পবিত্র ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে কুমিল্লায় চলছে গরু মোটাতাজাকরণের কাজ। ঈদুল আজহায় কেউ নিজের গোয়াল থেকে পছন্দের গরু কোরবানি করেন। কেউবা হাটবাজার থেকে কিনে আনেন। গ্রামাঞ্চলের কৃষকরা এখন পুরোদমে ব্যস্ত গরু মোটাতাজাকরণের জন্য।
কৃষকের পাশাপাশি শিক্ষিত বেকার যুবক ও এসব কাজে বেশি করে মনোনিবেশ করছেন। কয়েক বছর গরু পালনের পর ঈদে ভাল আয় করা যায়। অনেকেই আবার যুব উন্নয়ন অধিদফতর থেকে গরু মোটাতাজাকরণের প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। ঈদের যতই সময় ঘনিয়ে আসছে ততই গরু মোটাতাজা করে ভাল দাম পাওয়ার জন্য গরুর পরিচর্যা নিয়ে কৃষকরা ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। গরুকে খড়, তাজা ঘাস, খৈল ও ভ‚ষি ছাড়াও খাওয়ানো হচ্ছে হরেক রকমের পুষ্টিকর খাবার। পশু ডাক্তারকে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে পরীক্ষা করানো হচ্ছে গরুর স্বাস্থ্য। কেউ কেউ আবার দ্রæত গরু মোটাতাজা করার জন্য খাওয়ানো হচ্ছে বিভিন্ন ক্ষতিকারক দেশি-বিদেশি ওষুধ। তবে বর্তমানে গরুর খাবারের দাম অনেক বৃদ্ধির ফলে কৃষকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছে। খড়, খৈল ও ভুষির দাম প্রতিনিয়তই বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিছু কিছ অশিক্ষিত হাতুরি ডাক্তার কৃষকের গরু দ্রæত মোটাতাজাকরণের লোভ দেখিয়ে ক্ষতিকারক ওষুধ দিচ্ছেন। ফলে কিছুদিন পরে গরু শুকিয়ে মারা যাচ্ছে।
বড়দৈল গ্রামের খামারি আবদি মিয়া জানান, আড়াই থেকে তিন মাসেই সহজ উপায়ে গরু মোটাতাজা করা সম্ভব। প্রথমেই কৃমিমুক্ত করা, নিয়মিত খাবার পদ্ধতি (ইউএমএস) ইউরিয়া মোলাসেস স্ট্রো প্রয়োজনীয় ভ্যাকসিন, স্বাস্থ্যসম্মত ওষুধ ব্যবহার করেই স্বাস্থ্যবান পশু তৈরি করা যায়।
ভেটেরিনারি সার্জন ডা. মো. আশরাফ হোসেন জানান, গত দুই তিন বছর ধরে স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে গোশত উৎপাদনে খামারিদের নিয়ে চেষ্টা করে যাচ্ছি। স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধসহ মানবদেহের ক্ষতিকারক এমন ওষুধ ব্যবহারে নিরুৎসাহিত, এর কুফল কি এ নিয়ে হাসপাতালে, খামারিদের বাড়িতে, নির্দিষ্ট এলাকায় সচেতনতামূলক সভা-সেমিনার করা হচ্ছে। কোনো কোনো ওষুধ মানব দেহের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ, কোনো ওষুধ স্বাস্থ্যসম্মত এসব বিষয়ে নিয়মিত পরামর্শ নিচ্ছেন খামারিরা। কুমিল্লার কয়েকজন খামারি ও চাষি জানান, সাধারণত গরুকে প্রাকৃতিক পন্থায় মোটাতাজা ও সুস্থ রাখতে খড়, লালি-গুড়, ভাতের মাড়, তাজা ঘাস, খৈল, গম, ছোলা, খেসারি, মাষকলাই, মটরের ভুষিসহ বিভিন্ন পুষ্টিকর খাবার দেওয়া হয়। এ নিয়মে গরু মোটাতাজা করা হলে ক্রেতা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন না। এ ধরনের গরুর মাংস খেয়ে অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকি থাকে না। প্রাকৃতিক উপায়ে মোটাতাজা গরুর চাহিদা ও দাম ভালো পাওয়া যায়। খামারিরা আরও জানান, গত বছর ও তার আগের বছর ঈদুল আজহা সামনে রেখে এ অঞ্চলের কিছু কিছু অসাধু মৌসুমি ব্যবসায়ী গরুকে মোটাতাজা করতে ব্যবহার করছে স্টেরয়েড জাতীয় নানা ওষুধ। অধিক লাভের আশায় তারা গরু মোটাতাজা করতে ব্যবহার করে ভারত থেকে চোরাপথে আসা ভারতীয় ডেক্সিন, স্টেরয়েড, হরমোন, উচ্চমাত্রার রাসায়নিক। এ সব ওষুধ গরুকে খাওয়ালে কয়েক মাসের মধ্যে গরুর শরীর ফুলে মোটা হয়ে যায়। ডা. সাদেক নামের এক পশু চিকিৎসক বলেন, পাম বড়ি, ডেক্সামেথাথন ও স্টেরয়েড ট্যাবলেট খাওয়ানোর পর গরুর চামড়ার ভেতরে বাড়তি পানির স্তর জমে গরুকে বেশি মোটাতাজা ও সবল দেখায়। এতে কমে যায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। পাম বড়িতে ক্ষতিকর স্টেরয়েড থাকে। এতে গরুর লিভার নষ্ট হয়ে যায়। স্টেরয়েড মিশ্রিত গরুর গোশত মানবদেহের জন্য খুবই ক্ষতিকর। এটি এমন পদার্থ, যা মাত্রাতিরিক্ত তাপেও ধ্বংস হয় না। জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ জানান, গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার জেলায় নিরাপদ পশু পালন বেশি হয়েছে। খামারিদের সচেতন করতে নিয়মিত সভা-সেমিনার করা হচ্ছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন