ড. মুহাম্মদ মাহবুবুর রহমান
॥ দুই ॥
ইফতারের পরও রোযাদারের বিশ্রাম গ্রহণের তেমন সময় থাকে না। তাকে প্রস্তুত হতে হয় দীর্ঘ তারাবীহ্ নামায আদায়ের জন্য। আবার এ নামাযের কিরাআত হয় দীর্ঘ। পুরো কোরআন মাজীদ এক মাসে নামাযে খতম করা হয়। তারাবীহ্ নামায পাঠ করতে গিয়ে মুসল্লীকে দীর্ঘ সময় পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকতে হয় আল্লাহ্ পাকের সান্নিধ্যে। এ এক অপার মাধুর্যতা, আল্লাহ্ প্রেমে কোরআনের আকর্ষণে আয়াতের গভীরে হারিয়ে যায় মুসল্লীগণ। ঈশার পূর্বের ৪ চার রাকাআত সুন্নতসহ ৩৩ রাকাআত নামায আদায় শেষে কিছুক্ষণ বিশ্রাম গ্রহণ করেন রোযাদার ব্যক্তি। একটানা পূর্ণ রাত ঘুমানোর সুযোগ নেই তার। আবার সাহ্রী গ্রহণের জন্য উঠতে হবে তাকে। এর সাথে পড়তে হবে তাহাজ্জুদের নামায। মহিলাগণকে প্রস্তুত করতে হয় সাহ্রীর জন্য খাওয়া-দাওয়া। শুধু তাই নয় ইফ্তার এবং সন্ধ্যা রাতের খাবারের ইন্তিযাম করতে হয় তাদেরকে। দিনের বেলায়ও বিশ্রামের সময় বের করা কষ্টকর। ৩০ দিনের জন্য এ এক কঠিন কর্ম তালিকা। রোযার সময় প্রতিটি ইবাদতের সাওয়াব পাওয়া যায় বহুগুণে। রোযার দিনে এ কারণে কোরআন তিলাওয়াত, নফল নামায এবং তাসবীহ্-তাহলীল পড়তে হবে অধিকভাবে। রাসূলুল্লাহ্ (সা.) বলেন, ‘রোযা সবরের মাস, আর সবরের সাওয়াব হচ্ছে জান্নাত’ (শুআবুল ঈমান, হাদীছ নং ৩৪৫৫; মিশকাতুল মাসাবীহ্, হাদীছ নং ১৯৬৫)।
রোযা যেমন ধৈর্যের মাস তেমনিভাবে সংযমেরও মাস। সংযম অর্থ দমন এবং নিয়ন্ত্রণ। রোযা এমন একটি ইবাদত যার মাধ্যমে সকল প্রকার অশ্লীলতা, অপকর্ম এবং গুনার কাজকে দমন করা যায়। রোযা মুখে মিথ্যা কথা বলা যায় না, মিথ্যা সাক্ষ্য দেয় না। গীবত ও পরনিন্দা থেকে বিরত থাকতে হয়। এযেন এক মহাসাধনা।
রমযানের এ মহিমান্বিত মাস এক সাথে আগমন করে গোটা বিশ্বের মুমিনদের নিকট। সংঘাতময় এ বিশ্বে মাহে রমযান নিয়ে আসে ধৈর্য ও সংযমের সাওগাত। রোযার মাধ্যমে মহাপ্রশিক্ষণ গ্রহণ করে আল্লাহ্ তাআলার নৈকট্যলাভে আমরা ধন্য হই, অবগাহন করি স্বর্গীয় মহাসাগরে।
ত্রিশ দিনে ধৈর্যের ও সংযমের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে পরবর্তী মাসগুলোতে কাম, ক্রোধ, লোভ-লালসা, মোহ ইত্যাদি রিপুগুলো নিয়ন্ত্রণ করে অন্যায়-অনিয়মের পরিবর্তে তাক্ওয়াভিত্তিক পরিচ্ছন্ন জীবন যাপনের শিক্ষা গ্রহণ করতে পারি।
মাহে রমযান সাম্য ও ভ্রাতৃত্ব
শিক্ষা দেয়
সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা ও পরস্পরের মধ্যে সাম্য ও ভ্রাতৃত্বের অনুশীলনের জন্য আল্লাহ্ তাআলা বিভিন্ন বিধান দিয়েছেন। তন্মধ্যে মাহে রমযানের রোযা উল্লেখযোগ্য। রমযানের সিয়াম সাধনার মাধ্যমে একজন বিত্তশালী নিরন্ন, অনাহারীর ক্ষুধার তীব্র জ্বালা অনুভব করতে পারে। ফলে গরীবের প্রতি তাদের সহানুভূতি ও ভ্রাতৃত্ববোধ জাগ্রত হয়। ধনী-দরিদ্রের পার্থক্য দূরীভূত হয়। সৌহার্দ সম্পৃক্তির ভিত্তিতে সুখী সমৃদ্ধ সমাজ প্রতিষ্ঠা লাভ করে। নবী করীম (সা.) বলেন, ‘এটি সহানুভূতির মাস’ (শু‘আবুল ঈমান, হাদীছ নং ৩৪৫৫; মিশকাতুল মাসাবীহ্, হাদীছ নং ১৯৬৫)। এ সহানুভূতি ও সহমর্মিতার শিক্ষায় উদ্বুদ্ধ করে নবী করীম (সা.) আরও বলেন, ‘তুমি মুমিনদেরকে পারস্পরিক করুণা ভালবাসা ও সহানুভূতির ক্ষেত্রে একটি দেহের মতই দেখতে পাবে। এর একটি অঙ্গ ব্যথিত হলে সকল অঙ্গই বিনিদ্র ও জ্বরাগ্রস্ত হয়ে পড়ে’ (সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ৪৬৮৫; মুসনাদু আহমাদ, হাদীছ নং ১৭৬৪৮; মিশকাতুশর মাসবীহ্, হাদীছ নং ৪৯৫৩)।
মাহে রমযানের সিয়াম সাধনা রোযাদারকে সহনশীল ও সহিষ্ণু হতে শেখায়। পানাহার ও মনোরঞ্জনের সামগ্রী সামনে থাকা সত্ত্বেও একমাত্র আল্লাহ্র হুকুম না থাকায় সম্ভোগ হতে বিরত থাকে এবং সবর করে। এসবরই হলো যাবতীয় সফলতার চাবিকাঠি এর প্রতিদান হলো জান্নাত।
মাহে রমযান আত্মশুদ্ধি শিক্ষা দেয়
আত্মার উন্মেষের মাধ্যমেই চরিত্র গঠিত হয়। চরিত্র মানুষকে মহিয়ান ও গরিয়ান করে তোলে। আত্মশুদ্ধির উত্তম সময় মাহে রমযান। রমযান আমাদের প্রশিক্ষণ দেয় পুরো একটি মাসব্যাপি। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমাদের উপর রোযা ফরয করা হয়েছে, যেমনভাবে তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর ফরয করা হয়েছিল, যাতে করে তোমরা তাক্ওয়া অর্জন করতে পার’ (সূরা আল-বাকারা: ২: ১৮২)।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন