বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১, ২১ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

আর কবে রাজধানী বর্জ্যমুক্ত হবে

প্রকাশের সময় : ৩১ জানুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

রাজধানীকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা নিয়ে দুই সিটি করপোরেশনের মেয়রদ্বয়ের অনেক পরিকল্পনার কথা নগরবাসী শুনেছে। এখনও মেয়রদ্বয় তাদের পরিকল্পনার কথা অবিরত বলছেন এবং নগরবাসীও শুনছে। বাস্তবে মেয়রদ্বয়ের কোনো পরিকল্পনাই যে রাজধানীর ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করতে পারছে না, তা নগরবাসীর দুর্ভোগের মধ্য দিয়েই প্রকাশিত হচ্ছে। রাজধানী বরাবরের মতোই বর্জ্যনগরী হিসেবে রয়ে গেছে। দিন দিন নগরী একটি বিশাল ভাগাড়ে পরিণত হচ্ছে। যেখানে-সেখানে, যত্র-তত্র আবর্জনার স্তূপ এবং তার দুর্গন্ধে নগরবাসীর শ্বাস নেয়ার উপায় নেই। রোগ-জীবাণু ছড়িয়ে পড়ায় তারা নানা ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছেন। এ নিয়ে দুই সিটি করপোরেশনের কোনো মাথাব্যথা আছে বলে প্রতীয়মাণ হচ্ছে না। মাথাব্যথা থাকলে কিঞ্চিত হলেও পরিস্থিতির উন্নতি হতো। গতকাল দৈনিক ইনকিলাবে প্রকাশিত রিপোর্টে যে তথ্য উঠে এসেছে, তাতে দেখা যায়, রাজধানীর ময়লা-আবর্জনার যে চিত্র অতীতে ছিল, এখনও তাই রয়েছে। প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, রাস্তাঘাট, অলিগলি, আবাসিক, বাণিজ্যিক এলাকাসহ এমন কোনো এলাকা নেই যেখানে আবর্জনার স্তূপ নেই। ঘর থেকে বের হলেই দুর্গন্ধযুক্ত বায়ু নাকে এসে লাগে। জনসচেতনতার অভাব এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অবহেলা ও অব্যবস্থাপনায় এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। রাজধানীর এই চিত্র বহু বছরের পুরনো হলেও নগরবাসী নিশ্চিতভাবেই আশা করেছিল, নতুন মেয়রদ্বয় তাদের প্রতিশ্রুতি মোতাবেক পুরনো এই চিত্র বদলে দেবেন। তাদের সে আশায় যে গুড়ে বালি পড়েছে এবং আশা ক্রমান্বয়ে দুরাশায় পরিণত হচ্ছে, তা বোধকরি বিস্তারিত ব্যাখ্যা করে বলার অবকাশ নেই। তাদের এখন একটাই প্রশ্ন আর কবে রাজধানী বর্জ্যমুক্ত হবে?
কারো অজানা থাকার কথা নয় যে, যুক্তরাজ্যের দ্য ইকোনমিস্ট পত্রিকার ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের করা জরিপে ঢাকা একাধিকবার বিশ্বের মধ্যে বসবাসের সবচেয়ে অযোগ্য এমনকি অসভ্য নগরী হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। এই কুখ্যাতি থেকে মুক্তি লাভের আশা নিয়েই নগরবাসী অপেক্ষা করছে। কেউই আশা করে না, মেয়রদ্বয় রাতারাতি এই কুখ্যাতি মুছে ঝকঝকে তকতকে নগরী উপহার দেবেন। তবে প্রত্যেকে অন্তত এ আশাটুকু করেছেন, তারা যে ‘ক্লিন সিটি, গ্রীণ সিটি’র শ্লোগান দিয়েছেন তা যৎসামাণ্য হলেও দৃশ্যমাণ হোক। দুঃখের বিষয়, নগরবাসী তার ছিটেফোটাও দেখতে পাচ্ছে না। তারা দেখেছে, মেয়রদ্বয় ঝাড়– হাতে রাস্তায় নেমেছেন। ঢাকা দক্ষিণের মেয়র তো বিভিন্ন অঙ্গনের তারকাদের নিয়ে ঝাড়– হাতে প্রায় নিয়মিত রাস্তায় নামছেন। তার চিত্র পত্র-পত্রিকায়ও প্রকাশিত হচ্ছে। প্রশ্ন হচ্ছে, নগরবাসী কি এর কোনো ফল পাচ্ছে? ময়লা-আবর্জনা তো রয়েই যাচ্ছে। রাজধানী পরিষ্কার হচ্ছে না। জনসচেতনতা সৃষ্টিতে ঝাড়– হাতে তারকাদের নিয়ে পরিচ্ছন্ন অভিযানে নামা যেতেই পারে। তবে তার আগে যদি আবর্জনা পরিষ্কারে সিটি করপোরেশনের নিয়মিত কর্মকা- দক্ষ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সচল করা যেতো, তাহলে অধিক কার্যকর ফল পাওয়া হতো। নগরবাসী আরও সচেতন হতো। নগরবাসী দেখছে, রাজধানীতে প্রতিদিন গড়ে যে সাড়ে চার হাজার মেট্রিক টন বর্জ্য উৎপাদিত হচ্ছে, যার ৪০ ভাগই সিটি করপোরেশন পরিষ্কার করতে পারছে না। যে ৬০ ভাগ বিভিন্ন ট্রাকের মাধ্যমে পরিষ্কার করছে, সেগুলোও দিনে দুপুরে পুরো সড়কজুড়ে ফেলতে ফেলতে নিয়ে যাওয়া হয়। এ যেন গোঁদের উপর বিষফোঁড়া হয়ে দাঁড়ায়। অথচ নিয়ম রয়েছে, ভোরের আলো ফোটার আগেই আবর্জনা পরিষ্কার করা। নগরবাসী যেন ঘর থেকে বের হয়েই পরিচ্ছন্ন পরিবেশ দেখতে পায়। নগরবাসীর এ আশা কখনোই পূরণ হয়নি এবং হচ্ছেও না। নগরীতে যে শুধু গৃহস্থলীর বর্জ্যই উৎপাদিত হচ্ছে, তা নয়। ভয়াবহ বিষাক্ত ক্লিনিক্যাল বর্জ্যও উৎপাদিত হচ্ছে। জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর এসব বর্জ্য আলাদাভাবে ফেলা ও অপসারণের কথা থাকলেও তা করা হচ্ছে না। সাধারণ বর্জ্যরে সাথে মিশিয়ে একাকার করে ফেলা হচ্ছে। এতে নগরবাসীকে নীরবেই মরণব্যাধিতে আক্রান্ত হতে হচ্ছে। বৃষ্টি হলে পরিস্থিতি কি দাঁড়ায় তা বোধকরি ব্যাখ্যা করার অপেক্ষা রাখে না। পরিস্থিতি এখন এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে, ময়লা-আবর্জনা ফেলার নির্দিষ্ট স্থান বলে কিছু নেই। যেখানে-সেখানেই ফেলা হচ্ছে। আবার আবর্জনা ফেলার এমন জায়গা নির্দিষ্ট করা আছে, যেগুলো রাজপথ থেকে শুরু করে বিভিন্ন মার্কেট, স্কুল-কলেজ ও হাসপাতালের সামনে রয়েছে। এমনকি অভিজাত এলাকা বলে খ্যাত গুলশান, বনানী, বারিধারাও এ চিত্রের বাইরে নয়। এসব ময়লা ফেলার বিশাল ট্যাংকার পরিবেশ দূষণ তো করছেই, ভয়াবহ যানজটও সৃষ্টি করে চলেছে। কোনো সভ্য নগরীতে ময়লা-আবর্জনার এমন চিত্র কল্পনাও করা যায় না। অভিযোগ যখন করা হয়, তখন সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে চিরায়ত একটি ব্যাখ্যাই দেয়া হয়। ব্যাখ্যাটি হচ্ছে, পর্যাপ্ত জনবল ও যন্ত্রপাতির অভাব। বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে, বছরের পর বছর ধরে এই অজুহাতই দেয়া হচ্ছে। অথচ সরকার বহু বড় বড় প্রকল্পে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে ফেলছে, আর রাজধানীকে বর্জ্যমুক্ত করে পরিচ্ছন্ন করতে প্রয়োজনীয় লোকবল নিয়োগ ও যন্ত্রপাতি কিনতে পারছে না! এটাও কি বিশ্বাস করতে হবে?
অবৈধ স্থাপনা ও ফুটপাত থেকে হকার উচ্ছেদ করে ফুটপাত মুক্ত করার মেয়রদ্বয়ের উদ্যোগ ইতোমধ্যে প্রশংসিত হয়েছে। তবে ফুটপাতের সø্যাব উঠে থাকা এবং তার পাশে জমে থাকা ময়লা-আবর্জনা যে মানুষের চলাচল বিঘিœত করছে, এ বিষয়টিও দেখা দরকার। আমরা মনে করি, কেবল মুখে মুখে ‘ক্লিন সিটি, গ্রীণ সিটি’র কথা না বলে অবিলম্বে পুরোদমে এর বাস্তবায়ন কাজ শুরু করা উচিত। লোকবল ও যন্ত্রপাতির এ অজুহাত নগরবাসী আর শুনতে চায় না। তারা চায় বুক ভরে সজীব নিঃশ্বাস নিতে। দূষিত পরিবেশ থেকে মুক্ত হয়ে সুস্থভাবে জীবনযাপন করতে। রাজধানীর ময়লা-আবর্জনার মুক্ত করা এমন কোনো কঠিন বিষয় নয়। প্রয়োজন শুধু সুষম ও কার্যকর পরিকল্পনা এবং তার বাস্তবায়ন। মেয়রদ্বয় যদি তাদের ওয়ার্ডভিত্তিক কাউন্সিলরদের নিজ নিজ এলাকা পরিচ্ছন্ন রাখার তাকিদ ও জবাবদিহির ব্যবস্থা করতে পারেন, তবে রাজধানী বর্জ্যমুক্ত করা অনেকটাই সহজ হয়ে যাবে। বর্জ্য অপসারণে কাউন্সিলরদের দায়িত্ব পালনের বিষয়টি দৃশ্যমান করে তোলার পাশাপাশি সিটি করপোরেশনকে সব ধরনের পদক্ষেপ নিতে হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন