শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পাদকীয়

খোশ আমদেদ মাহে রমজান

প্রকাশের সময় : ৭ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম

খোশ আমদেদ মাহে রমজান। মহান রাব্বুল আলামীন রমজানের মাসব্যাপী রোজাকে ফরজ করেছেন। সুবেহ সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার এবং সকল প্রকার ইন্দ্রিয় সুখ ভোগ থেকে বিরত থাকার নামই রোজা। যে পাঁচটি স্তম্ভের ওপর ইসলাম দ-ায়মান তার একটি রোজা। নামাজের পরই রোজার স্থান। মাহে রমজান রহমত-বরকত, মাগফিরাত ও নাজাতের মাস। মানুষের দৈহিক, মানসিক, আত্মিক, নৈতিক ও আধ্যাত্মিক উন্নয়নে এ মাসের রোজা অত্যন্ত ফলপ্রসূ। সংযম, সহিষ্ণুতা ও আত্মশুদ্ধি অনন্য চেতনায় ভাস্বর মাহে রমজান। মহানবী সা: এ মাসকে এক সুমহান মাস হিসেবে অভিহিত করেছেন। এ মাসের প্রথম ১০ দিন রহমত, মধ্য ১০ দিন মাগফিরাত এবং শেষ ১০ দিন জাহান্নাম থেকে মুক্তির। অন্যান্য মাস অপেক্ষা রমজান মাসের শ্রেষ্ঠত্বের একটি বড় কারণ এই যে, এ মাসেই বিশ্ব মানবতার মুক্তি সনদ পবিত্র আল কোরআন নাজিল হয়। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ পাক বলেছেন : ‘রমজান সেই মাস যে মাসে কোরআন নাজিল হয়েছে। কোরআন, যা মানুষের হেদায়াত, সত্যের পথযাত্রীদের জন্য সুস্পষ্ট পথ নির্দেশক আর ন্যায়-অন্যায়ের মধ্যে পার্থক্য বিধানকারী। কাজেই তোমাদের মধ্যে যে কেউ এ মাসটি পাবে, সে এ মাসের রোজা রাখবে।’ এ মাসেই এমন একটি রাত রয়েছে যাকে বলা হয় লাইলাতুল কদর বা সৌভাগ্য রজনী। আল্লাহ পাক এ সম্পর্কে বলেছেন, ‘আমরা এটি (আল কোরআন) কদরের রাতে নাজিল করেছি। তুমি কি জান, কদরের রাত কি? কদরের রাত হাজার মাস অপেক্ষাও অধিক উত্তম’। রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন : ‘যখন রমজান শুরু হয়, দোজখের দরজা বন্ধ করে দেয়া হয় এবং শয়তানকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয় এবং জান্নাতের দরজা খুলে দেয়া হয়।’ পবিত্র কোরআন ও হাদিসের আলোকে পবিত্র রমজান মাস, রমজান মাসের রোজা ও অন্যান্য ইবাদত কতটা মর্যাদা ও গুরুত্বপূর্ণ তা সহজেই উপলব্ধি করা যায়।
রমজানের পবিত্র কোরআন চর্চা, তিলাওয়াত ও তারাবি নামাজে কোরআন খতম বিধেয় করা হয়েছে। পবিত্র কোরআনের সঙ্গে রমজানের সম্পর্ক অচ্ছেদ্য। পবিত্র কোরআনের আলোকে জীবন গঠনের একটা প্রশিক্ষণ হয় মাহে রমজানে। আত্মিক উন্নয়ন, পবিত্রতা অর্জন ও আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য রমজানের রোজার কোনো তুলনা হয় না। আল্লাহ পাক পবিত্র কোরআনে বলেছেন : ‘হে ঈমানদারগণ তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন তা তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর ফরজ করা হয়েছিল যাতে করে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো।’ তাকওয়া অর্থ সতর্ক, সংযত ও সাবধান থাকা। আল্লাহর ভয়ে, আখেরাতের জবাবদিহিতার ভয়ে সব ধরনের অন্যায়, অশ্লীলতা, পাপ ও অপরাধ থেকে দূরে থাকা। বলা বাহুল্য, তাকওয়ার গুণ মানুষকে সকল প্রকার পাপাচার তথা অন্যায়, অপরাধ, অপকর্ম, অশ্লীলতা, অনিয়ম, দুর্নীতি ও দুষ্কৃতি থেকে মুক্ত রাখতে পারে। রোজা রেখে মিথ্যাচার, পরচর্চা, ক্রোধ, হিংসা, নিন্দা, অহঙ্কার, আত্মগর্ব, কৃপণতা, চোগলখোরী ইত্যাদি থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘রোজা রাখা সত্ত্বেও যে ব্যক্তি মিথ্যাচার ও পাপকর্ম থেকে বিরত রইল না, ক্ষুধা ও পিপাসায় কাতর হওয়া ছাড়া রোজা তার কোনো কাজেই এলো না’। রোজা মানুষকে প্রকৃত আধ্যাত্মিক ও জাগতিক মানুষ হতে অনুপ্রাণিত করে, কার্যকরভাবে সহায়তা করে।
রমজানের শিক্ষা ধৈর্য ও সংযম। রমজানের একটি নাম হচ্ছে শাহরুল মুওয়াসাত। এর অর্থ সহমর্মিতার মাস। একে অপরের প্রতি সম্প্রীতি, সমবেদনা ও সহমর্মিতা রমজানের মহান শিক্ষা। বিশ্বব্যাপী বর্তমানে মুসলমানদের ওপর নানা দিক থেকে আক্রমণ আসছে। অসহিষ্ণুতা, সাম্প্রদায়িক হামলা, অপপ্রচার মিলিয়ে বিশ্ব মুসলিমকে এক কঠিন পরিস্থিতিতে পবিত্র রমজান পালন করতে হচ্ছে। অথচ শান্তির দূত মুসলমান মহান ইসলামের উদার ও মানবিক বার্তা নিয়ে বিশ্বময় এক ইতিবাচক সম্প্রদায় হিসেবে সুপ্রমাণিত ও প্রতিষ্ঠিত। বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ মুসলিম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশও আজ সুস্থ রাজনৈতিক পরিবেশ এবং আর্থ-সামাজিক শান্তি ও স্থিতি নিয়ে এক ধরনের দোদুল্যতার শিকার। প্রবাদপ্রতিম শান্তি, সম্প্রীতি ও সহাবস্থানের দেশ হয়েও বাংলাদেশে এখন সংশয়ের দোলা। কোনো অদৃশ্য হাতের স্পর্শে বাংলাদেশের শান্তি ও সম্প্রীতি যেন বিঘিœত হওয়ার পথে। উদ্দেশ্যমূলক অপপ্রচার ধর্মপ্রাণ মানুষকে আশাহত করছে। একের পর এক খুন, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদকেই হাওয়া দিচ্ছে। যে দেশে মুসলমানদের সকল ইবাদত-বন্দেগী ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানের পরিবর্তিত সময়কালের পাশাপাশি বছরের নানা সময়ে অন্যান্য ধর্মের পূজা-পার্বণ ও উৎসব নির্বিঘেœ পালিত হয় সে দেশে মুসলমানের সিয়াম সাধনার মাসে সকল ধর্মের মানুষেরই সংযত ও সহযোগী মানসিকতার পরিচয় দেয়া বাঞ্ছনীয়। মুসলমানদেরও শিক্ষা নিতে হবে সংযমের উৎকর্ষ থেকে। যেমন হাদিস শরীফে এসেছে, রোজাদারের সাথে কেউ গায়ে পড়ে ঝগড়া করতে এলে সে যেন বলে দেয়, আমি রোজা রেখেছি। অর্থাৎ, আমি তোমার কথার প্রতিউত্তর দেবো না। যেকোনো পরিস্থিতিতে উসকানিতে সাড়া না দিয়ে সংযম ও তাকওয়া রক্ষা করে চলাই রমজানের শিক্ষা। সহমর্মিতার প্রধান ক্ষেত্র হচ্ছে দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল ও ক্রেতা-ভোক্তাসাধারণের হাতের নাগালে রাখা। খাদ্যে ভেজাল না মেশানো এবং ওজনে কমবেশি না করা। পবিত্র রমজানে মুসলমানের জীবন-জীবিকার সর্বত্র সততা, সংযম ও পবিত্রতার ছোঁয়া লাগবে এটাই স্বাভাবিক। রমজানুল মুবারকের সিয়াম সাধনার এখানেই সার্থকতা। ইবাদতের এ ভরা বসন্তে, ক্ষুৎ পিপাসা ও সাধনার আগুনে জ্বলে-পুড়ে খাঁটি হওয়ার এ সুবর্ণ সময়ে ঈমানদারদের হৃদয়জুড়ে এরই জীবন্ত প্রত্যাশা। মোবারক হো মাহে রমজান।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন