সরাইলে কলেজছাত্র ইকরামের স্কুল পড়ুয়া ভাগ্নিকে নিয়মিত ইভটিজিং (উত্ত্যক্ত) করত প্রতিবেশী শিমুল (২৮) নামের এক বখাটে। এর প্রতিবাদ করত ইকরাম। ইভটিজারের অভিভাবকদের বিচার দিয়েও কোন প্রতিকার পায়নি তারা। ইভটিজিং-এর দায়ে ৩ মাস জেলও খেটেছে শিমুল। তারপরও থামেনি তার ইভটিজিং এর মাত্রা। জেল থেকে এসে শিমুল ইকরামকে কুপিয়ে শেষ করে ফেলার হুমকিও দিয়েছিল। কথা রেখেছে বখাটে শিমুল। গত শনিবার গভীররাতে ঘুমন্ত ইকরামকে নির্মমভাবে হত্যা করে বস্তায় ভরে খাটের নিচে রেখে চম্পট দিয়েছে শিমুল ও তার সহযোগিরা।
পরের দিন রোববার সকালে পুলিশ ইকরামের বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার করে। চাঞ্চল্যকর এ ঘটনায় পুলিশ গ্রেফতার করে শিমুলের মামা সাবেক ইউপি সদস্য মো. নাজিম উদ্দিন (৫৫), খালাম্মা নাজমা বেগম (৪৫) ও ইকরামের এক ভাগিনা ইমরানুল হাসান সাদীকে (১৯)। ইকরামের বাবা হাফেজ মো. শহিদুল ইসলাম (৫২) বাদী হয়ে শিমুলকে প্রধান আসামি করে ৫ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা আরো ৫-৬ জনের বিরুদ্ধে সরাইল থানায় একটি মামলা করেছেন। ২৪ ঘন্টার মধ্যে হত্যাকারীদের সনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ। ১৬৪ ধারার জবানবন্দীতে পরিকল্পিত চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকান্ডের আদ্যোপান্ত বর্ণনা করেছে ঘটনার অন্যতম সহযোগি সাদী। পলাতক রয়েছে হত্যাকান্ডের মূল নায়ক শিমুল ও তার আরেক সহযোগি আপন ছোট ভাই সোহাগ।
পুলিশ, নিহতের পরিবার ও স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, ইকরাম এ বছর সরাইল সরকারি কলেজের বিএম শাখায় উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছিল। পড়ালেখার পাশাপাশি বড় ভাইকে রাজমিস্ত্রীর কাজে সহযোগিতা করত ইকরাম। ভবিষ্যতে প্রকৌশলী হওয়ার স্বপ্ন ছিল তার।
বখাটে শিমুল গত ২-৩ বছর আগ থেকেই ইকরামের স্কুলপড়–য়া শিশু ভাগ্নিকে উত্ত্যক্ত করে আসছিল। উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করতো ইকরাম। এ কারনেই ইকরামের উপর ক্ষুদ্ধ হয় শিমুল। পরিবার দুটি এখানকার স্থানীয় না হওয়ায় শিমুলের অভিভাবকদের কাছে একাধিকবার নালিশ করেও কোন প্রতিকার পায়নি। উল্টো বকাঝকা শুনতে হয়েছে তাদের। সবশেষে গত ১০ অক্টোবর গভীররাতে পরিকল্পিত ভাবে ঘুমন্ত অবস্থায় গলাকেটে ইকরামকে হত্যা করেই ইভটিজিং এর প্রতিবাদের প্রতিশোধ নিল বখাটে শিমুল। পরের দিন সকালে ঘরের খাটের নিচ থেকে ইকরামের বস্তাবন্দী লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
হত্যাকান্ডের পরের দিন রোববার আটক নাজমা বেগমের একটি ফোনের সূত্র ধরে ওই পাড়ার জব্বরের স্ত্রী শিমুলের আপন বোন রঞ্জিনা বেগম (৩৬) ও তার মেয়ে তারিন (১৭) কে আটক করে পুলিশ। তবে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই গৌতম চন্দ্র দে বলেন, রঞ্জিনা ও তার মেয়ে তারিনকে আটক নয়, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আনা হয়েছিল। পরের দিন সোমবার ছেড়ে দেয়া হয়েছে। অন্য কোন ধরনের ঘটনা ঘটেনি।
মামলার বাদী ইকরামের বাবা শহিদুল ইসলাম বলেন, ইভটিজিং এর প্রতিবাদ করাই ছিল আমার ছেলের অপরাধ। আমার ছেলেকে যারা পশুর মত হত্যা করেছে।
সরাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহাদাৎ হোসেন বলেন, ইকরাম হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে দেওয়া সাক্ষীর বক্তব্যে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বেরিয়ে এসেছে। পলাতক দুই আসামিকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন