বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল সাফিনুল ইসলাম বলেন, প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিন বাংলাদেশের একটি অংশ। সে হিসেবেই এখানে বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। এই দ্বীপে বিজিবির যে জনবল রয়েছে তা সীমান্ত নিরাপত্তায় যথেষ্ট।
আজ মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) দুপুর আড়াইটার দিকে সেন্টমার্টিন বিওপির জন্য নির্ধারিত জমি পরিদর্শন শেষে তিনি এসব কথা বলেন।
সাফিনুল ইসলাম বলেছেন, রোহিঙ্গা এবং ইয়াবার চালান রোধে বিজিবির তৎপরতা বাড়ানো হবে। বিজিবি নাফ নদী দিয়ে ইয়াবা পাচার রোধে অনেক সফলতা পেয়েছে। আগের তুলনায় ইয়াবা পাচার নিয়ন্ত্রণে এসেছে। পাশাপাশি ইয়াবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে মিয়ানমারের সঙ্গে সম্প্রতি উচ্চ পর্যায়ের এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মিয়ানমার সীমান্তরক্ষীরা ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত আছে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, তারা (মিয়ানমার সীমান্তরক্ষীরা) ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত নয়। তারাও চেষ্টা করছে ইয়াবা ব্যবসা বন্ধ করতে।
এ সময় সেন্টমার্টিনকে মিয়ানমারের অংশ দাবি করার বিষয়ে বিজিবির মহাপরিচালক বলেন, মিয়ানমার অজ্ঞতার কারণে হয়তো এটি বলছে। আন্তর্জাতিক সীমানা রেখা অনুযায়ী সেন্টমার্টিন বাংলাদেশের।
এসময় উপস্থিত ছিলেন, কক্সবাজার রামু সেনানিবাসের জিওসি মেজর জেনারেল মাইন উদ্দিন চৌধুরী, বিজিবি কক্সবাজার রিজিয়ান কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাজেদুল রহমান, সেক্টর কমান্ডার মনজরুল হাসান খান, টেকনাফ-২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ ফয়সাল হাসান খান, অপারেশন অফিসার মেজর রুবায়াৎ কবীরসহ কোস্টগার্ড ও নৌবাহিনীর বিভিন্নস্তরের কর্মকর্তারা।
এর আগে দুপুর দেড়টার দিকে সেনাবাহিনীর বিশেষ এক হেলিকপ্টারে করে তিনি সেন্টমার্টিন পৌঁছেন। এরপর তিনি মোটর সাইকেলে চড়ে সেন্টমার্টিনের বর্ডার আউট পোস্ট (বিওপি) এবং বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা পরিদর্শন করেন।
উল্লেখ্য, চলতি বছর ৭ এপ্রিল থেকে সেন্টমার্টিনে বিজিবি মোতায়েন করা হয়। এর আগে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত সেন্টমার্টিনে তৎকালীন বিডিআর (বাংলাদেশ রাইফেলস) মোতায়েন ছিল।
সেন্টমার্টিন থেকে বিভিন্ন সময় রোহিঙ্গা আটক করেছে কোস্টগার্ড, পুলিশ, র্যাব ও বিজিবি। বিভিন্ন সময় ওই এলাকায় দস্যুতার ঘটনাও ঘটে। এসব নিয়ন্ত্রণে একটি পুলিশ ফাঁড়িও রয়েছে সেন্টমার্টিনে। তবে বর্তমান সরকার মনে করছে, সেন্টমার্টিনের নিরাপত্তায় বিজিবি মোতায়েন দরকার।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৮ সালের অক্টোবরে সেন্টমার্টিনকে নিজেদের অংশ বলে দাবি করেছিল মিয়ানমার। মিয়ানমার সরকারের জনসংখ্যা বিষয়ক বিভাগের ওয়েবসাইটে তাদের দেশের মানচিত্রে সেন্টমার্টিনকে তাদের ভূখণ্ডের অংশ দেখানো হয়। ৬ অক্টোবর বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মিয়ানমারের তৎকালীন রাষ্ট্রদূত উ লুইন ও’কে তলব করে এর প্রতিবাদ জানায়। এরপর মিয়ানমার মানচিত্র থেকে সেটি পরিবর্তন করে।
কক্সবাজার সংলগ্ন প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন সৃষ্টি থেকে বাংলাদেশের ভূখণ্ডের অন্তর্গত। ব্রিটিশ শাসনাধীন ১৯৩৭ সালে যখন বার্মা ও ভারত ভাগ হয় তখন সেন্টমার্টিন ভারতে পড়েছিল। ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের সময় সেন্টমার্টিন পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হয়। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকে এটি বাংলাদেশের অন্তর্গত। ১৯৭৪ সালে সেন্টমার্টিনকে বাংলাদেশের ধরে নিয়েই মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা চুক্তি হয়।
১৯৯৭ সালের আগ পর্যন্ত সেন্টমার্টিন দ্বীপে বিজিবি (তৎকালীন বিডিআর) মোতায়েন ছিল। এরপর থেকে সেন্টমার্টিনে বিজিবির কার্যক্রম বন্ধ ছিল। এতদিন ধরে কোস্টগার্ড সদস্যরা ওই সীমানা পাহারা দিয়ে আসছিল। কিন্তু চলতি ৭ এপ্রিল হতে সেন্টমার্টিনে বিজিবির একটি বিওপি ক্যাম্প স্থাপনের কার্যক্রম চলছে। তাই সেখানে টহল দিচ্ছে বিজিবি। এটা নিয়মিত টহলের অংশ। প্রতিদিন দ্বীপের বিভিন্ন এলাকায় স্বাভাবিকভাবেই টহল দিচ্ছে বিজিবি।
সেন্টমার্টিন ইউপি চেয়ারম্যান নুর আহমদ বলেন, দ্বীপে বিজিবি মোতায়েনের ফলে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার হয়েছে। এতে স্থানীয় অধিবাসী ও পর্যটকরা নিরপত্তাহীনতা হতে মুক্ত রয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন