ইনকিলাব ডেস্ক : নির্বাচনপরবর্তী সহিংসতায় ফরিদপুরের নগরকান্দার চরযশোরদী ইউনিয়ন এবং বাগেরহাটের মোল্লাহাট উপজেলার আস্তাইল গ্রামে বাড়ি-ঘরে ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে।
ফরিদপুর জেলা সংবাদদাতা জানান, ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার চরযশোরদী ইউনিয়ন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. কামরুজ্জামান সাহেব মিয়ার বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে।
এ সময় হামলাকারীরা চেয়ারম্যান প্রার্থীর ঘরে থাকা টিভি, ফ্রিজ, মোটরসাইকেল এবং ঘরে টাঙানো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও জাতীয় সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর ছবিও ভাঙচুর করে।
ষষ্ঠ দফা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হওয়ায় বিদ্রোহী আওয়ামী লীগের প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-দপ্তর সম্পাদক আরিফুর রহমান পথিক তার কর্মী সমর্থকদের নিয়ে এমন কা- ঘটান বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
শুধু এখানেই শেষ নয় নৌকা মার্কার প্রার্থীর পক্ষে কাজ করায় ওই ইউনিয়নের কুমারদিয়া গ্রামে মুক্তিযোদ্ধা হারুনার রশিদ, আবুল কাশেম ফকির, কিবরিয়াসহ প্রায় ৫০টি বসতঘর রামদা দিয়ে কুপিয়ে তছনছ করে দেওয়া হয়েছে। লুট করা হয়েছে সকল ঘরের মালামাল।
সেলিম ফকির নামের এক নৌকার সমর্থক বলেন, বিকেল ৫টার দিকে পথিক চেয়ারম্যান তার কয়েক’শ লোকজন নিয়ে হামলা শুরু করে। পুরো ২ ঘণ্টা ভাংচুর ও লুটপাট করে তারা চলে যায়। সেলিমের ১৫ লাখ টাকার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কাজে ব্যবহৃত কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মেশিন নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এছাড়াও আরো প্রায় ২০ লাখ টাকার মালামাল লুট করা হয়েছে। বাড়িঘর ভাংচুরে আরো ১০ লাখ টাকার ক্ষতি করা হয়েছে।
লুটপাটে বাধা দেওয়ায় ৬ জনকে কুপিয়ে আহত করা হয়েছে। এদের মধ্যে শোয়েব ও সিরাজ নামের দুই জনের অবস্থা আশংকাজনক। এছাড়া লাঠির আঘাতে নারীসহ আরো কমপক্ষে ১০জন আহত হয়েছে। তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী জয়ী প্রার্থী আরিফুর রহমান পথিক বলেন, সাহেব ফকির আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করছে তা ঠিক না। তিনি বলেন, সাহেবের লোকজন আমার লোকদের উপর হামলা করা কারণেই এমনটি ঘটেছে।
পুরুষশূন্য গ্রাম আস্তাইল
বাগেরহাট জেলা সংবাদদাতা : বাগেরহাটের মোল্লাহাটে সদ্যসমাপ্ত ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে হামলা, বসতঘর ভাঙচুর ও লুটপাট অব্যাহত রয়েছে। গত এক সপ্তাহে আস্তাইল গ্রামের কমপক্ষে কুড়িটি বসতঘর ও দোকানপাটে ভাংচুর চালিয়েছে পাশর্^বর্তী সিংগাতি গ্রামের চৌধুরী বংশের লোকজন। এ ঘটনায় প্রভাবশালী চৌধুরী পক্ষ থেকে অর্ধশত গ্রামবাসীর নামে থানায় মামলা দায়ের করা হলে আস্তাইল গ্রামে পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের নারী ও শিশুরা আতঙ্কে রয়েছে। ওই প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে কেউ কেউ মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না।
এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, গত ২২ মার্চ ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে বাগেরহাটের মোল্লাহাট উপজেলার সিংগাতি গ্রামের মেম্বর পদে জানিক চৌধুরীকে ভোট না দেয়ায় মজনু মোল্লাকে মারপিট করলে সে গুরুতর আহত হয়। এখবর পাশের গ্রাম আস্তাইলে মজনু মোল্লার মামার খান বাড়িতে পৌঁছালে খান ও চৌধুরী বংশের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে পহেলা জুন বেলা ১১টার দিকে দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। এতে উভয়পক্ষের প্রায় কমপক্ষে অর্ধশত আহত হয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ১৬ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুঁড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পরে পাল্টাপাল্টি মামলা দায়ের করা হলেও বসতঘর ভাঙচুর চালিয়ে যাচ্ছে চৌধুরী বংশের লোকজন।
মঙ্গলবার রাতে আস্তাইল গ্রামের সালেক খান, এনামুল খান, হাসু খান, আকরাম ও ইনজিলের বাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাট চালিয়েছে। ওই গ্রামের দিমজুর সালেক খানের স্ত্রী হাসিনা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, রাতে ২৫-৩০ জনের একদল লোক এসে প্রথমে বসত ঘরের ওপর ইট মারে। পরে ঘরের বেড়া ও দরজায় ভাংচুর চালায়। এমনকি ভাত খাবার একটা থালাও রেখে যায়নি। আমরা কি অপরাধ করেছি। আমার স্বামী ঢাকায় দিনমজুরের কাজ করে।
মোল্লাহাট থানার ওসি আ স ম খায়রুল আনাম বলেন, আস্তাইলের খান ও পাশের সিংগাতি গ্রামের চৌধুরী পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় পাল্টাপাল্টি মামলা দায়ের হয়েছে। আসামীরা পলাতক। তবে নতুন করে কোনো বাড়িঘরে হামলা হয়নি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন