বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা উঠে গেল, সাগরে মাছ ধরতে যাচ্ছে জেলেরা

বাজারে মাছের সরবরাহ বাড়বে

নাছিম উল আলম | প্রকাশের সময় : ২৫ জুলাই, ২০১৯, ৭:১৯ পিএম

সাগরে মৎস সম্পদ বৃদ্ধি সহ ইলিশের গর্ভ সঞ্চার নির্বিঘ্ন করতে টানা ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা উঠে যাবার পরে উপকূলের প্রায় দু লাখ জেলের মধ্যে নতুন প্রান সঞ্চার দাদন নিয়ে বরফ সহ রসদ মজুদ করে জেলেরা সাগরে যেতে শুরু করেছে। তবে দূর্যোগের মৌসুম বিধায় বেশীরভাগ যন্ত্রচালিত নৌকা ও ছোট মাপের ট্রলারগুলো সাগরে যেতে পারবে না। ঐসব নৌকা ও ট্রলার সাগর মোহনার উপক’লীয় নদ-নদীতেই আগের মত মাছ শিকার করছে। সাগরে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা উঠে যাবার ফলে বাজারে ইলিশ সহ সব ধরনের মাছের সরবারহ বাড়বে বলেও আশা করা যাচ্ছে।
গত ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত সাগরে ৬৫ দিনের মৎস্য আহরন নিষিদ্ধকালীন সময়ে এবার দেশের দক্ষিণ উপক’লীয় ৬টি জেলার প্রায় ২ লাখ জেলেকে ৪০ কেজি করে চাল প্রদান করেছে সরকার। তবে সে খাদ্য সহায়তা পৌছেছে প্রায় শেষ দিকে। মৎস্য অধিদপ্তরের মতে, দক্ষিণাঞ্চলে ৩ লাখ ৫২ হাজার জেলের মধ্যে প্রায় দুই লাখ সাগরে মৎস্য আহরন করে থাকে।
মৎস বিজ্ঞানীদের গবেষনা অনুযায়ী আগামী আশ্বিনের বড় পূর্ণিমার আগে পরের ২২ দিন উপক’ূলের ৭ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকার প্রজনন ক্ষেত্রে গভীর সমুদ্র থেকে মা ইলিশ ছুটে আসবে ডিম ছাড়তে। আর ঐসব ইলিশ-এর নিরাপদ গর্ভধারন নিশ্চিত করতেই প্রথমবারের গত ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত বঙ্গোপসাগরে ইলিশ সহ সব ধরনের মৎস্য আহরন নিষিদ্ধ ছিল। এরফলে শুধু ইলিশ নয় সাগরে সবধরনের মাছের উৎপাদন আরো বাড়বে বলেও জানিয়েছেন মৎস বিজ্ঞানীগন।
আশ্বিনের বড় পূর্ণিমার সময় সাগর থেকে গর্ভবতি মা ইলিশ ঝাকে ঝাকে ছুটে এসে বঙ্গোপসাগর উপক’লের মীরসরাই উপজেলার শাহের আলী হতে হাইতাকান্দী পয়েন্ট, তজুমদ্দীন উপজেলার উত্তর তজুমদ্দীন হতে পশ্চিম সৈয়দপুর আওলিয়া পয়েন্ট, কলাপাড়া উপজেলার লতা চাপালি পয়েন্ট এবং কুতুবদিয়া উপজেলার উত্তর কুতুবদিয়া হতে গন্ডামারা পয়েন্ট এলাকার ৭ হাজার বর্গ কিলোমিটার জুড়ে ডিম ছেড়ে আবার সাগরেই ফিরে যাবে। অভিপ্রয়ানি মাছ ইলিশ ¯্রােতের বিপরীতে প্রতিদিন ৭১ কিলোমিটার পর্যন্ত ছুটে চলতে পারে।
ফলে ঐ ৭ হাজার বর্গ কিলোামিটার এলাকায় সব ধরনের মৎস্য আহরন সহ সারা দেশে ইলিশ শিকার এবং পরিবহন ও বিপনন নিষিদ্ধ থাকবে। সদ্য সমাপ্ত ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা নিয়ে বিভিন্ন মৎসজীবী ও জেলেদের তরফ থেকে ব্যাপক প্রতিবাদ করা হলেও সরকার তার সিদ্ধান্তে অনড় ছিল। মূলত সাগরে দূর্যোগকালীন সময়েই এ নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকায় বাস্তবে তা জেলেদের খুব বেশী ক্ষতি করেনি বলে মন্তব্য করেছেন একাধিক মৎস বিজ্ঞানী। তাদের মতে বৈশাখের শেষ ভাগ থেকেই সাগর উত্তাল থাকে। যা আরো অন্তত দেড় মাস অব্যাহত থাকবে। ফলে এসময় ছোট ও মাঝারী ট্রলারও সাগরে যাওয়া নিরাপদ নয়।
বিজ্ঞান সম্পন্ন ব্যবস্থাপনার ফলে সারা বিশ্বের ৭৫% ইলিশ উৎপাদনের মাধ্যমে বাংলাদেশে এখন শীর্ষস্থানে রয়েছে। এমনকি আমাদের প্রতিবেশী ভারত ও মায়ানমার সহ বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলোতে ইলিশ উৎপাদন ক্রমাগত হ্রাস পেলেও বাংলাদেশে তা প্রতিবছর ৮Ñ১০% পর্যন্ত বাড়ছে। বিগত ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে দেশে ইলিশের উৎপাদন ৫ লাখ ১৭ হাজার টনে উন্নীত হয়েছে। যা এর আগের বছর ৪.৯৬ লাখ টন ছিল বলে জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ প্রতিমন্ত্রী। সদ্য সমাপ্ত অর্থ বছরে তা অন্তত সোয়া ৫ লাখ টনে উন্নীত হবার কথা।
আমাদের জাতীয় অর্থনীতিতে ইলিশের একক অবদান ১%-এরও বেশী। আর মৎস্য সম্পদে ইলিশের অবদান প্রায় ১২-১৩%। মৎস্য বিজ্ঞানীদের মতে, গত দেড় দশকে দেশে ইলিশের উৎপাদন প্রায় তিনগুন বৃদ্ধি পেয়েছে। মৎস্য বিভাগের মতে, সারা দেশের মোট উৎপাদিত ইলিশের ৬০ ভাগ অর্থাৎ ৩.৩০ লাখ টন বরিশাল সহ দক্ষিণাঞ্চলের ৬টি জেলা থেকে আহরিত হয়ে থাকে।
দেশের ৪০টি জেলার ১৪৫টি উপজেলার দেড় হাজার ইউনিয়নের প্রায় সাড়ে ৪ লাখ জেলে পরিবার ইলিশ আহরনে সম্পৃক্ত। যার ৩২% সার্বক্ষনিক, ৬৮% খন্ডকালীন। এমনকি ইলিশ বিপনন, পরিবহন, প্রক্রিয়াজাত করন, জাল, নৌকা ও বরফ তৈরী এবং মেরামত কাজে আরো ২০-২৫ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হয়ে থাকে। দেশের ৬টি বিভাগের মধ্যে শুধুমাত্র বরিশাল বিভাগের ৬টি জেলাতেই প্রায় সোয়া ৩ লাখ জেলে এ পেশায় জড়িত। যার ৬৫% সার্বক্ষনিক ইলিশ আহরনে জড়িত বলে মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে বলা হয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন