তারিন তাসমী
বর্তমান সময়ে চাকরির দোরগোড়ায় পৌঁছাতে অনেক কাঠখর পোড়াতে হয়। এর জন্য বেকার হয়ে ঘরে বসে না থেকে অল্প পুঁজি নিয়ে শুরু করতে পারেন কোনো ব্যবসা। একদিকে আয় হবে অন্যদিকে নিজের আত্মবিশ্বাস তৈরি হবে। বাংলাদেশের অসংখ্য বেকার পুরুষ-মহিলা ভালো কোনো প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে বাঁশ ও বেতের হস্তশিল্পের ওপর প্রশিক্ষণ নিয়ে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হতে পারেন। বাঁশ-বেতের তৈরি ফুলদানি, টেবিল ল্যাম্প, ফটোফ্রেম, কলমদানি, ঝুড়ি, শিশুদের হরেক রকম খেলনা, ডালা, কুলা, ঘর সাজানোর নানা রকম শোপিসের চাহিদা ও জনপ্রিয়তা দেশ-বিদেশে ব্যাপক। বাণিজ্যিকভাবে বাঁশ ও বেতের হস্তশিল্প তৈরি করে স্বাবলম্বী হতে ইচ্ছুক নারী অথবা পুরুষ যে কেউ ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন হস্তশিল্প পণ্য বিভিন্ন শো-রুমে বা দোকানে সরবরাহ করে আয় করতে পারেন।
আবার নিজেরাও যৌথ উদ্যোগে সমিতি করে অর্থ সংগ্রহ করে অথবা ব্যাংক থেকে ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে বাঁশ-বেতের হস্তশিল্প বিক্রি করে অর্থ উপার্জন করতে পারেন। বাংলার কৃষ্টি, সংস্কৃতি, এতিহ্য, ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় বর্তমান বাংলাদেশে বাঁশ-বেতের হস্তশিল্পের মাধ্যমে কারিগররা সুনিপুণ চোখ ধাঁধানো কারুকার্যময় করে পণ্য বিক্রি করেন।
উপকরণ
কি ধরনের হস্তশিল্প তৈরি করা হবে তার ওপর উপকরণের পরিমাপ ও মাত্রা নির্ভর করে। তবে সাধারণত কিছু উপকরণ যে কোনো বাঁশ-বেতের হস্তশিল্প তৈরির ক্ষেত্রে খুব সাধারণ উপকরণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এর মধ্যে রয়েছে বাঁশ-বেতকে হস্তশিল্প উপযোগী করার জন্য টানিংমেশন। তবে এসব মেশিনের ক্রয়খরচ যারা বহনে অক্ষম তারা ধারালো দা দিয়েও বাঁশ-বেতকে হস্তশিল্প তৈরির উপযুক্ত করে তুলতে পারেন। বাংলাদেশে বার ধরনের বাঁশ পাওয়া যায়।
এর মধ্যে খুব শক্ত বা খুব নরম নয় এমন বাঁশ বাছাই করে বাঁশ-বেতের হস্তশিল্প তৈরির ক্ষেত্রে ব্যবহার করতে হবে। বাঁশ-বেতের হস্তশিল্প যাতে টেকসই থাকে, পোকায় কাটা থেকে রক্ষা করার জন্য রাসায়নিক বিভিন্ন এসিড রয়েছে। গাম বা আঠা, গুণা,কাগজ, রং-এর মতো উপকরণেরও প্রয়োজন হয়।
উৎপাদন খরচ
বাঁশ-বেতের হস্তশিল্পের ওপর প্রশিক্ষণ নিয়ে স্বাবলম্বী হতে ইচ্ছুক নর- নারীরা প্রাথমিক পর্যায়ে ১০০০ টাকার উপকরণ ক্রয় করে ব্যবসা শুরু করতে পারেন। পরবতীঁতে বাজারে ক্রেতা চাহিদা বাড়লে বাঁশ-বেতের উপকরণের পরিমাণ ও মাত্রা বাড়িয়ে বিভিন্ন দোকানে বা শো-রুমে তৈরি পণ্য সাপ্লাই দিতে পারেন। এক্ষেত্রে ১০০০ টাকা উৎপাদন খরচ করে ২০০০ থেকে ২৫০০ টাকা মুনাফা করা সম্ভব।
প্রশিক্ষণ
বর্তমানে বাঁশ-বেতের হস্তশিল্প প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের সংখ্যা সীমিত। সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ ক্ষুদ্রও কুটিরশিল্প কপোরেশন (বিসিক)-এর আওতায় শুধু রাজধানী ঢাকায় বাঁশ-বেতের হস্তশিল্পের ওপর প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। এছাড়া ব্র্যাক, কারিতাসের মতো বড় বড় এনজিওর উদ্যোগেও বাঁশ-বেতের হস্তশিল্পের ওপর প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। বিসিকের প্রশিক্ষণ বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জানতে চাইলে সমর মুজমদার জানান, বিসিকের অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে। বাহ্যিকভাবেও বিসিকের কার্যালয়ের বাইরে প্রশিক্ষক প্রেরণ করেও হস্তশিল্প শিখতে আগ্রহীদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। তবে স্বাবলম্বী হতে ইচ্ছুক নারী বা পুরুষদের একজোট হয়ে হস্তশিল্প প্রশিক্ষণ নেয়ার জন্য আবেদন করতে হয়। প্রতি মাসে প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে প্রশিক্ষণ নেয়ার জন্য ৫০০ টাকা করে দিতে হয়। এছাড়া ব্যক্তিগত পর্যায়েও অনেক প্রশিক্ষক বাঁশ-বেতের হস্তশিল্পের উপর শিক্ষার্থীদের হস্তশিল্পের উপর প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন