মানসিক রোগী লুবনা ? তার মা ও আত্মীয় স্বজনরা তাকে পাবনা মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করতে না পেরে, রাতে সৎসঙ্গ হেমায়েতপুর আশ্রমের বারন্দায় শেকল আবদ্ধ করে রাত্রি যাপন করে কাক ডাকা ভোরে লুবনাকে ফেলে প্রায় ২ মাস আগে তারা চলে যান। সেই থেকে লুবনা সৎসঙ্গ আশ্রমের আশ্রয়ে রয়েছে। কিন্তু তাঁদের পক্ষেও খুব বেশি দিন আশ্রয় দেয়া সম্ভব নয়।
লুবনাকে নিয়ে বিপাকে পড়েছেন সৎসঙ্গ আশ্রম কর্তৃপক্ষ। এখন তার দেখভাল করছেন, আশ্রমের কৈতুরী নামে এক ভদ্র মহিলা। লুবনা কিশোরী থেকে যৌবনে পা রেখেছে এটাও এখন সমস্যা। আশ্রম কর্তৃপক্ষ বলছেন, কিছুদিনের মধ্যে অনুকূল চন্দ্র ঠাকুরের আবির্ভাব উৎসব শুরু হবে। তখন লুবনাকে টেক কেয়ার করা মুস্কিল হবে তাদের পক্ষে। ইতোমধ্যে আশ্রম কর্তৃপক্ষ লুবনাকে ভর্তি করার চেষ্টা করেন, কিন্তু অভিভাবক, এলাকার চেয়ারম্যানের প্রত্যায়নপত্র ব্যতিরেকে ভর্তি করার বিধান না থাকায় তাঁরা ব্যর্থ হন। লুবনা বা রূপনা তার বাবার নাম বলছে জহির। মামার বাড়ি চট্টগ্রামের চন্দনাইশ, হাজীপাড়া মামাবাড়িতে থেকে হাজীপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে লেখা-পড়া করতো সে। ধারণা করা হচ্ছে, তার মায়ের সাথে পিতার এখন সম্পর্ক নেই। সেটা অনেকের ক্ষেত্রেই থাকে না। লুবনা কি আদৌ মানসিক রোগী ? মানসিক চিকিৎসক না দেখলে সেটা আমরা জোর দিয়ে বলতে পারি না। তবে তার চিকিৎসা সেবা দেয়া কর্তব্য ছিল মানসিক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। লুবনার এ খবর ফেসবুকে গত সোমবার দিবাগত রাতে ভাইরাল করে দেন সাংবাদিক রনি ইমরান। ঝড় ওঠে সোস্যাল মিডিয়ায় লুবনাকে নিয়ে। এখন টনক নড়ছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
আমাদের প্রশ্ন ভিন্ন জায়গায়, দেশের একমাত্র বিশেষায়িত মানসিক হাসপাতালটি পাবনায়। এখানে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে মানসিক রোগীদের নিয়ে আসা হয় ভর্তি হবে এ আশা নিয়ে। এরা সবাই ধনাঢ্য তাও নয়। কেউ ভর্তি হতে পারেন, আবার কেউ পারেন না। অনেকে নিকটববর্তী প্রাইভেট মানসিক ক্লিনিকে ভর্তি করে চলে যান। সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হওয়া নাগরিকদের অগ্রাধিকার। নানা জটিলতার কথা তুলে ধরা হয়। মেন্টাল হাসপাতালে বেড খালি নেই। বেড খালি না থাকতে পারে, কিন্তু এ রোগীদের আউটডোর বোর্ডে চিকিৎসা দিয়ে ওষুধপত্র লিখে বাড়িতে চলে যেতে বলা যায়। দেশের সব মেডিক্যাল কলেজে সরকার একজন মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পোস্টিং দিয়েছে। ( পাবনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালটি মেন্টাল হাসপাতালের সরকারি জায়গায় স্থাপিত) এ হাসপাতালেও একজন মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রয়েছেন। সেখানেও চিকিৎসা সেবা নিতে পারেন, একজন মানসিক রোগী। অনেকে এ বিষয়টি জানেন না, আবার অনেক অভিভাবক মনে করেন মানসিক রোগী বাড়িতে উৎপাত করছে, মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করে দিলেই আপদ যায়। নিজের সন্তান, আত্মীয় পরিজন মানসিক রোগী হতেই পারেন, তাদের আপদ না ভেবে আপন ভাবুন ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন