রাত পোহালেই সিলেট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির নির্বাচন। নির্বাচন নিয়ে তোড়জোড় চলছে ব্যাপক। প্রার্থীরা ব্যস্ত শেষ মুর্হতের প্রচারনা ও নানামুখী সমীকরনে বিজয় নিশ্চিতে। এদিকে, নির্বাচনে পরিবারতন্ত্রকে বয়কট করার আহবান জানিয়েছে সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদ। একটি আধুনিক ব্যবসায়ী বান্ধব চেম্বারের নেতৃতের¡ প্রত্যাশায় ভোট না দেওয়ার আহবান জানান ব্যবসায়ী পরিষদ। অভিযোগ আছে, বিগত দিনে ভোট জালিয়াতি ও পকেট ভোটের মাধ্যমে জামায়াত-বিএনপি চক্র ২০০২ সাল থেকে এই প্রতিষ্ঠানকে পরিবারতান্ত্রিকভাবে পরিচালনা করে আসছে । এর ফলে নির্বাচনকালীন তড়িগড়ি করে বেড়ে যায় প্রতিষ্ঠানের ভোটার সংখ্যা। স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে সাক্ষর জাল, ভুয়া ভোটার তালিকাসহ নানা অনিয়মে অভিযুক্ত হয় সিলেট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি। এভাবে এক ইউনিয়নের ট্রেড লাইসেন্সে ৪শ‘ ভোটারও করা হয়েছে। একদিনে ৬শ’ জনকে ভোটার করারও নজির রয়েছে সিলেট চেম্বারে । যে কারণে বিগত সময়ে বারবার প্রতিষ্ঠানটিকে যেতে হয়েছে আদালতে। আদালত গড়িয়ে কাল (শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর) সিলেট চেম্বারের দ্বি-বার্ষিক মেয়াদের নির্বাচন।
এদিকে, নির্বাচন আয়োজনের সব প্রস্তুতি চুড়ান্ত করেছে নির্বাচনী পরিচালনা বোর্ড। ১৯ সেপ্টেম্বর নির্বাচনের প্রিজাইডিং ও পোলিং অফিসারদের সাথে নির্বাচন বোর্ডের প্রস্তুতিমূলক সভা অনুষ্টিত হয়েছে। প্রিজাইডিং ও পোলিং অফিসারদের ভোট গ্রহণের পদ্ধতি, ভোট গণনা ও অন্যান্য বিষয়াদি সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে অবহিত করেন এবং তাদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। সিলেট চেম্বারের প্রশাসক আসাদ উদ্দিন আহমদ, আপীল বোর্ডের চেয়ারম্যান এডভোকেট এ কে এম শমিউল আলম, নির্বাচন বোর্ডের সদস্য এডভোকেট সৈয়দ শামীম আহমদ, এডভোকেট মোঃ জুনেল আহমদ, আপীল বোর্ডের সদস্য হারুন আল রশিদ দীপু এবং প্রিজাইডিং অফিসার ও পোলিং অফিসারগণ। নির্বাচনে ভোটার সংখ্যা ২ হাজার ৪৬৫ জন। আর পরিচালনা পরিষদের ২২টি পদে প্রার্থী হয়েছেন ৪১ জন। এর মধ্যে প্রতিদ্বনিদ্ব না থাকায় টাউন এসোসিয়েশন থেকে শমসের জামালকে প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত ঘোষনা করেছে নির্বাচন পরিচালনা বোর্ড ।
জানা যায়, ‘সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদ’ ও ‘সিলেট ব্যবসায়ী পরিষদ’ এই দুই ব্যানারে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে ব্যবসায়ীদের দুটি বলয়। এই দুই প্ল্যাটফরমের প্রার্থীরা তফসিল ঘোষণার পর থেকেই প্রচার প্রচারণা শুরু করেন। ভোটারদের বাড়ি বাড়ি যাওয়া, মতবিনিময় সভার আয়োজনের মাধ্যমে নিজেদের প্রচারণা চালাচ্ছেন প্রার্থীরা। চেম্বারের সাবেক অনেক নেতাও ভিড়ছেনে এসব প্যানেলের সাথে। নিজেদের পছন্দের প্যানেলের পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছেন তারা। সবমিলিয়ে সিলেটের ব্যবসায়ীদের মধ্যে এখন বিরাজ করছে নির্বাচনী আমেজ। ইতোমধ্যো নিজেদের নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছে প্রতিদ্বনিদ্ব দুই গ্রুপ। নির্বাচনী প্রচারণায় উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করলেও রয়েছে পারষ্পারিক অভিযোগও। ‘সিলেট ব্যবসায়ী পরিষদ’এর বিরুদ্ধে চেম্বারে পরিবারতন্ত্র কায়েমের অভিযোগ করেছেন ‘সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদ’এর প্রার্থীরা। তাদের অভিযোগ, দুটি পরিবার থেকেই এই প্যানেলের বেশিরভাগ প্রার্থী দেওয়া হয়েছে। এই দুই পরিবারের একাধিক সদস্য এর আগেও সিলেট চেম্বারের শীর্ষ পদে ছিলেন। তবে ‘সিলেট ব্যবসায়ী পরিষদ’এর নেতারা বলছেন, কেউ জোর করে চেম্বার দখল করছে না। সবাই ভোটে দাঁড়িয়েছে। ভোটাররা যাদের যোগ্য মনে করবে তাদের নির্বাচিত করবে। সিলেট চেম্বারেরর পরিচালক পদে অর্ডিনারি ক্যাটাগরিতে সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদে প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন আবু তাহের মো. শোয়েব, মো. মামুন কিবরিয়া সুমন, এনামুল কুদ্দুস চৌধুরী, মুকির হোসেন চৌধুরী, হুমায়ন আহমদ, মো. ফারুক আহমদ, মো. নজরুল ইসলাম, জুবায়ের রকিব চৌধুরী, আক্তার হোসেন খান, আব্দুল হাদি পাবেল, শহীদ আহমদ চৌধুরী ও মোহাম্মদ আব্দুস সালাম। অ্যাসোসিয়েট ক্যাটাগরিতে প্রার্থী হয়েছেন মাসুদ আহমদ চৌধুরী, মো. এমদাদ হোসেন, পিন্টু চক্রবর্তী, আব্দুর রহমান, চন্দন সাহা, মো. আতিক হোসেন। আর সিলেট ব্যবসায়ী পরিষদে প্রার্থী হয়েছেন এহতেশামুল হক চৌধুরী, সাহিদুর রহমান, ফালাহ উদ্দিন আলী আহমদ, মুশফিক জায়গিরদার, আব্দুর রহমান জামিল, খন্দকার ইসরার আহমদ রকী, শফিকুল ইসলাম, শান্ত দেব, আব্দুস সামাদ, খলিলুর রহমান চৌধুরী, ফখর উছ সালেহীন নাহিয়ান এবং আলীমুল এহছান এহছান চৌধুরী। এদিকে, সিলেট চেম্বারের নির্বাচন উপলক্ষ্যে বুধবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। চেম্বার হল রুমে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচন বোর্ডের চেয়ারম্যান এডভোকেট মো. নাসির উদ্দিন খান বলেন, ২১ সেপ্টেম্বর নগরীর ধোপাদীঘিরপাড়স্থ ইউনাইটেড কমিউনিটি সেন্টারে সকাল ৯ ঘটিকা থেকে বিকাল ৪ ঘটিকা পর্যন্ত একটানা ভোট গ্রহণ চলবে এবং ভোট গণনা শেষে ঐদিনই নির্বাচনের প্রাথমিক ফলাফল ঘোষণা করা হবে। তিনি জানান, এবারের নির্বাচনে ভোটার সংখ্যা সর্বমোট ২,৪৬৫ জন। যার মধ্যে অর্ডিনারী ১৪১৩ জন, এসোসিয়েট ১০৪০ জন, ট্রেড গ্রুপ ১১ জন ও টাউন এসোসিয়েশন ১ জন। এবছর পরিচালনা পরিষদের ২২টি পদে সর্বমোট ৪১ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন, যার মধ্যে অর্ডিনারী শ্রেণী থেকে ২৪ জন, এসোসিয়েট শ্রেণী থেকে ১০ জন এবং ট্রেড গ্রুপ শ্রেণী থেকে ৬ জন প্রার্থী রয়েছেন। এসময় সিলেট চেম্বারের প্রশাসক আসাদ উদ্দিন আহমদ বলেন, আসন্ন নির্বাচন সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে আয়োজনে নির্বাচন বোর্ড ও আপীল বোর্ডের চেয়ারম্যান ও সদস্যগণ সকলে কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছে। আমরা একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করতে চাই।
সিলেট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রির সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি ও এফবিসিসিআই’র সাবেক পরিচালক হিজকিল গুলজার বলেন, সিলেটের ব্যবসায়ীরা দীর্ঘদিন থেকে ভুগছে অভিভাবক শুণ্যতায়। এই স্থান পূরণে ব্যর্থ হয়েছে বিতর্কের দায়ে অভিযুক্ত বিদায়ী পরিষদ। শেষকথা শনিবার নির্বাচনে তুলনামুলক যোগ্য প্রার্থীদের বিজয়ী করে আগামী দিনে ব্যবসা বান্ধব নেতৃত্ব গড়ে তোলবেন ভোটাররা নিকট এটাই প্রত্যাশা করেন তিনি। প্রসঙ্গত, সিলেট চেম্বার অব কমার্সের দ্বি-বার্ষিক নির্বাচন গত ২৭ এপ্রিল হওয়ার কথা ছিল ২৭ এপ্রিল। ভোটার তালিকায় গলদ, মামলা জটিলতায় প্রায় ৫ মাস পর এ নির্বাচন হতে যাচ্ছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন