কৃষি প্রধান দক্ষিণাঞ্চলের ৬টি জেলায় বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক গত অর্থ বছরে প্রায় ৬২১ কোটি টাকা কৃষিঋণ বিতরণসহ প্রায় ১ হাজার ৪০ কোটি টাকার বকেয়া ঋণ আদায় করতে সক্ষম হয়েছে। যা লক্ষ্যমাত্রার ৯৭%। তবে এরপরেও রাষ্ট্রায়ত্ব এ ব্যাংকটির ১৭০ কোটি টাকার আদায়যোগ্য অনাদায়ী বা ওভারডিউ ঋণ রয়েছে।
কৃষি নির্ভর দক্ষিণাঞ্চলের ৬টি জেলার ৪২টি উপজেলায় কৃষিঋণ দীর্ঘদিন ধরে কৃষকদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে সারা দেশের মত দক্ষিণাঞ্চলে কৃষি উৎপাদন প্রায় তিনগুন বৃদ্ধি পেয়েছে। যার পেছনে কৃষিঋণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করেছে। সারা দেশের মত দক্ষিণাঞ্চলেও কৃষি ব্যাংকই এখনো মোট কৃষিঋণের প্রায় ৮০% বিতরণ করে থাকে।
দক্ষিণাঞ্চলের কৃষি ব্যবস্থা এখনো প্রায় পুরোটাই প্রকৃতি নির্ভর। উপরন্তু আমন ধানই দক্ষিণাঞ্চলে প্রধান ফসল। অথচ এ অঞ্চলে আমনের আবাদ প্রকৃতির আচরণের ওপরই নির্ভরশীল। দক্ষিণাঞ্চলে প্রদত্ত কৃষিঋণের প্রায় ৭০ ভাগই আমন নির্ভর। প্রকৃতির কোন বৈরী আচরণে আমনের ক্ষতি হলে কৃষিঋণ আদায়ও বিপর্যয়ের কবলে পড়ে। এক্ষেত্রে শষ্য বীমা কৃষকের জন্য কিছুটা রক্ষা কবজ হলেও সারা দেশের মত দক্ষিণাঞ্চলেও এখনো তা আলোর মুখ দেখেনি।
অপরদিকে জনবল সঙ্কটের ফলে যথাযথ তদারকিসহ ঋণ আদায় কার্যক্রমও যথেষ্ঠ ব্যাহত হচ্ছে। বরিশাল বিভাগের ৬টি জেলার ৪২টি উপজেলা এবং ৮১টি ইউনিয়ন পর্যায়ের শাখাগুলোর জন্য কৃষি ব্যাংকের অনুমোদিত জনবলের প্রায় ৪০ ভাগ পদই শূন্য বলে জানা গেছে।
গত অর্থ বছরে বরিশাল, পটুয়াখালী, ভোলা, পিরোজপুর, বরগুনা ও ঝালকাঠি জেলায় শষ্য, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতে ৯১১ কোটি টাকার কৃষিঋণ প্রদানের লক্ষ্য স্থির করেছিল অর্থ মন্ত্রণালয়। যার মধ্যে ৬২১ কোটি টাকা বিতরণ লক্ষ্য অর্জন করে দক্ষিণাঞ্চলে কৃষি ব্যাংকের ১২৯টি শাখা। যা লক্ষ্যমাত্রার ৭৬%। একই সময়ে ১ হাজার ৭২ কোটি ৪৪ লাখ টাকার বকেয়া আদায় লক্ষ্যমাত্রার স্থলে ব্যাংকটি এক হাজার ৩৮ কোটি ৪৭ লাখ টাকা আদায় করতে সক্ষম হয়েছে। যা লক্ষ্যমাত্রার ৯৭% বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক দক্ষিণাঞ্চলের কৃষি অর্থনীতির ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করে আসছে। তবে কৃষিঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে কিছু কিছু শাখার মাঠকর্মীদের বিরুদ্ধে নানা ধরনের অনিয়মেরও অভিযোগ রয়েছে।
কৃষি ব্যাংকের বরিশাল বিভাগীয় জেনারেল ম্যানেজার মো. ইউসুফ আলী জানান, কোন অভিযোগ পাওয়া গেলে তা সুষ্ঠু তদন্ত করে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। সার্বিক বিষয় নিয়ে প্রতিটি জেলা থেকে বিভাগীয় অফিস পর্যন্ত নিবিড় পর্যবেক্ষণের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, এর ফলে গত অর্থ বছরে ৯৭% বকেয়া আদায় সম্ভব হয়েছে। জনবল সঙ্কট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে ব্যাংকের সদর দপ্তর ওয়াকিবহাল আছে। এখন রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকে জনবল নিয়োগের বিষয়টি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওপর নির্ভরশীল বিধায় কিছুটা সময় লাগলেও, অদূর ভবিষ্যতেই এ সমস্যার সমাধান হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন