কোরবানির পশুর চামড়া পাচার রোধে পবিত্র ঈদুল আজহার দিন থেকে পরের ৭ দিন কুমিল্লা সীমান্ত এলাকায় কঠোর নজরদারিতে রয়েছে প্রশাসন। এদিকে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা সীমান্ত এলাকায় অবস্থান নিয়ে চামড়া কিনতে এদেশের দালালদের হাতে কোটি কোটি টাকা তুলে দিচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। পাশাপাশি পাচারকারী চক্রের সদস্যরাও সক্রিয় হয়ে উঠেছে। এবার কুমিল্লা সীমান্ত দিয়ে ছাগলের চামড়ার পাশাপাশি গরুর চামড়া পাচারের আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা।
কুমিল্লায় কোরবানির গরুর চামড়ার কম দর নিয়ে গত ৪/৫ বছর ধরে বিশৃঙ্খলা চলতে থাকায় প্রান্তিক পর্যায়ের খুচরা বা মৌসুমী ব্যবসায়ীরা সীমান্তের এপার-ওপার সিন্ডিকেটের হাতে চামড়া পৌঁছে দেয়। এবছরও পাচারের আশঙ্কা করছেন এখানকার পাইকারী ব্যবসায়ীরা। কেননা এবারেও ঢাকার বাইরে লবণযুক্ত প্রতি বর্গফুট চামড়ার দাম গত বছরের দর অনুযায়ী ৩৫ থেকে ৪০ টাকা রাখা হয়েছে। ফলে পাচারচক্রের এপার-ওপার সিন্ডিকেট বেশি দামে চামড়া কিনতে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে।
কুমিল্লা ঋষিপট্টির চামড়া ব্যবসায়ীরা জানান, গত ৩/৪ বছর ধরে ভারতের ট্যানারিগুলোতে কাঁচা চামড়া সঙ্কট চলছে। এখানকার বাজারের চেয়ে ভারতে চামড়ার দাম বেশি। এবার সরকারিভাবে গরু-ছাগলের চামড়ার যে দাম নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে তা ভারতের বাজারের চেয়ে অনেক কম। আর একারণে বিপুল পরিমাণ গরুর চামড়া ভারতে পাচার হয়ে থাকে। মৌসুমী ব্যবসায়ীদের একটি বড় অঙ্ক চামড়া পাচার সিন্ডিকেটের সাথে জড়িত। এখানে চামড়ার দাম কমে গেলে তারা পাচারের উদ্দেশ্যে সিন্ডিকেটে চামড়া মজুদ করে।
ব্যবসায়ীরা জানান, চামড়ায় লবণ দেয়ার পর প্রায় ৩ থেকে ৪ মাস সংরক্ষণ করা যায়। সীমান্ত এলাকার সিন্ডিকেটধারীরা সংরক্ষণ করা চামড়া আস্তে ধীরে ভারতে পাচার করে থাকে। তাই চামড়া পাচার রোধে ঈদের দিন থেকে পরবর্তী ৩/৪ মাস আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নজরদারি রাখার দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
সূত্র মতে, কুমিল্লার ভারত সীমান্তবর্তী ৭৪ কিলোমিটার এলাকায় চামড়া পাচারে তৎপর হয়ে উঠেছে। দীর্ঘ এই সীমান্ত এলাকাজুড়ে রয়েছে কুমিল্লার ব্রাক্ষণপাড়া, বুড়িচং, আদর্শ সদর, সদর দক্ষিণ ও চৌদ্দগ্রাম উপজেলা। চামড়াসহ বিভিন্ন অপরাধ দমনে ভারত সরকার কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ করলেও থেমে নেই মালামাল পাঁচার। বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, কুমিল্লা ব্রাক্ষণপাড়া উপজেলার চড়নলনগর, তেতাভ‚মি, বাঁশমঙ্গল, শশীদল, আশাবাড়ি, নয়নপুর, বুড়িচংয়ের চড়নলনগর, কালীকৃষ্ণনগর, পাহাড়পুর, শরীফপুুর, ছয়গ্রাম, সদর উপজেলার বেলবাড়ি, ভৈরবপুর, মতিননগর, কোটেশ্বর, শিবের বাজার, নিশ্চিন্তপুর, কেরানীনগর, আনন্দপুর, তেলকুপি, মীরপুর, জামবাড়ী, অরন্যপুর, গোলাবাড়ি, বিবির বাজার, সাহাপাড়া, সদর দক্ষিনের মথুরাপুর, বিরাহীপুর, কনেশতলা, যশপুর, একবালিয়া, সূর্যনগর, শ্রীপুর, উলুরচর, চৈৗয়ারা বাজার, সুর্বনপুর, ভাটপাড়া, বোলাই, দড়িবটগ্রাম, ভাগালপুর, বানীপুর চৌদ্দগ্রামের জয়নগর, শিবের বাজার, কালিকৃষ্ণ নগর, সফুয়া, লালারপুর, বাবুটিপাড়া, আমানগন্ডা, মতিয়াতলী, কোমারডোগা, বীরচন্দ্রনগর, নাটাপাড়া, কালির বাজার, আটগ্রাম, বসস্তপুর, চিওড়া, জগন্নাথদীঘি, সাতবাড়িয়া, পদুয়া প্রভৃতি পথে পাচার হচ্ছে বিভিন্ন মালমাল।
কোনভাবেই সীমান্তের ওপারে চামড়া পাচার হতে দেয়া যাবে না। এদিকে বিজিবি সূত্র জানায়, কোনভাবেই যাতে চামড়া সীমান্তের ওপারে পাচার হতে না পারে সে ব্যাপারে বিজিবি কঠোর সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছে। জানা গেছে, ত্রিপুরা কেন্দ্রীক চামড়া ব্যবসায়ীরা চামড়া কিনতে তৎপর থাকে। তারা এদেশে দালালদের মাধ্যমে চামড়া ওপারে পাচার করে নিয়ে যায়। এসব দালাররা সীমান্ত এলাকা থেকে চামড়া কিনে ওপারে পাচার করে থাকে। চামড়া ব্যবসায়ী সাইফুল বলেন, গতকাল শনিবার হাট বাজারে চামড়াপাচারের সাথে জড়িত কোন দালালের আনাগোনা দেখা যায়নি। চামড়া পাচার রোধে ইতিমধ্যে কুমিল্লার সীমান্ত জুড়ে সতর্ক নজরদারি শুরু করা হয়েছে। এছাড়াও কোরবানির চামড়া পাচার রোধে কুমিল্লায় পুলিশ-বিজিবির পাশাপাশি ব্যাপক গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। চামড়া বোঝাই কোনো ট্রাককে সীমান্ত অভিমুখী হতে দেয়া হবে না। এদিকে কুমিল্লার পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলাম গত সোমবার তার কার্যালয়ে জেলার চামড়া ব্যবসায়ীদের সাথে মতবিনিময় সভা করেছেন। ওই সভায় পুলিশ সুপার বলেছেন, কোন অবস্থাতেই কোরবানির পশুর চামড়া দেশের বাইরে কোথাও পাচার হতে দেয়া যাবেনা। পশুর চামড়া পাচাররোধে ঈদের দিন থেকে জেলা পুলিশের একাধিক টিম টহল ও কঠোর নজরদারিতে থাকবে। এখানকার চামড়া ব্যবসায়ীদের সাথে পুলিশের সার্বক্ষণিক যোগাযোগ থাকবে। কেবল চামড়া পাচার রোধই নয়, চামড়া কেনা বেচায় যাতে সুষ্ঠু সুন্দর পরিবেশ বজায় থাকে এজন্য জেলা পুলিশ কাজ করে যাবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন