স্টাফ রিপোর্টার : আপনি আবুল বাশার? ‘হ্যাঁ।’ কারেন্সি আছে? ‘না।’ তথ্য রয়েছে আপনি পাঁচ দিন আগে পাকিস্তান গিয়েছেন কারেন্সি আনতে। ‘স্যার, হ্যান্ড ক্যারি ছাড়া কোনো কিছু নেই আমার।’
গতকাল শুক্রবার সকালে হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিপুল পরিমাণ ভারতীয় মুদ্রাসহ ধরা পড়ার আগে আবুল বাশারের সঙ্গে শুল্ক গোয়েন্দাদের এভাবেই কথা হয়।
আবুল বাশার যে শুল্ক গোয়েন্দার নজরদারিতে তা তিনি বুঝতেই পারেননি। ৩০ কেজি ওজনের ব্যাগ নিয়ে এসেছেন বাশার।
শুল্ক গোয়েন্দারা বাশারকে বেল্টে নিয়ে তাকে দিয়েই বের করে আনলেন সেই মুদ্রাভর্তি ব্যাগ। ব্যাগে কি কি আছে? গোয়েন্দাদের প্রশ্ন শুনে সরল ভাষায় বাশারের উত্তরÑবালিশ, তোশক আর দু’সেট ক্রোকারিজ, স্যার। তাহলে কারেন্সি? আবার প্রশ্ন কর্মকর্তার।
বাশার এবার কড়া ভাষায় তাদের বলেন, বিশ্বাস না হলে খুলে দেখুন, স্যার। একঝাঁক গোয়েন্দার সামনে ব্যাগ থেকে একে একে বের করা হলো সবকিছু। বাশারের কথাই ঠিক! কারেন্সি কই?। কিন্তু পরে তোশক, বালিশ কাটা হলে ভেতর থেকে তুলার পরিবর্তে বের হতে থাকল কাঁড়ি কাঁড়ি নোট।
গোয়েন্দাদের প্রত্যাশার চেয়েও বেশি ভারতীয় রুপি মিলল তাতে। মোট এক কোটি ৩০ লাখ ভারতীয় রুপি সঙ্গে এনেছিলেন ফেনী জেলার বাসিন্দা এ ধূর্ত পাচারকারী আবুল বাশার (৪০)।
গত বৃহস্পতিবার পাকিস্তানের করাচি থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওয়ানা হন তিনি। করাচি থেকে প্রথমে জি ৯৫৪০ ফ্লাইট যোগে শারজাহ। শারজাহ থেকে গতকাল সকাল নয়টায় এয়ার অ্যারাবিয়ার জি ৯৫১৭ ফ্লাইটযোগে শাহজালালে। পাসপোর্ট অনুযায়ী (ইঔ০৬৭৫৭৫৬) আবুল বাশার একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। রুপি পাওয়া গেল, কিন্তু রিসিভ করবে কে, কাকে দেওয়া হবে, কোথায় পৌঁছানো হবেÑভয় দেখিয়ে বাশারকে গোয়েন্দাদের প্রশ্ন। শেষে বাশারের স্বীকারোক্তি। স্যার, বিমানবন্দরের গাড়ি পার্কিং এলাকায় একজন অপেক্ষা করবে, আমি ব্যাগ তাকে পৌঁছে দেব।
তাকে ধরতে এবার বাশারকে দিয়েই ফাঁদ পাতলেন শুল্ক গোয়েন্দারা। বাশারকে একটি লাগেজ দিয়ে যাত্রীর বেশে পাঠানো হলো পার্কিংয়ে। পেছন ছদ্মবেশে শুল্ক গোয়েন্দা।
পার্কিং এলাকায় গিয়ে গোয়েন্দারা হতবাক। সাদা রঙের টয়োটা (ঢাকা মেট্রো গ ৩১-৮৩৮৫) নিয়ে এক ভদ্রলোক দাঁড়ানো। বাশার ব্যাগ এগিয়ে দিতেই রিসিভ করার সময় হাতেনাতে ধরা পড়লেন ভদ্রবেশী মুদ্রা পাচারকারী আবদুস সোবহান (৫৮)। তার বাড়ি মুন্সিগঞ্জের লৌহজংয়ে।
বাশার ও তার রিসিভকারী সোবহানকে আটকের কাহিনী সাংবাদিকদের সামনে বর্ণনা করেন শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. মইনুল খান। তিনি জানান এ ঘটনায় বিমান বন্দর থানায় একটি মামলা হয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন