্রেট আল-আমীন এটিকে ভেজালবিরোধী অভিযানের সুফল বলে উল্লেখ করেছেন।
মৌসুমী ফলে ক্ষতিকর ক্যামিকেল মিশ্রণের খবর নতুন নয়। বছর কয়েক আগে এ প্রবণতা শুরু হয়েছিল। এর পেছনে মূল কারণ ছিল ভারতীয় বিষাক্ত ক্যামিকেল মিশ্রিত মৌসুমী ফল। দেখা যেত, মৌসুম শুরু হবার আগেই বাজারে এসব ফল উঠতে শুরু করেছে। বাংলাদেশের গাছে আম যখন গুটি আকার ধারণ করছে তখন বাজারে এসব ভারতীয় আম পাকা হিসেবে বিক্রি হতো। ভারতীয় আমের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে গিয়ে দেশী ব্যবসায়ীরাও বিষাক্ত ক্যামিকেল দিয়ে অপরিপক্ব আম পাকিয়ে বাজারজাত শুরু করে। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছিল যে, সব ধরনের ফলেই ক্ষতিকর ক্যামিকেল মেশানো হতো। মূলত মিডিয়াই প্রথম এর বিরুদ্ধে প্রচারণা শুরু করে। ধীরে ধীরে জনমত সংগঠিত হতে থাকে। সেই সঙ্গে প্রশাসনিক পদক্ষেপও শুরু হয়। ফলে বিষ মেশানোর সঙ্গে যেসব কারণ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যুক্ত ছিল তা শনাক্তকরণের মাধ্যমে দূর করার কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা শুরু হয়। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী মাঠ পর্যায়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার সুফলই এখন সর্বত্র পড়তে শুরু করেছে। এ কথাও বলা দরকার, বর্তমানে মৌসুমী ফলের বিপণন ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন এসেছে যার ফলে উৎপাদকের পুঁজি হারিয়ে যাওয়া অনেকটাই আশঙ্কামুক্ত হয়েছে। তবে উদ্বেগের নিরসন হয়েছে, সে কথা কোনো অবস্থাতেই বলা যাবে না। অন্যদিকে বিএসটিআই কর্তৃপক্ষ যাই বলুক না কেন বাজার সম্পূর্ণরূপে বিষমুক্ত হয়েছে সে কথাও নিশ্চিত করে বলা যাবে না। এবারেও বাজারে দেশীয় আমের বাজারজাতকরণের আগেই সীমান্ত দিয়ে অপুষ্ট অথচ রং চড়া আম বাজারে প্রবেশ করেছে। এখনো সেসব আম বাজারে রয়েছে। যদিও এ ব্যাপারে জনসাধারণকে সতর্ক করা হয়েছিল। সেটি বড় কথা নয়। বিবেচ্য বিষয় হচ্ছে, এসব আম বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে শনাক্ত করতে হবে এবং কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
স্বাস্থ্যের জন্য ফলের প্রয়োজনীয়তা লিখে বা বলে বুঝাবার কোনো প্রয়োজন নেই। কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াবিহীন ফল মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য শক্তিশালী রোগ প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে। প্রকৃতির এই অবারিত অবদানকে যারা মানুষের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর হিসেবে প্রতিপন্ন করেছে তাদের যে বোধোদয় হয়েছে সেজন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ। এ বছর মৌসুমী ফলের মৌসুমেই রোজা। এ সময়ে স্বাভাবিকভাবেই ফলের চাহিদা কিছুটা বেশি হয়। তাই বিষমুক্ত সরবরাহ ফল সরবরাহ এবং তদারকি বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। শুধু লোক দেখানো ভ্রাম্যমাণ আদালত বসালে চলবে না। ফল যাতে আক্ষরিক অর্থে সব সময় বিষমুক্ত থাকে এ ধরনের কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। মূল বিষয় হচ্ছে, যেটুকু অর্জিত হয়েছে এটুকুতেই শেষ হলে চলবে না। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সতর্ক ও সচেতন হতে হবে। উল্লেখ করা প্রয়োজন, ইতোমধ্যে ব্যাগেজ পদ্ধতিতে ফল উৎপাদন অনেক কার্যকর সুফল দিচ্ছে। এর ফলে কীটনাশক প্রয়োগের থেকেও ফলকে রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে। ফল উৎপাদকদের এ ব্যাপারে উৎসাহী করে তুলতে হবে। বাংলাদেশ বিশ্বে শীর্ষ আম উৎপাদনকারী দেশগুলোর অন্যতম। আম রফতানি করেও বাংলাদেশ বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে। সে বিবেচনাতেও আমসহ অন্যান্য মৌসুমী ফলকে বিষমুক্ত রাখা অত্যন্ত জরুরী।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন