স্ত্রী হত্যার দায়ে স্বামীকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার নির্দেশ দিয়েছেন সাতক্ষীরা জেলা ও দায়রা জজ শেখ মফিজুর রহমান। সোমবার (২৯ জুলাই) এক জনাকীর্ণ আদালতে এ আদেশ দেন তিনি। এ সময় আসামী কাঠগোড়ায় উপস্থিত ছিলেন।
ফাঁসির দন্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামীর নাম বিজন মন্ডল (৪৭)। তিনি সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার গোয়ালডাঙা গ্রামের মনোহর মন্ডলের ছেলে।
মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণে জানা যায়, ১৯৯৬ সালে আশাশুনি উপজেলার ফকরাবাদ গ্রামের অনিল কৃষ্ণ মন্ডলের মেয়ে কঙ্কাবতী মন্ডলের সঙ্গে একই উপজেলার গোয়ালডাঙা গ্রামের মনোহর মন্ডলের ছেলে বিজন মন্ডলের হিন্দু ধর্ম মতে বিয়ে হয়। বিয়ের কয়েক বছর পর প্রতিবেশী দীপক মন্ডলের স্ত্রী সন্ধ্যা রানী মন্ডলের সঙ্গে বিজনের পরকীয়া সম্পর্ক গড়ে ওঠে। প্রতিবাদ করায় কঙ্কাবতীর সঙ্গে বিজনের প্রায়ই ঝগড়া লেগে থাকতো। এরই জের ধরে ২০১৭ সালের ১০ জুন রাত ১১টার দিকে বিজন তার স্ত্রীর মুখমন্ডল ও নাকে লাঠি দিয়ে আঘাত করে। এতে জ্ঞান হারিয়ে যাওয়া কঙ্কাবতীর গলায় নাইলনের দড়ি দিয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন বিজন। পরে কঙ্কাবতীর লাশ বাড়ির পাশের পুকুর পাড়ে আম গাছে ঝুলিয়ে আত্মহত্যার প্রচার দেন বিজন ও তার পরিবারের সদস্যরা। খবর পেয়ে পরদিন বিজনের বাড়িতে যেয়ে কঙ্কাবতীর রক্তাক্ত লাশ দেখতে পায় বাবা অনিল কৃষ্ণ মন্ডল ও তার স্বজনরা। জিজ্ঞাসা করায় গ্রামবাসির সামনে বিজন তার স্ত্রীকে হত্যার কথা স্বীকার করে। পরে তাকে পুলিশে দেওয়া হয়। এ ঘটনায় নিহতের বাবা অনিল কৃষ্ণ মন্ডল বাদি হয়ে জামাই বিজন কুমার মন্ডলসহ অজ্ঞাতনামা তিন জনের বিরুদ্ধে আশাশুনি থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
১২ জুন সাতক্ষীরার অতিরিক্ত মুখ্য বিচারিক হাকিম মোঃ জাহিদ হোসেনের কাছে পরকীয়া প্রেমে বাঁধা দেওয়ার কারণে স্ত্রীকে নির্যাতন চালিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যার কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দেন বিজন মন্ডল। মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা আশাশুনি থানার উপ-পরিদর্শক আব্দুর রাজ্জাক ২০১৭ সালের ১১ সেপ্টেম্বর এজাহারভুক্ত বিজন মন্ডলের নামে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
মামলায় নয়জন সাক্ষীর জবানবন্দি ও নথি পর্যালোচনা শেষে আসামী বিজন মন্ডলের বিরুদ্ধে স্ত্রীকে হত্যার বিষয়টি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাািণত হওয়ায় বিচারক শেখ মফিজুর রহমান তার মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত ফাঁসিতে ঝুলিয়ে রাখার নির্দেশ দেন।
এই রায়ে মামলার বাদি অনিল কৃষ্ণ মন্ডল সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।