এ.টি.এম. রফিক ও আশরাফুল ইসলাম নূর, খুলনা থেকে: বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটিতে স্থান পেতে লবিং শুরু করেছেন খুলনাঞ্চলের অর্ধশতাধিক শীর্ষ নেতা। আবার, জেলা ও মহানগর কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদের নেতারা রয়েছেন উপজেলা বা থানা কমিটির শীর্ষ পদ দখল করে রয়েছেন। ফলে স্থানীয় কমিটির শীর্ষ পদমর্যাদা ধরে রেখে উচ্চতর কমিটির পদ পাবেন কি না তা নিয়ে নেতারা পড়েছেন চিন্তায়। আগামী মার্চে অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় কাউন্সিলে ‘এক নেতার এক পদ’ নীতি গ্রহণের সম্ভাব্যতাই দুশ্চিন্তার কারণ একাধিক পদধারী নেতাদের।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, জাতীয় সংসদ, উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মনোনয়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে দীর্ঘদিন ধরে একাধিক শীর্ষ পদ ধরে রাখছেন নেতারা। আবার কেন্দ্রেও সম্মানজনক পদ ধরে রাখতে সোচ্চার তারা। মূলত, এমনি নেতারা পড়েছেন দোটানায়। কেন্দ্রীয় পদ রাখবেন, নাকি মহানগর বা জেলা পর্যায়ের শীর্ষ পদে থাকবেন তা নিয়ে শুরু হয়েছে হিসাব-নিকাশ।
বিএনপির তৃণমূল নেতারা বলছেন, বহু কেন্দ্রীয় নেতা স্থানীয় কমিটিতে পদ দখল করে থাকেন। এতে স্থানীয় পর্যায়ে সংগঠনের অনেক ত্যাগী নেতাকেই পদবঞ্চিত হতে হয়। এ কারণে দল দুর্বল হয়ে পড়ে। ‘এক নেতার এক পদ’ নীতি গৃহীত হলে এ অবস্থার অবসান ঘটবে। এতে বিশেষ করে সবপর্যায়ের তরুণ নেতারা পদ পেয়ে উৎসাহিত হবেন। তৃণমূলের নেতারা পদবঞ্চিত থাকবেন না।
খুলনা বিভাগের মহানগর ও জেলার শীর্ষ পদে থাকা কেন্দ্রীয় প্রভাবশালী নেতারা হলেন, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য অধ্যাপক মাজিদুল ইসলাম খুলনা জেলা বিএনপি’র সভাপতি; খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মসিউর রহমান ঝিনাইদহ জেলা সভাপতি; ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিষয়ক সম্পাদক মেহেদী আহমেদ রুমী কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির সভাপতি; সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম মঞ্জু খুলনা মহানগর বিএনপির সভাপতি; সহ-মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক অধ্যক্ষ সোহরাব উদ্দিন কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক; স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান হাবিব সাতক্ষীরা জেলা বিএনপির সভাপতি। এছাড়া যশোর, বাগেরহাট, নড়াইল, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গার শীর্ষ নেতারা রয়েছেন বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটিতে।
পিছিয়ে নেই নির্বাহী কমিটির সদস্যরাও - এ্যাড. শফিকুল আলম মনা খুলনা জেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক, মুক্তিযোদ্ধা মনিরুজ্জামান মনি মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক, ওহিদুল ইসলাম বিশ্বাস চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির আহŸায়ক; শাহারুজ্জামান মোর্ত্তজা খুলনা মহানগর বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি, কাজী সেকেন্দার আলী ডালিম, সৈয়দা নার্গিস আলীও রয়েছেন নগর কমিটির সম্মানজনক পদে। দামোদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ড. মামুন রহমানও রয়েছেন নির্বাহী কমিটির সদস্য। তবে কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক শরীফ শাহ কামাল তাজের খুলনার কমিটিতে কোন পদ-পদবী নেই। আর মহানগর বিএনপির সাবেক আহŸায়ক আলী আসগর লবী কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হলেও অন্য কোন কমিটিতে নেই তার নামও।
আগামী কাউন্সিলেও কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটিতে পদ পেতে খুলনা বিভাগের অর্ধশতাধিক নেতা দলীয় হাইকমান্ডে ধরনা দিতে শুরু করেছেন। শত হামলা-মামলা আর হুলিয়া মাথায় রেখেও কেন্দ্রীয় কমিটিতে সম্মানজনক পদ-পদবী পেতে লবিং শুরু করেছেন তারা। তবে স্থানীয় কমিটির শীর্ষ পদটিও ছাড়তে না চাওয়ায় এখনি নাম প্রকাশ করে বক্তব্য দিতে রাজি হচ্ছেন না কেউ-ই। তবে তৃণমূল পর্যায়ের স্থানীয় নেতারা ‘এক নেতার এক পদ’ নীতিকে সাধুবাদ জানাচ্ছেন।
মহানগর বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম-সম্পাদক অধ্যক্ষ তারিকুল ইসলাম বলেন, দলের গঠনতন্ত্র সংশোধন করে ‘এক নেতার এক পদ’ নীতি কঠোরভাবে মেনে চললে বহু উদীয়মান নেতাকে বিভিন্ন পদে অন্তর্ভুক্ত করা সহজ হবে। এতে দল সাংগঠনিকভাবে অনেক বেশি শক্তিশালী হবে।
জেলা বিএনপি’র সদস্য এ্যাড. মঞ্জুর আলম নান্নু বললেন, ‘এক নেতার এক পদ’ বাস্তবায়িত হলে সুবিধা-অসুবিধা দুই আছে। তবে সুবিধাই বেশি। এতে দল অনেক বেশি শক্তিশালী হবে। একই সাথে শহীদ জিয়ার আদর্শ ‘নেতার চেয়ে দল বড়’ আদর্শ বাস্তবায়িত হবে।’
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন