রমজানের প্রথম দিন গত মঙ্গলবার রাজধানীতে যানজট ভয়াবহ আকার ধারণ করে। চরম ভোগান্তি পোহাতে হয় রাজধানীবাসীকে। দুপুর দুটোর পর থেকে প্রায় সব রাস্তায়ই বেড়ে যায় গাড়ির চাপ। এ ছাড়া বিভিন্ন স্থানে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির সঙ্গে বৃষ্টি এবং অব্যবস্থাপনা মানুষের দুর্ভোগ আরা বাড়িয়ে দেয়। বনানী কাকলী মোড়ে পাইপ বসানোর কাজ করছে ঢাকা সিটি উত্তর করপোরেশন। চার লেনের সড়কটির দুই লেন কিছুদিন ধরেই বন্ধ। এই মোড়ে থেমে থেমে চলেছে গাড়ী। ফলে যানবাহনের লম্বা সারি গিয়ে ঠেকে মহাখালী ফ্লাইওভার পর্যন্ত। কাকলীতে দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশ সদস্যের মতে, শুধু রোজার প্রথমদিনে নয়, কয়েকদিন ধরেই এ সড়কটির একই অবস্থা। সরু রাস্তার কারণে গাড়ী স্বাভাবিকভাবে চলতে পারে না। শুধু এখানেই নয়, রাজধানীর বনানী, মহাখালী, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, তেজগাঁও, রামপুরা, প্রগতি সরণি, গাবতলী, টেকনিক্যাল মোড়, যাত্রাবাড়ীসহ প্রায় সব সড়কেই তীব্র যানজট হতে দেখা যায়। দুপুর থেকে রাত অবধি যানজটে আটকে থাকতে হয় অনেককেই। অব্যবস্থাপনার কারণে রমজানের প্রথম দিনে পরিবারের সাথে ইফতারি করার ইচ্ছে অনেকেরই পূরণ করা সম্ভব হয়নি। পরিস্থিতি সম্পর্কে ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (ট্রাফিক) খান মোহাম্মদ রেজওয়ান বলেছেন, রমজানের প্রথম দিন অফিস ফেরত মানুষ একসঙ্গে বাসায় ফিরতে চাইছে। এছাড়া কয়েকটি সড়কে খোঁড়াখুঁড়ি এবং বৃষ্টির কারণে যানজট একটু বেশি।
রাজধানীর যানজট এবং নগরবাসীর ভোগান্তি কার্যত নতুন কিছু নয়। কেন এই অবস্থা তা কারো অজানা নেই। যানজট নিরসনের অঙ্গীকার অনেক হয়েছে। কিন্তু এ সংকটের কোন সমাধান হয়নি। রাজধানীর সড়ক ব্যবস্থাপনাকে নিয়মের মধ্যে আনতে একেক বার একেক নিয়মনীতির প্রবর্তন করা হয়েছে। কখনো অটো নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা আবার কখনো সেই পুরনো ম্যানুয়াল পদ্ধতি। সব মিলে একথাই সত্যি যে, সড়ক ব্যবস্থাপনা মূলত ট্রাফিক পুলিশের হাতেই রয়ে গেছে। নিমানুযায়ী রাজধানীর সড়ক ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের। বাস্তবতা হচ্ছে এ পর্যন্ত যানজট নিরসন তথা সাধারণের সুবিধার জন্য যেসব ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বা হচ্ছে তা থেকে জনসাধারণের পরিবর্তে বিশেষ শ্রেণীই উপকৃত হচ্ছে। ট্রাফিক অব্যবস্থাপনার মধ্যে অন্যতম হলো সিগনাল বৈষম্য। এটা দেখা যাচ্ছে যেসব সড়ক ভিআইপি বলে পরিচিত সেগুলোতে যদি ৩০ সেকেন্ড অপেক্ষায় রাখা হয় তাহলে অন্য সড়কগুলোর ক্ষেত্রে তা অন্তত পাঁচমিনিট। আবার শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে যে নিয়ম অনুসরণ করা হয়, আশপাশে তার ব্যত্যয় ঘটে। সড়কের পাশের বিপনী বিতানগুলোও ট্রাফিক অচলাবস্থার অন্যতম কারণ। অভিযোগ রয়েছে, এসব বিপনী বিতানকে নানা দিক বিবেচনায় নিয়ে থাকে সংশ্লিষ্টরা। বড় বিষয় হচ্ছে জনভোগান্তি নিরসন। রমজান কোন হঠাৎ বিষয় নয়। রমজানে সরকারী অফিসের সময়সূচীর পরিবর্তন হয়। এ সময়ে বিকাল সাড়ে তিনটায় সরকারি অফিস ছুটি হয়। এটা সকলেরই জানা, সরকারী অফিস ছুটির সাথে যানজটের সম্পর্ক রয়েছে। অন্যদিকে বেশ কিছুদিন আগে থেকেই রাজধানীর খোঁড়াখুঁড়িজনিত বাস্তবতা নিয়ে লেখালেখি হচ্ছে। একারণে সামান্য বৃষ্টিতে নগরের বেহাল দশার কথা মাত্র সেদিনই প্রায় সকল মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়েছে। ব্যাপারগুলো দুই সিটি করপোরেশনের মেয়ররা জানেন না সেকথা ঠিক নয়। কখন রমজান আসছে এটিও পূর্ব নির্ধারিত। সঙ্গত বিবেচ্য বিষয় হচ্ছে রমজানের আগেই সড়কগুলোর খোঁড়াখুঁড়িজনিত বাস্তবতা বন্ধ করা হলো না কেন? আর নর্দমা-স্যুয়ারেজের আলোচনা নিরর্থক। সবমিলে কথা কিন্তু দায়িত্বশীলদের আন্তরিকতা নিয়েই। রমজানের শুরুতে সৃষ্ট যানজট নিয়ে সংশ্লিষ্টরা যা বলেছেন তাতে নতুনত্ব কিছু নেই। এসব গদবাঁধা বচন।
সাধারণভাবেই যানজটে প্রতিদিন বহু কর্মঘণ্টার অপচয় হচ্ছে। এর মাশুল দিতে হচ্ছে অর্থনীতিকে। প্রকৃত বিবেচনায় অপরিকল্পিত নগরায়নই এ সমস্যার অন্যতম প্রধান কারণ। পৃথিবীর অনেক অনুন্নত দেশেও রাজধানীর বাইরে থেকে এসে মানুষ নিয়মিত অফিস করছেন। বাংলাদেশে এ বাস্তবতা এখন অসম্ভব করে তুলেছে যানজট। কোন অবস্থাতেই নিশ্চিত করা যায় না কখন রওয়ানা করে কখন অফিসে যাওয়া যাবে অথবা অফিস থেকে ফেরা যাবে। এ অবস্থার সুরাহা না হলে অনেক কিছুই নিয়ন্ত্রণে আনা অসম্ভব। প্রথম রমজানে রাজধানীতে যা হয়েছে তাকেও স্বাভাবিক বলে মনে করার কোন কারণ নেই। রাজধানীতে এটা লক্ষণীয় যে, বৃষ্টি হলেই সড়ক ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে যারা থাকেন তারা হাওয়া হয়ে যান। সড়কগুলো এক ধরনের বিশৃঙ্খলায় পড়ে। এটা সত্যি জনগণের ভোগান্তি বা দুর্ভোগ হবার কারণে কোন কর্মকর্তাকে জবাবদিহি করতে হয় না। তাই হয়ত সাধারণের সুযোগ-সুবিধা দেখারও গরজ নেই। সর্বত্র যে জবাবদিহিতার সংকট এখানেও তার ব্যতিক্রম নয়। যাই হোক, যানজট নিরসন করে সাধারণের দুর্ভোগ লাঘব করা হবে- এটাই প্রত্যাশিত।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন