গত রোববার বন্দরনগরী চট্টগ্রামে লোমহর্ষক হত্যার শিকার হয়েছেন এক পুলিশ সুপারের স্ত্রী। পুলিশের গোয়েন্দা শাখার এডিসি থেকে পদোন্নতি পেয়ে পুলিশের সদর দফতরে বদলি হওয়া পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতুকে দিনে দুপুরে নির্মমভাবে কুপিয়ে এবং গুলি করে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। সকাল সাতটার দিকে শিশুপুত্রকে স্কুল বাসে তুলে দিতে নিজ বাসা থেকে একশ’ গজ দূরে আসতেই ও আর নিজাম রোডে তিন দুবর্ৃৃত্ত তাকে মোটরসাইকেল দিয়ে প্রথমে ধাক্কা দেয়। পরে ছুরিকাঘাত ও গুলি করে। মাত্র এক মিনিটেরও কম সময়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে ঘাতকরা মোটর সাইকেল যোগে পালিয়ে যায়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এ হত্যাকা-কে নির্মম পৈচাশিক ও বর্বরোচিত বলে উল্লেখ করে এর পিছনে জঙ্গীদের হাত থাকতে পারে বলে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। খুব শিগগির খুনিদের পাকড়াও করে আইনের মুখোমুখী দাঁড় করানোর অঙ্গীকার করেছেন তিনি। ঘটনা সম্পর্কে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কমিশনার মো. ইকবাল বাহার বলেছেন, বাবুল আক্তার তার পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে সন্ত্রাসী, মাদক, অস্ত্র ব্যবসায়ী এবং জঙ্গী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করেছেন। কোনো পক্ষ প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে এই খুনের ঘটনা ঘটিয়ে থাকতে পারে। একই দিনে আরেকটি হত্যাকা- ঘটেছে নাটোরে। বৃদ্ধ এক খ্রিস্টান মুদি ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুবৃর্ৃৃত্তরা। জেলার বড়াইগ্রাম উপজেলার বনপাড়া পৌর এলাকায় নিজের দোকানে সকালে সুনীল গোমেজের উপর হামলা হয়। সুনীল খ্রিস্টানপাড়ায় তার স্ত্রী নিয়ে থাকতেন। বাসার পাশেই তার দোকান। সুনীলের ঘাড়ের পিছনে ধারালো অস্ত্রের আঘাত রয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
গত কিছুদিন ধরে একের পর এক এধরনের নৃশংস হত্যাকা- ঘটেই চলছে। ইতালীয় নাগরিক তাবেলা হত্যাক-ের পর থেকে এ পর্যন্ত বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। এ ধরনের হত্যাকা- কেবলমাত্র রাজধানীতেই ঘটেছে তা নয় বরং দেশের বিভিন্ন স্থানেই ঘটে চলেছে। দেখা যাচ্ছে, ঘটনা ঘটার পর সংশ্লিষ্টরা তদন্তসহ নানা কথা বলে থাকেন। বাস্তবে এসব হত্যাকা-ের কারণ উদ্ঘাটন ও এর সাথে জড়িতদের গ্রেফতারে তেমন কোনো অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না। এসব ঘটনার সাথে কে বা কারা জড়িত তা নিয়ে শুরু থেকেই দেখা যায় ভিন্নমত। ঘটনার দায় নিয়েও নানা প্রশ্ন রয়েছে। এবারেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। আলোচ্য হত্যাকা-ে কে বা কারা জড়িত সে সম্পর্কে নিশ্চিত হবার আগেই নানা কথা বলা হচ্ছে। প্রকাশিত রিপোর্ট বিশ্লেষণে দেখা যায়, পুলিশ কর্মকর্তা আগে থেকেই হুমকি পেয়ে আসছিলেন। শেষ পর্যন্ত হত্যাকারীরা তাদের হুমকি বাস্তবায়ন করেছে তার স্ত্রীকে হত্যার মাধ্যমে। এ ধরনের হত্যাকা- অকল্পনীয় এবং শিউরে ওঠার মতো। এদিকে আইএস দাবী করেছে, বনপাড়ায় খ্রিস্টান ও বান্দরবনে বৌদ্ধ ভিক্ষুকে হত্যা করেছে আইএস যোদ্ধারা। এধরনের হত্যাকা- ঘটার পর গত কিছুদিন থেকে এ রকম নানা খবর প্রকাশিত হলেও সরকারের দায়িত্বশীল মহল থেকে নিশ্চিত করা হচ্ছে, দেশে কোন জঙ্গী নেটওয়ার্ক নেই। অন্যদিকে কারা এসবের সাথে জড়িত তাও খুঁজে বের করা হয়নি। প্রায় সব ঘটনাই প্রকাশ্যেই ঘটছে। এসব ঘটনার পারিপার্শিকতা মিলিয়ে দেখলে পরিকল্পিত বলে মনে হবার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। এটাও বলার অপেক্ষা রাখে না, প্রকৃত হত্যাকারিদের খুঁজে বের করতে না পারার ফলে এবং এনিয়ে পরস্পরবিরোধী বক্তব্য দেয়ার ফলে কার্যত হত্যাকারিরাই আস্কারা পাচ্ছে। একের পর এক এধরনের হত্যাকা- সংঘটিত হবার কারণে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলা নিয়ে উদ্বেগে আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে।
প্রকৃতবিবেচনায় বাংলাদেশ একটি শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের দেশ। বাংলাদেশের মানুষ শান্তিপ্রিয় এবং কখনোই সন্ত্রাসকে প্রশ্রয় দেয় না। সাম্প্রতিক ভয়াবহ হত্যাকা-ের ঘটনা দেখে উদ্বিগ্ন না হয়ে পারা যায় না। বাংলাদেশের মানুষের শান্তিপ্রিয় বৈশিষ্ট্যে কারা আঘাত হানছে এবং বর্বরোচিত ঘটনা ঘটিয়ে চলেছে তাদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা জরুরি হয়ে পড়েছে। যদি দেশের গোযেন্দাসংস্থাগুলো এক্ষেত্রে যথেষ্ট বলে বিবেচিত না হয় তাহলে আন্তর্জাতিক তদন্ত সংস্থার সাহায্য গ্রহণ করা যেতে পারে। যেকোন মূল্যে এধরনের বর্বারাচিত ও পৈচাশিক হত্যাকা- বন্ধ করতে হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন