এ.টি.এম. রফিক, খুলনা থেকে : মাহে রমজান মুসলমানদের কাছে সংযমের। হিংসা, লোভ, খারাপ অভ্যাসগুলো পরিত্যাগ এবং সংযম পালনই রমজানের মহত্ব। কিন্তু রমজানের শুরুতেই বাজারে গিয়ে এই সংযমের ছিঁটেফোটাও দেখা যায়নি। বাজারে ক্রেতাদের হুড়োহুড়ি এবং অতিমুনাফালোভী ব্যবসায়ীদের দাম বাড়ানোর প্রতিযোগিতা দেখে হতাশ হয়েছে নিম্নবিত্তরা।
খুলনা মহানগরীর বাজারগুলো ঘুরে দেখা গেছে, রমজানকে কেন্দ্র করে নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রতিটি পণ্যের দাম বেড়েছে। গরুর গোশত ২৫ থেকে ৩০ টাকা, মুরগি ৪০ থেকে ৮০ টাকা পর্যন্ত বেশি দামে বিক্রি হয়েছে। মাছের বাজারে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তদের প্রবেশ অঘোষিতভাবেই নিষিদ্ধ হয়ে গেছে গত শনিবার থেকেই। প্রতিটি মাছের দাম প্রতি কেজিতে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। বাদ যায়নি নিরামিষ পণ্য বেগুন, ক্ষিরাই, আলুসহ ইফতার সংশ্লিষ্ট সবজির। রোজার ১৫/২০ দিন আগে থেকেই ছোলা, খেজুর, মসুর ডাল, মুগডাল, চিনি ও তেলের দাম বেড়েছে।
তবে দাম বাড়লেও একশ্রেণীর ক্রেতারা নেমেছিলেন প্রতিযোগিতায়। এতো চড়ামূল্যে সত্ত্বেও অনেককেই দেখা গেছে, ব্যাগ ভরে বাজার নিয়ে ফিরতে। দামের তোয়াক্কা না করে বেশি দামে পণ্য কেনার কারণে দাম বাড়াতে আরও বেশি উৎসাহী হয়েছেন বিক্রেতারা।
এদিকে অতিমুনাফালোভী ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্য ঠেকাতে মাঠে নেমেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। প্রতিদিনই সিটির ভারপ্রাপ্ত মেয়র আনিসুর রহমান বিশ্বাসের নেতৃত্বে দৌলতপুর বাজারে অভিযান চালানো হচ্ছে। সেখানে পাইকারী দাম থেকে দ্বিগুণ দামে খেজুর ও মুড়ি বিক্রি করায় বিক্রেতাদের সতর্ক করা হয়। দামের তারতম্য দেখলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জরিমানা আদায়ের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
নগরীর ময়লাপোতা সন্ধ্যা বাজারে গিয়ে দেখা গেছে ক্রেতাদের ভিড়। উচ্চবিত্তদের বাজার হিসেবে পরিচিত এই বাজারে বয়লার মুরগী ১৭০ টাকা, দেশি মুরগী ৪০০ এবং গরুর গোশত ৪৩০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। অথচ ৩-৪ দিন আগেও বয়লার ১৪০ টাকা এবং দেশি ৩২০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। গরুর গোশত ছিল ৩৯০-৪০০ টাকা।
মাছের বাজারে যেন ঢোকাই বারণ ছিল। ৩ ইঞ্চি লম্বা ফাইসা মাছ ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে। কিছুটা বড় মাছের দাম ছিল ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা। ট্যাংরা ৫০০ টাকা, এছাড়া রুই মাছ ৩২০ থেকে ৪০০ টাকা, পুটি ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। নগরীর নিউ মার্কেট, শেখপাড়া বাজার ও বড় বাজারে গিয়ে দামের খুব বেশি একটা হের ফের পাওয়া যায়নি।
হঠাৎ এমন উচ্চ মূল্যের কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে বিক্রেতারা জানান, পাইকারী বাজারে পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। এজন্য খুচরা বাজারেও দাম বেড়েছে। আমরা পাইকারী বাজারের তালিকাও নেওয়ার চেষ্টা করবো। এর সঙ্গে খুচরা বাজারের সমন্বয় করার চেষ্টা করা হবে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে পাইকারী ও খুচরা বাজারের মধ্যে এতো পার্থক্য থাকবে না বলে তিনি দাবি করেন।
খুলনা জেলা বাজার কর্মকর্তা আবদুস সালাম তরফদার বলেন, রমজানে হঠাৎ করে পণ্যের দাম বৃদ্ধি নিয়ে সবাই উদ্বিগ্ন। এজন্য প্রতিদিনই বাজার মনিটরিং করা হচ্ছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ৫টি এবং কেসিসির পক্ষ থেকে পৃথক একটি মনিটরিং কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রতিদিনই ভ্রাম্যমাণ আদালত নিয়ে বাজার মনিটরিং করা হচ্ছে। দু’একদিনের মধ্যেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসবে।
কেসিসির বাজার সুপার গাজী সালাউদ্দিন জানান, বাজারে পাইকারী মুড়ি বিক্রি হয়েছে ৫০ টাকা। খেজুর কম দামিটা বিক্রি হয়েছে ৬০ টাকায়। এর থেকে ১০ টাকা লাভে খুচরা বিক্রেতারা পণ্য বিক্রি করতে পারবেন। এর চেয়ে বেশি দরে কাউকে পণ্য বিক্রি করতে দেখলে মনিটরিং টিমকে জানানোর অনুরোধ জানান তিনি।
কেসিসি’র ভারপ্রাপ্ত মেয়র মোঃ আনিসুর রহমান বিশ্বাস বলেন, বাজারে অতিমুনাফালোভীদের অপতৎপরতা বন্ধে প্রতিদিনই নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটসহ অভিযান চালাচ্ছি। তবুও অভিযোগ উঠছে ক্রেতাদের ঠকানোর।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন