চার
আনাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ স. বলেছেন, সব খরচ আল্লাহর পথে খরচ বলে গণ্য হবে কেবল বাড়ির জন্য খরচ ব্যতীত। তাতে কোন কল্যাণ নেই। ‘‘ইমাম তিরমিযী, আল-জামি‘, অধ্যায় : সিফাতুল কিয়ামাহ ওয়ার রাকায়িক ওয়ার ওরা‘, প্রাগুক্ত, হাদীস নং- ২৩৪১; হাদীসটির সনদ য‘ঈফ।’’
আব্দুল্লাহ ইবন ওমর রা. থেকে বর্ণিত, নবী স. বলেছেন, তোমরা বাড়ি-ঘর নির্মাণে হারাম থেকে বিরত থাকো। কারণ তা সর্বনাশের মূল ভিত্তি। ‘‘ইমাম বায়হাকী, শু‘আবুল ঈমান, প্রাগুক্ত, হাদীস নং- ১০৭২২; আল্লামা মুনাবী আল-জামি‘উস সাগীরের শরাহয় বলেন, ইবনুল জাওযী বলেন, হাদীসটি সহীহ নয়। খ. ১, পৃ. ৫৭।’’ ইবন হাজার আল আসকালানী রহ. বলেন, যে সব বাড়িঘর বসবাসের জন্য প্রয়োজন নয়, যা মানুষকে ঠাণ্ডা গরম থেকে বাঁচায় না, সে সব বাড়ি-ঘরের ক্ষেত্রেই হাদীসগুলোর উর্পযুক্ত বক্তব্যগুলো প্রযোজ্য। আনাস রা. থেকে একটি মারফু হাদীসে বর্ণিত আছে, ‘সব বাড়ি-ঘর তার মালিকের জন্য ক্ষতিকর বলে পরিগণিত হবে, তবে যা তার বসবাসের জন্য আবশ্যক তা ব্যতীত।
তিনি আরো বলেন, দাউদীর কথা থেকে প্রতীয়মান হয় যে, সব রকমের বাড়ি-ঘর নির্মাণ করা পাপ। আসলে ব্যাপার কিন্তু তা নয়। বরং এ ক্ষেত্রে কিছু বিস্তারিত ব্যাখ্যা রয়েছে। যেসব বাড়ি-ঘর প্রয়োজনের অতিরিক্ত, তা সবই নির্মাণ করা পাপ নয়। বরং এরূপ কিছু কিছু বাড়ি-ঘর নির্মাণ করা ছাওয়াবের কাজ। যেমন যে বাড়ি-ঘর দ্বারা নির্মাতা ছাড়া অন্যরাও উপকৃত হয় তা দ্বারা নির্মাতা ছাওয়াব পাবেন। আল্লাহ তা‘আলাই ভাল জানেন। ‘‘ইবন হাজার আসকালানী, ফাতহুল বারী, প্রাগুক্ত, খ. ১১, পৃ. ৯৩।’’
শেখ আব্দুর রহমান আল-বান্না এসব হাদীসের উপর টীকা লিখতে গিয়ে বলেন, ‘এই অভিসম্পাত তাদের উপর অর্পিত হবে যারা দুনিয়াতে চিরস্থায়ীভাবে থাকার আশায় বা অহঙ্কার প্রকাশের জন্য বা গরিব-দু:খী মানুষের সামনে বড় লোক বলে জাহির করার জন্য বা যারা দুনিয়াতে চিরদিন থাকার চেষ্টা করে, তাদের সাদৃশ্য ধারণের জন্য বাড়ি-ঘর নির্মাণ করে তাদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হবে। যারা এরূপ করে তাদের নিন্দা করে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, আর তোমরা সুদৃঢ় প্রাসাদ নির্মাণ করছ, যেন তোমরা স্থায়ী হবে।’’ ‘‘আল-কুরআন, ২৬ : ১২৯।’’
শেখ মুহাম্মদ আল-গাযালী বলেন, ‘যদি এসব হাদীসের বাহ্যিক অর্থ গ্রহণ করা হত; তাহলে কোন শহর-নগর ও গ্রাম গড়ে উঠত না। মানুষ ঝুপড়িতেই বসবাস করত। যেখানে তারা বিনা কষ্টে সতর ঢাকতে পারত না। সত্য কথা হলো: এসব হাদীস যারা নিজেদেরকে ধনী হিসেবে প্রকাশের জন্য বা গর্ব-অহঙ্কার প্রকাশের জন্য বা বড়লোক বলে জাহির করার জন্য বাড়ি-ঘর করে তাদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। নি:সন্দেহে অট্টালিকা নির্মাণ বৈধ। ‘‘সায়্যিদ সাবিক, দাওয়াতুল ইসলাম, বৈরূত : দারুল ফিকর, তা. বি., পৃ. ৩৬।’’
অতএব, উচ্চ অট্টালিকা নির্মাণ ও তা কারুকার্যময় করা এবং তার সৌন্দর্য দেখে আনন্দ উপভোগ করা ইসলামের দৃষ্টিতে অবৈধ নয়; বৈধ। বরং তা কাঙ্খিত বিষয়ে পরিণত হয়, যদি অহঙ্কার প্রকাশ বা নিজেকে বড়লোক বলে জাহির না করে নির্মাণ করা হয়। এ কারণেই রাসূলুল্লাহ স.-এর কোনো কোনো সাহাবীও বিনা দ্বিধায় অট্টালিকা ও প্রাসাদ নির্মাণ করেছিলেন। সা’দ ইবন আবু ওয়াক্কাস রা. বসরায় একটি অট্টালিকা তৈরি করেছিলেন। সা’দ ইবন আবু ওয়াক্কাস রা. বসরার গভর্নর ছিলেন। তিনি এ অট্টালিকা নির্মাণের পর বলেন, এ অট্টালিকা তো লোকদেরকে আমার নিকট থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে! এ সংবাদ ওমর রা. শুনার পর তিনি মুহাম্মদ ইবন মাসলামাকে বসরায় পাঠান এবং তাকে আদেশ দেন, যেন তিনি বসরায় পৌঁছে বাড়িটিতে আগুন লাগিয়ে দেন। তখন তিনি বসরা গিয়ে বাড়িটি আগুন লাগিয়ে দিয়ে পুড়িয়ে ফেলেন। আল্লামা ইবন তাইমিয়ার মতে, ওমর রা. এ কাজটি করেছিলেন অট্টালিকা তৈরি ইসলামে নিষিদ্ধ বলে নয়, বরং তিনি তা করেছিলেন একজন গভর্নর জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছেন বলেই। কারণ তিনি চাননি তার কোন গভর্নর জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে জনগণের দু:খ-দুর্দশা না দেখে দায়িত্ব পালন করুক। ‘‘ইমাম ইবনু তায়মিয়াহ, আল-ফাতাওয়া আল কুবরা, বৈরূত : দারুল মা‘রিফাহ, ১৩৮৬ হি., মাজমু ফাতাওয়া ইবন তাইমিয়া, খ. ৫, পৃ. ১১৮।’’ সাহাবীদের পরে তাবি‘য়ী, তাবে-তাবি‘য়ী ও আইম্মায়ে মুজতাহিদীনের যুগে এব তার পরবর্তী যুুগেও মুসলিমরা পৃথিবীর সর্বত্র নির্দ্বিধায় অট্টালিকা ও প্রাসাদ নির্মাণ করেছেন। দুর্গ গড়ে তুলেছেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন