শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মহানগর

অবশেষে চাঁদাবাজদেরই জয় হলো

প্রকাশের সময় : ১১ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : অবশেষে চাঁদাবাজদেরই জয় হলো। প্রশাসনের চোখে ধূলো দিয়ে উচ্ছেদকৃত জায়গায় নতুন করে দোকান বসালো চাঁদাবাজচক্র। গতকাল শুক্রবার ছুটির দিনে রাজধানীর কদমতলী থানাধীন জুরাইন আলম মার্কেটের সামনে উচ্ছেদকৃত জায়গায় ৬০টির বেশি দোকান বসায় চাঁদাবাজচক্র। স্থানীয়রা জানায়, এর আগে একই স্থানে আরও ৩০টি দোকান বসানো হয়। সব মিলে ৯০টির বেশি দোকান থেকে অগ্রিম বাবদ প্রায় ৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে ওই চক্র।
এর আগে গত ২৮ মে উচ্ছেদকৃত জায়গায় নতুন করে দোকান বসানো প্রসঙ্গে কদমতলী থানার ওসি কাজী ওয়াজেদ আলী ইনকিলাবকে বলেছিলেন, উচ্ছেদকৃত জায়গা কাউকে নতুন করে ইজারা দিতে দেয়া হবে না।
জুরাইন সেতু ও আলম মার্কেটের সামনে সড়ক ও জনপথের জমির উপর স্থাপিত হকার্স মার্কেট উচ্ছেদ নিয়ে চাঁদাবাজচক্র বরাবরই সুবিধাজনক অবস্থানে ছিল। নতুন করে দোকান ইজারা দেয়া তথা অগ্রিম টাকার নেশায় চাঁদাবাজচক্র গত মাসে পদ্মা সেতু প্রকল্পের দোহাই দিয়ে পাঁচ শতাধিক দোকান উচ্ছেদে মরিয়া হয়ে ওঠে। এই গ্রæপের নেতৃত্বে রয়েছে খায়রুল বাশার। স্থানীয়রা যাকে ফুটপাতের মলম বিক্রেতা বলে জানে। স্থানীয় হকারদের অভিযোগ, বাংলাদেশ ছিন্নমূল হকার্স লীগের নাম ভাঙিয়ে এই খায়রুল ও মোশাররফ কয়েক মাস আগে জুরাইন হকার্স মার্কেট দখল করে।
থানা আওয়ামী লীগের নতুন কমিটি গঠন হওয়ার দু’দিনের মাথায় নতুন নেতাদের সমর্থন নিয়ে হামলা চালিয়ে ও হকারদের মারপিট করে খায়রুল, মোশাররফ, হানিফরা হকার্স মার্কেটের নিয়ন্ত্রণ নেয়। কয়েকদিন যেতে না যেতেই ওই এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান চালানোর খবর পেয়ে খায়রুল মোশাররফ জাতীয় পার্টির নেতাদের সাথে হাত মেলায়।
পুরাতন দোকানগুলো উচ্ছেদ করে নতুনভাবে সেখানে ৫ শতাধিক দোকান বসানোর মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার স্বপ্নে বিভোর হতে থাকে তারা। এরই মধ্যে আলম মার্কেটের সামনের দোকানগুলো উচ্ছেদ করে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। বাকি অংশ উচ্ছেদ স্থগিত করেন এমপি সানজিদা খানম। তিনি সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রীকে ফোন করে ঈদের আগে আর উচ্ছেদ না করার জন্য অনুরোধ করেন। সেই থেকে থেমে যায় উচ্ছেদ। কিন্তু খায়রুলরা উচ্ছেদকৃত জায়গায় নতুন করে দোকান বসানোর জন্য দোকান প্রতি ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা করে নিতে থাকে।
হকাররা জানায়, পুলিশ নতুন করে দোকান তুলতে বাধা দিলে চাঁদাবাজচক্র ভোল পাল্টে স্থানীয় এমপির ভাগ্নের শরণাপন্ন হয়। শুধু দোকান বসানোর জন্য নয়, খায়রুল ছিন্নমূল হকার্স লীগের ফান্ড গঠনের কথা বলে নিরীহ হকারদের কাছ থেকে জোর করে ৩শ’ টাকা করে আদায় করছে। এরকম একটি তহবিল আদায়ের রসিদ আমাদের হাতে এসেছে। সেখানে দেখা যায়, গত ১৪ মে রোকন হাওলাদার নামক এক হকারের কাছ থেকে তিনশ’ টাকা আদায় করা হয়েছে।
সাধারণ হকাররা বলেন, নানা কায়দায় খায়রুল ও মোশাররফ চাঁদা আদায় করে চললেও প্রশাসন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়ায় আমরাও অসহায়।
অন্যদিকে, নজরুল নামে এক ব্যবসায়ী অভিযোগ করে বলেছেন, খায়রুল তার কাছে মোটা অংকের টাকা দাবি করছে। টাকা না দিলে খায়রুল তার দোকান বন্ধ করে দেয়ার হুমকী দিচ্ছে। জুরাইন হকার্স মার্কেটে নজরুলের একটি মোবাইলের দোকান রয়েছে। নজরুল বলেন, তিনি ক্রয়সূত্রে ওই দোকানের মালিক। যার কাছ থেকে দোকান কিনেছেন তার সাথে খায়রুলের কোনো যোগসূত্র নেই। সেখানে খায়রুল টাকা দাবি করায় তিনি বিস্মিত।
এ বিষয়ে থানায় মামলা করবেন কিনা জানতে চাইলে ব্যবসায়ী নজরুল বলেন, খায়রুলের হুমকি ধমকি অব্যাহত থাকলে অবশ্যই মামলা করবো। এর আগে হকারদের কাছ থেকে টাকা নেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছিলেন খায়রুল। তিনি অস্বীকার করার পর আমরা কয়েকজন হকারের সাথে কথা বলেছি। তারা অকপটে বলেছেন, খায়রুলকে টাকা দেয়ার কথা। সেগুলোর রেকর্ড আমাদের কাছে সংরক্ষিত আছে।
জানা গেছে, চাঁদাবাজির ঘটনা পত্রিকায় প্রকাশ করার পর খায়রুল নিজে টাকা না উঠিয়ে এজেন্ট নিয়োগ করেছে। বিউটি নামের এক মহিলা হকার এখন তার প্রধান এজেন্ট। বেশ কয়েকজন হকার জানান, প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানো খায়রুলের পেছনে রয়েছেন ৫৪ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মাসুদ। এক সময়ের মলম বিক্রেতা খায়রুলের মতো এই কাউন্সিলরের অতীত ইতিহাস ততোটা সুখকর নয়।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে কদমতলী থানার ওসি কাজী ওয়াজেদ আলী গতরাতে ইনকিলাবকে বলেন, জুরাইনে উচ্ছেদকৃত জায়গায় নতুন করে দোকান বসানোর বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। তিনি বলেন, আমি একটু বাইরে ছিলাম। এখন দেখছি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন