শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

চট্টগ্রামের জুয়াড়িরা কই

পাঁচ ক্লাবে র‌্যাব-পুলিশের অভিযান

চট্টগ্রাম ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১২:০০ এএম

চট্টগ্রামে অবৈধ ও অঘোষিত ক্যাসিনো, বার ও ক্লাবের কোন কোনটিতে এখনও চুপিসারে চলছে মদ জুয়ার আসর। কিছু ক্লাবে অভিযান হয়েছে। তাতে জুয়া ক্যাসিনোর আলামতও মিলেছে। তবে অভিযানের খবর আগেই ফাঁস হয়ে যাওয়ায় গা ঢাকা দিয়েছে জুয়াড়িরা। তাদের কাউকে পাকড়াও করা যায়নি। প্রশ্ন জুয়াড়িরা কোথায়? বেশিরভাগ অঘোষিত বার-ক্লাবে এখনও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাত পড়েনি। মহানগরীর পাশাপাশি জেলার বিভিন্ন এলাকায় মদ-জুয়ার আসর বসছে নিয়মিত। সেখানেও কোন অভিযান নেই।

গেল বুধবার ঢাকায় ক্যাসিনো সাম্রাজ্যে সাঁড়াশি অভিযানের পর বন্দরনগরীসহ চট্টগ্রাম অঞ্চলের বার ও ক্লাবগুলোতে মদ-জুয়ার আসর কমে আসতে শুরু করে। কিছু ক্লাব থেকে সরিয়ে নেয়া হয় ক্যাসিনো, জুয়ার আসর ও মদের মজুদ। এরমধ্যেও অনেক ক্লাব ও বারে নানা কৌশলে আসর বসছে। নগরীর জিইসি মোড়ের বড় একটি ক্লাবে বাইরে তালা দিয়ে ভেতরে জুয়ার আসরের খবর পাওয়া গেছে। নামকরা কয়েকটি ক্লাব, রেস্ট ও গেস্টহাউসে আগের মতই রমরমা আসর চলছে বলেও বিভিন্ন সূত্রে খবর পাওয়া গেছে। বার-ক্লাবে কখন র‌্যাব-পুলিশ হানা দেয় এ নিয়ে কোথাও উদ্বেগ-উৎকণ্ঠাও দেখা গেছে। গতকাল বিকেলে নগরীর রেলওয়ে ম্যানস ক্লাবে গিয়ে দেখা যায়, ‘রাত ১১টার মধ্যে ক্লাব ছেড়ে যাওয়ার’ নোটিশ লাগানো হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত কয়েকদিন বিকেলের মধ্যেই ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে ওই বারটি। অনুমোদিত এ বারটিতে গভীর রাত পর্যন্ত চলত জমজমাট আসর।

এদিকে নগরীর পাঁচটি ক্লাবে একযোগে অভিযানের পর তিনটিতে জুয়ার আসর চালানোর প্রমাণ পাওয়ার কথা জানিয়েছে র‌্যাব। মুক্তিযোদ্ধা ক্রীড়া সংসদ, মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব ও আবাহনী লিমিটেডে অভিযান চালায় র‌্যাব। আর পুলিশ অভিযান চালায় নগরীর ফ্রেন্ডস ক্লাব ও শতদল ক্লাবে। শনিবার সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত পরিচালিত অভিযানে নগরীর আইস ফ্যাক্টরি রোডের মুক্তিযোদ্ধা ক্রীড়া সংসদে, সদরঘাট এলাকার মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব এবং হালিশহর এলাকার আবাহনী লিমিটেড ক্লাব ঘিরে অভিযানে কাউকে গ্রেফতার করা যায়নি। অভিযান টের পেয়ে জুয়াড়িরা গা ঢাকা দিয়েছে। তবে ক্লাব সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যেকোন সময় অভিযান হতে পারে এমন আশঙ্কা থেকে গা ঢাকা দেন তারা। পুলিশের যেসব অসাধু কর্মকর্তা এসব মদ-জুয়ার আসর থেকে নিয়মিত মাসোহারা নিতেন তাদের পরামর্শেই গা ঢাকা দেন জুয়াড়িরা।

অভিযান শেষে র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিজামউদ্দিন বলেন, মুক্তিযোদ্ধা ক্রীড়া সংসদে জুয়া খেলা হত-এটা আমরা নিশ্চিত হয়েছি। জুয়া খেলার চিপ, কার্ড ও খাতাপত্র পেয়েছি। কিছু টেবিল পাওয়া গেছে সেগুলোতে জুয়ার আসর বসত। তিনি বলেন, অভিযান হতে পারে বুঝতে পেরে ক্লাব থেকে জুয়ার সরঞ্জাম সরিয়ে রাখা হয়েছে। আমরা সেগুলো উদ্ধারের চেষ্টা করছি। র‌্যাব-৭ এর উপ-অধিনায়ক স্কোয়াড্রন লিডার শাফায়েত জামিল ফাহিম বলেন, মুক্তিযোদ্ধা সংসদে ক্যাসিনো আইটেম পাওয়া গেছে।

তবে ১৮ তারিখের বুধবার পর সেখানে কেউ আসেনি। চট্টগ্রামের মুক্তিযোদ্ধা ক্রীড়া সংসদ ক্লাব পরিচালনা কমিটির সভাপতির দায়িত্বে আছেন বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য হারুন-আর-রসিদ। আগে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ চট্টগ্রাম জেলা ইউনিট ক্লাবটি পরিচালনা করত। বছর তিনেক আগে কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিল এর নিয়ন্ত্রণ নেয়।

মুক্তিযোদ্ধা সংসদের চট্টগ্রাম মহানগরের সহ কমান্ডার খোরশেদ আলম বলেন, তিন বছর আগে খসরু নামে একজনকে প্রতিদিন ১০ হাজার টাকায় ক্লাবটি পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়। পরে সদরঘাট এলাকার মোহামেডান ক্লাবে যায় র‌্যাবের অভিযান দল। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিজামউদ্দিন বলেন, এই ক্লাবে কার্ড ও জুয়া খেলার বিভিন্ন আলামত পেয়েছি। সরেজমিন সেখানে ১৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কার্ড খেলার হিসাবপত্র পাওয়া গেছে। গত কয়েক দিন ধরে এখানে আর খেলা হয় না। মোহামেডানে অভিযান শেষে রাতে নগরীর হালিশহর এলাকার আবাহনী লিমিটেড ক্লাবে অভিযান চালায় র‌্যাব। এ বিষয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিজামউদ্দিন বলেন, এখানেও একই ধরনের আলামত মিলেছে। ধারণা করছি, চলমান অভিযানের কারণে তারা জুয়া বন্ধ রেখেছে। এই তিন ক্লাবের বিরুদ্ধে পৃথক পৃথক মামলা হবে বলে জানান তিনি।

নগরীর এস এস খালেদ রোডের ফ্রেন্ডস ক্লাব এবং আসকার দিঘীর পাড়ের শতদল ক্লাবে অভিযান চালায় পুলিশ। এ বিষয়ে নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) মেহেদী হাসান বলেন, ওই ক্লাবের তৃতীয় তলায় কয়েক প্যাকেট তাস ও একটি লডুর বোর্ড দেখা গেছে। ফ্রেন্ডস ক্লাবে কিছু কার্ড (তাস) পেয়েছি। তবে এখানে এখন কেউ জুয়া খেলে বলে মনে হয় না। আর শতদল ক্লাবটি তালাবন্ধ পাওয়া গেছে। শুক্রবার রাতেও নগরীর আলমাস মোড়ে ‘হ্যাং আউট’ নামের একটি ক্লাবে অভিযান চালায় পুলিশ। সেখানে অনুমতি ছাড়া পুল ও স্নুকার খেলা হত, ওই ক্লাব মালিকের ছেলে খলিকুজ্জামান ও কর্মচারী রবিউল হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়।

নগরীর ক্লাবগুলোতে মদ-জুয়ার আসরের প্রমাণ পাওয়ার ঘটনায় ক্রীড়ামোদীসহ সব শ্রেণির মানুষের মধ্যে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হচ্ছে। ক্লাব হচ্ছে খেলাধুলা বিকাশের জন্য। ক্লাবেই সৃষ্টি হয় বিভিন্ন ক্রীড়াবিদ। এসব ক্লাবগুলোতে জুয়ার আসর বসে তাহলে সমাজ যাবে কোথায়। যা শুধু খেলাধুলাই নয়, সমাজ ও দেশের জন্য ক্ষতিকর। ক্রীড়ার জন্য ক্লাবের জন্ম হলেও কিছু ক্লাব সে উদ্দেশ্য বাদ দিয়ে নিজেদের আখের গোছাতে ব্যস্ত। অভিযোগ রয়েছে, ক্লাব পরিচালনায় সংশ্লিষ্টরা এসব অনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালনার মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করে তা নিজেদের মধ্যে ভাগ-বাটোয়ারা করে নেয়। খেলাধুলার উন্নয়নের বিষয়টি অবহেলিতই থেকে যায়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন