স্টাফ রিপোর্টার : ‘উৎপাদন থেকে পণ্যভোগ, শিশুশ্রম বন্ধ হোক’ এ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে গতকাল (১২ জুন) বাংলাদেশসহ বিশ্বের ৮০টি দেশে বিশ্ব শিশুশ্রম প্রতিরোধ দিবস পালন করা হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও), জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে শিশু অধিকার নিয়ে কাজ করে এমন বেসরকারি সংস্থাগুলোর নানা কর্মসূচি পালন করেছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো পরিচালিত ‘জাতীয় শিশু শ্রম জরিপ ২০১৩’ অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রায় ৩৪ লাখ ৫০ হাজার শিশু বিভিন্ন শ্রমে নিয়োজিত। এর মধ্যে প্রায় ১২ লাখ ৮০ হাজার শিশু বিভিন্ন ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত। অপরদিকে আইএলও’র সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বিশ্বের প্রায় ১৬ কোটি ৮০ লাখ শিশু নানাভাবে শ্রম বিক্রি করছে। এদের মধ্যে প্রায় সাড়ে ৮ কোটি শিশু ঝুঁকিপূর্ণ পেশায় নিয়োজিত।
শিশু শ্রম নিরসনে ৩৮টি ঝুঁকিপূর্ণ শ্রম নির্ধারণ করে ২০২১ সালের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ শিশু শ্রম বন্ধের অঙ্গিকার করেছে বাংলাদেশ সরকার। এ অঙ্গিকার বাস্তবায়নে শ্রমজীবী শিশুদের কারিগরি প্রশিক্ষণ দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ পেশা থেকে সাধারণ শ্রমে নিযুক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়।
শিশু অধিকার সুরক্ষা ও ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম প্রতিরোধের লক্ষ্যে ১৯৮৯ সালের ২০ নভেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ‘জাতিসংঘ শিশুঅধিকার সনদ’ অনুমোদিত হয়। ১৯৯২ সালে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) শিশুশ্রম বন্ধ করতে এক কর্মসূচি হাতে নেয়। আর ২০০২ সাল থেকে বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যদিয়ে দিবসটি পালন করছে আন্তর্জাতিক শিশুশ্রম সংস্থা (আইএলও)।
শ্রম মন্ত্রণালয়ের হিসাব মতে, দেশে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করে ১৩ লাখ শিশু। এসব শিশুকে শ্রমে নিয়োগের ব্যাপারে ব্যাপক বিধিনিষেধ রয়েছে। তবে পারিপাশ্বিক অবস্থা ও পরিস্থিতি বিবেচনা করে শর্তসাপেক্ষে জাতীয় শিশুশ্রম নিরসন নীতিতে শিশুদের শ্রমে নিয়োগের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। সে ক্ষেত্রে শিশুদের কাজ করার জন্য অনুকূল কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার কথা বলা হলেও বাস্তবে সেসব শর্তের সম্পূর্ণ উল্টো চিত্র লক্ষ্য করা গেছে অনেক কারখানায়।
পুরান ঢাকার ট্যানারি কারখানাগুলোতে শিশুরা ভয়াবহ পরিবেশে কাজ করছে। মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধের কয়েকটি লোহার কারখানায় দেখা গেছে, শিশুদের দিয়ে ভারি লেদ মেশিনে কাজ করানো হচ্ছে। কর্মঘণ্টা এবং দৈনিক কর্মতালিকার কোন বালাই নেই সেখানে। সপ্তাহে একদিন ছুটির ব্যবস্থা থাকলেও চাকরিচ্যুত করার আগে কোন নোটিস দেওয়া হয় না। এছাড়া কর্মস্থলে তারা বড়দের দ্বারা নানাভাবে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।
শিশুশ্রম বন্ধে বাংলাদেশে বেশকিছু আন্তর্জাতিক ও জাতীয় বেসরকারি সংস্থা কাজ করছে। এর মধ্যে রয়েছে ইউনিসেফ, বাংলাদেশ শিশুঅধিকার ফোরাম, বাংলাদেশ শ্রম ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান, আইন ও শালিস কেন্দ্র, ওয়ার্ল্ড ভিশন, সিএসআইডি, অপরাজেয় বাংলাদেশ, তরঙ্গ, শাপলানীড়, ইডুকো, কোয়ালিশন ফর আরবান পুওর, ডন ফোরাম, তেরেদেশ নেদারল্যান্ড।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন