কুড়িগ্রাম জেলা শহর থেকে ১০ কি.মি দূরে যাত্রাপুর ইউনিয়ন। ইউনিয়নটি ব্রহ্মপূত্র নদ দ্বারা বিচ্ছিন্ন। ২০১৩ সালের আগে যাত্রাপুর ইউনিয়নের ভগবতীপুর চরে ৫২০ পরিবারের বাস ছিল। ক্রমাগত নদী ভাঙনে চরটি নদী গর্ভে বিলীনের পথে।
যাত্রাপুর হাট থেকে নৌকা করে ১ ঘণ্টার পথ পাড়ি দিয়ে পশ্চিম ভগবতীপুর চরে দেখা হয় মাহবুবুর রহমান (৫১) এর সাথে। সে জানালো বর্তমানে বন্যা ও নদী ভাঙনে ভগবতীপুর খন্ডবিখÐ হয়ে নাম পরিবর্তন হয়ে উত্তর , পশ্চিম, দক্ষিণ ভগবতীপুর চরদ্বীপ হয়েছে। পশ্চিম ভগবতীপুরে গিয়ে দেখা যায় হাতে গোনা কয়েকটি পরিবার বসবাস করছে। ভগবতীপুরের পূর্বে ঝুনকারচর ও ভারত। পূর্বে ভারত হওয়ায় আর যাওয়ার জায়গা নেই। তাই নদী ভাঙা মানুষগুলো আশ্রয়কেন্দ্রসহ বিভিন্ন এলাকায় আশ্রয় নিয়েছে। শ্যালো নৌকা করে ফেরার পথে নৌকায় দেখা হয় ভগবতীপুরের আদি বাসিন্দা জহুরুল ইসলাম (৩০)-এর সাথে। সে জানায় তারা তিন ভাই আব্দুর বহিম (৩৬), নজরুল (৩২) এবং সে নিজে সন্তানদের নিয়ে ভালই দিন চলছিল। নদী ভাঙনের কারণে পারিবারিক বন্ধন ছিন্ন হয়ে কাটগিরির চর ও ঝুনকার চরে আশ্রয় নিয়েছে। সে নিজেই পশ্চিম ভগবতীপুরে থাকে। ঈদের কথা বলতেই বেশ জোরেশোরে একটি দীর্ঘশ্বাস ছাড়েন জহুরুল ইসলাম, ‘প্যাট বাঁচে না, হামার কিসের ঈদ বাহে।’ যাত্রাপুর ইউনিয়নের অধিকাংশ মানুষের ভাগ্যে জহুরুল ইসলামের মতো ঈদের আমেজ নেই। অথচ জেলার সবচেয়ে বড় কোরবানির গরুর হাট এই যাত্রাপুরে।
যাত্রাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আইয়ুব আলী সরকার জানালেন, তার ইউনিয়নে ১৪টি দ্বীপচরসহ ৩২টি গ্রাম রয়েছে। সব গ্রাম বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। এর ফলে ছয় হাজারের বেশি পরিবার বানভাসি হয়েছে। বন্যাকবলিত হয়েছে প্রায় ৩০ হাজার মানুষ। পানিতে তলিয়ে গেছে আমন বীজতলাসহ ফসলের ক্ষেত। পুকুর-দীঘি তলিয়ে যাওয়ায় মৎস্যচাষিরা ব্যাপক ক্ষতির শিকার হয়েছেন। বন্যার পানির তোড়ে ভেসে গেছে কিংবা দুমড়ে-মুচড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১২৮টি বাড়িঘর। আর বন্যার পর নদী ভাঙনের শিকার হয়ে চর রলাকাটা, চর পশ্চিম ভগবতীপুর ও ঝুনকার চরে এ পর্যন্ত ৪৩টি পরিবার ভিটেমাটি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছে।
তিনি আরও জানান, বন্যার্তদের সহায়তায় এ পর্যন্ত সরকারের জিআর হিসেবে বরাদ্দ পেয়েছেন সাড়ে ১৯ মেট্রিক টন চাল। এ চাল ১০ কেজি করে এক হাজার ৯৫০টি পরিবারকে দিয়েছেন। এ ছাড়া ঈদ উপলক্ষে ভিজিএফ কর্মসূচির আওতায় পাঁচ হাজার ৩৮৪ পরিবারকে ১৫ কেজি করে চাল দেওয়া হয়েছে। গৃহনির্মাণ মঞ্জুরির টিন বা টাকা এখনও বরাদ্দ পাননি। স্বাভাবিকভাবেই এই পরিস্থিতিতে এই ইউনিয়নের অধিকাংশ মানুষের মধ্যে ঈদের কোনো আমেজ নেই।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা খায়রুল আনাম জানান, এবারের বন্যায় জেলার ৯ উপজেলার ৬০ ইউনিয়নের ৮৯৪টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এর ফলে বন্যার কবলে পড়েছিল দুই লাখ সাড়ে ৩৮ হাজারের পরিবারের প্রায় ৯ লাখ ৫৮ হাজার মানুষ। সেইসঙ্গে বন্যার কবলে পড়েছিল দুই লক্ষাধিক গবাদিপশু।
এ প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক মোছা. সুলতানা পারভীন বলেন, ‹বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থদের হাতে সরকারের ত্রাণ পৌঁছে দেয়া হয়েছে। ফলে কোনো প্রকার মানবিক বিপর্যয় ঘটেনি। এ ছাড়া ক্ষতিগ্রস্থদের হাতে গৃহনির্মাণ মঞ্জুরি সঠিকভাবে প্রদানের জন্য তালিকা যাচাই-বাছাইয়ের কাজ চলছে। এ কাজ শেষে গৃহনির্মাণ মঞ্জুরির টাকা ও ঢেউটিন বিতরণ করা হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন