সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি কারিগরি শিক্ষার চাহিদা দিন দিনই বাড়ছে। পড়াশোনার পাশাপাশি চাকরির সুযোগ থাকায় শিক্ষার্থীরা ক্রমশই ঝুঁকে পড়ছে কারিগরি শিক্ষার দিকে। নিজে সাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি যোগ্যতাসম্পন্ন হয়ে উঠছেন সমাজে।
বাংলাদেশের বিভিন্ন ভোকেশনাল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছাড়াও বেশ কিছু জায়গায় কারিগরি শিক্ষার সুযোগ রয়েছে। স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদি এসব কোর্স করে আপনি হয়ে উঠতে পারেন একজন কর্মঠ মানুষ।
রাজধানীর শ্যামলিসহ বেশ কিছু জায়গায় রয়েছে কারিগরি শিক্ষার প্রতিষ্ঠান। টেকনিক্যাল কাজ শেখানো থেকে শ্যামলির পাশেই টেকনিক্যাল স্থানের নামকারণ করা হয়েছে। কারিগরি শিক্ষায় আগ্রহীদের জন্য অটোমোবাইলে ক্যারিয়ার বিষয়ক এবারের প্রতিবেদনটি সাজিয়েছেন আরিফ চৌধুরী শুভ।
ঢাকার শ্যামলী টেকনিক্যালে অবস্থিত বাংলাদেশ কোরিয়া টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার (বিকেটিটিসি)। অটোমোবাইলের উপর শত শত শিক্ষার্থী এখান থেকে ট্রেনিং নিয়ে দেশে ও দেশের বাইরে বর্তমানে কর্মরত আছেন। তাছাড়া শান্তি মিশনে যাওয়ার আগে বাংলাদেশ পুলিশ, সেনাবাহিনীর সদস্যরা এখান থেকে ট্রেনিং নিতে আসেন। অটোমোবাইলের উপর এখান থেকে আপনিও ক্যারিয়ার গড়তে পারেন।
কখন ভর্তি হতে পারবেন?
বছরে দুই বার ভর্তি বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয় এখানে। জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত এবং জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত। ভর্তিকৃত শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন লেবেল শেষ করার পর যোগ্যতা সনদ প্রদান করা হয়। তবে কোর্স ছাড়াও বিভিন্ন খ-কালীন ট্রেনিং নিতে পারেন।
তিনটি ক্রাইটেরিয়ায় অটোমোবইলে শিক্ষার্থী ভর্তি করানো হয় বাংলাদেশ কোরিয়া টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার (বিকেটিটিসি) এ।
৬ মাসের কোর্স
অটোমোবাইলের উপর হালকা ট্রেনিং নিয়ে গ্যারেজে কাজ করার জন্য তৈরি হতে ন্যূনতম ৬ মাসের একটি কোর্স করতে পারেন। বয়সের কোন মাপকাঠি এই কোর্সের জন্য বাধ্যতামূলক নয়। এই কোর্সে ভর্তি হওয়ার জন্য অষ্টম শ্রেণী পাস হলে ভালো হয়। তাছাড়া কর্মজীবী পুরুষ, কিংবা ড্রপআউটরাও ভর্তি হতে পারবেন। কোর্স শেষ করার পর সেমি স্কিল টেকনিশিয়ান হিসেবে অটোমোবাইল গ্যারেজে চাকরি করতে পারবেন। অভিজ্ঞতার ফলে ধীরে ধীরে লেভেল পরিবর্তন করে ৬ লেভেলের অভিজ্ঞ টেকনিশিয়ানও হতে পারবেন।
১ বছরের কোর্স
অটোমোবাইলে আরেকটু ভালো করতে চাইলে ১ বছরের কোর্সে ভর্তি হতে হবে। তবে এক্ষেত্রে ন্যূনতম যোগ্যতা এসএসসি পাস বাধ্যতামূলক এবং বয়স সর্বোচ্চ ১৮-এর মধ্যে হতে হবে। কোর্স শেষে জুনিয়র টেকনিশিয়ান হিসেবে যেকোন কারখানায় বা ওয়ার্কশপে যোগদান করতে পারেন।
২ বছরের কোর্স
সবচেয়ে লম্বা কোর্স হলো ২ বছরের। যারা এই কোর্সে ভর্তি হবেন তারা যেকোন স্বীকৃতধারী প্রতিষ্ঠান থেকে জেএসসি বা জেডিসি পাস করে ভর্তি হতে হবে। অন্যান্য কোর্স থেকে এই কোর্সের সুবিধা হলো ২ বছর পর কোর্স সম্পন্ন হওয়ার সাথে সাথে একটি জেনারেল সার্টিফিকেট পাবে এবং উচ্চ মাধ্যমিকে পড়ার সময় চাকরির একটি সুযোগ তৈরি হবে। এখান থেকেও উচ্চ শিক্ষা নেওয়ার সুযোগ আছে।
কেমন চাহিদা অটোমোবাইল টেকনিশিয়ানদের?
২ বছর মেয়াদি টেকনিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারদের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে বর্তমান দেশ-বিদেশের চাকরির বাজারে। বিভিন্ন গ্যারেজ, নাভানা, র্যাংন্স, ইউনিলিভারে প্রতিবছর প্রচুর টেকনিশিয়ান নিয়োগ দেওয়া হয়। তাছাড় ৬ মাস ও ১ বছর মেয়াদি যারা তারা চাকরি পেতে তেমন একটা কষ্ট করতে হয় না।
টাঙ্গাইলের জান্নাতুল নাঈম পড়ছেন ২ বছর মেয়াদি অটোমোবাইল কোর্সে, পাশাপাশি চাকরি করছেন একটি এনজিওতে। বিকেটিটিসিতে ভর্তি হওয়ার কারণ একটাই সেটি হলো অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলো খুঁজে সে যেটা দেখতে পেয়েছে তা হলো প্রচুর যন্ত্রপাতির সরবরাহ আর ভালো শিক্ষক রয়েছেন এখানে।
চট্টগ্রামের ইমরুল কায়েস বললেন, সাধারণ শিক্ষায় চাকরি না মিললেও কারিগরি শিক্ষায় চাকরি ও সনদ দুটোই পাওয়া যায়। বেকার থাকার চেয়ে কর্মের পাশাপাশি একটি সনদও পাচ্ছি আমরা।
বাংলাদেশ কোরিয়া টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টারের অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টের চেয়ারম্যান মির্জা খালেদ হোসেন অটোমোবাইলে ক্যারিয়ার নিয়ে ক্যারিয়ার প্রতিবেদককে বলেন, পেশাদারিত্ব অর্জন করতে হলে কোন ওয়ার্কশপ নয়, বরং শিক্ষার্থীকে প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে শিক্ষার কোন বিকল্প নেই। তাই লক্ষ্য যদি হয় অটোমোবাইলে ক্যারিয়ার তাহলে একটু কষ্ট হলেও একটি ভালো প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের ভর্তি হওয়া উচিত। তার মতে, শিক্ষার্থীদের জন্য আদর্শ অটোমোবাইল প্রশিক্ষণের জন্য যেটি দরকার তা হলো প্রচুর যন্ত্রপাতি ও ভালো মানের শিক্ষক। বাংলাদেশ কোরিয়া টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টারে দুটোই পর্যাপ্ত।
সময়ের সাথে পাল্টে যাচ্ছে গাড়ির ইঞ্জিন। নতুন নতুন ইঞ্জিন সংগ্রহ করে সেগুলো সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দানে পিছিয়ে নেই বিকেটিটিসি। তাই ভালো মানের প্রতিষ্ঠানে যেন আপনার অটোমোবাইল ক্যারিয়ার যাত্রা শুরু হয় সেজন্য খোঁজ নিতে পারেন অটোমোবাইলের প্রতিষ্ঠানগুলোতে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন