সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

সন্তানের ঘরেই হোক মা-বাবার আমৃত্যু বসবাস

জুবায়ের আহমেদ | প্রকাশের সময় : ২৬ জুলাই, ২০১৯, ১২:০২ এএম


দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে যে সব পিতা মাতার উপার্জনক্ষম সন্তান নেই, নিজেদের ভরণ-পোষণ করার মতো কোন সহায় সম্বল নেই, যে সকল নারী স্বামী পরিত্যক্তা/বিধবা এবং নেই উপার্জন করার মতো সন্তান, নিজেদেরও নেই পরিশ্রম করে ভরণ-পোষণ জোগাড় করার মতো শারীরিক শক্তি সামর্থ্য, নেই পৈত্রিক সহায় সম্পদ যা দিয়ে ভরণ-পোষণ করতে পারবে এবং একেবারেই সর্বদিক দিয়ে নিঃস্ব মানুষদের জন্য সরকার বিভাগীয় জেলা শহরগুলোতে এক বা একাধিক বৃদ্ধাশ্রম নির্মাণ করতে পারে। অধিকন্তু যে সকল পিতা-মাতা বসবাস করেন, তাদেরকে যদি তাদের সন্তান ভরণ পোষণ না দিয়ে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠাতে চায় কিংবা বাড়ি থেকে বের করে দেয়, সে সকল পিতা মাতার বিষয়ে সার্বিক খোঁজ নিয়ে তাদের সে সকল সন্তানদের রাষ্ট্রীয় আইনের আওতায় এনে শাস্তি প্রদান ও পিতা মাতার ভরণ পোষণের বিষয়টি নিশ্চিত করা জরুরি।

দেশের মানুষের মধ্যে দল, মত নিয়ে নানা প্রকার বিভক্তি থাকলেও পিতা মাতার প্রতি সন্তান দায়িত্ব পালন করবে, পিতা মাতা বার্ধক্যে উপনীত হলে সন্তানরা পিতা মাতাকে দেখাশুনা করবে, সকলেই তা একবাক্যে মেনে নেয়। অর্থাৎ পিতা মাতাকে সন্তান ভরণপোষণ ও দেখাশানা করবে না, এমন কাজে সম্মতি দেওয়ার মতো একজন ব্যক্তিকেও খুঁজে পাওয়া যাবে না। উপার্জনকারী সন্তান থাকার পরও অনেক বৃদ্ধ পিতা মাতার ঠিকানা হচ্ছে বৃদ্ধাশ্রম, যা কাম্য নয়।

প্রতিটি সন্তানের গর্ব ও অহংকার পিতা মাতা। ৯/১০ মাস গর্ভেধারণ করে যে মা সন্তানকে আলোর মুখ দেখান এবং যে পিতা দিনের পর দিন কায়িক পরিশ্রম করে সন্তানকে লালন পালন করেন, লেখাপড়া শিখিয়ে সমাজে যোগ্য হিসেবে গড়ে তুলেন, এক সময় সেই সন্তানই পিতা মাতার দুর্দিনে তাদেরকে অনাদর অবেহলায় বাসায় ফেলে রাখেন, কেউ কেউ পিতা মাতার উপর বিরক্ত হয়ে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দেন, কেউ বা আবার বাড়ী থেকে বের করে দেন, তা কখনোই কাম্য নয়। পিতা মাতার বার্ধক্যে তাদের ভরণপোষণ, দেখাশুনা না করার মতো জঘন্য ও নিকৃষ্ট কাজ মানবজীবনে আর কিছুই হতে পারে না।

আশার কথা, বাংলাদেশ সরকার পিতা মাতার ভরণ পোষণ প্রদান করা বাধ্যতামূলক করে একটি আইন প্রণয়ন করেছেন। আইনের মাধ্যমে এই বিষয়টি পুরোপুরি সমাধান না হলেও পিতা মাতার অভিযোগ প্রমাণ হলে সর্বোচ্চ ৩ (তিন) বৎসরের শাস্তি রাখা হয়েছে এই আইনটিতে, যা ইতিবাচক। তবে আইনের মাধ্যমে পিতা মাতার প্রতি সন্তানের আবশ্যিক কর্তব্য পালন পুরোপুরি কখনোই সম্ভব নয়। মা বাবার প্রতি কোন সন্তানেরই ভালোবাসার কমতি নেই। শুধুমাত্র এই ভালোবাসা সঠিক সময়ে প্রয়োগের অভাব।

উপার্জন করার মতো সন্তান নেই, নেই নিজেদের উপার্জন করার মতো শারীরিক শক্তি, নেই সহায় সম্বল, এই তিনটি অভাব যাদের আছে, তাদের জন্যই যেন হয় বৃদ্ধাশ্রম। এছাড়া যাদের সহায় সম্বল আছে এবং আছে উপার্জন করার মতো সন্তান, তেমন পিতা মাতাকে সন্তানই বাধ্যতামূলক ভরণ পোষণ দেবে ও দেখাশুনা করবে সে বিষয়ে বিদ্যমান আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত করা উচিত। পিতা মাতা অমূল্য সম্পদ, এই সত্যটিকে হৃদয়ে ধারণ করে দেশের সকল সচেতন নাগরিকরা যদি নিয়মিত এই বিষয়ে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে কাজ করেন, একদিন ধীরে ধীরে দেশের সকল সন্তান পিতা মাতার প্রতি অধিক দায়িত্ব পালনে আগ্রহী হবে। বার্ধক্যে পিতা মাতাও পাবে যথাযথ মূল্যায়ণ।
লেখক: শিক্ষার্থী, ডিপ্লোমা ইন জার্নালিজম।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন