‘শুদ্ধি অভিযানে’ আতঙ্কিত ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিসহ দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা। ক্ষমতাসীনদের অনেক নেতা জড়িত থাকলেও ঠিক কার কার নাম প্রধানমন্ত্রীর কালো তালিকায় রয়েছে তা জানেন না খোদ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারাও। কখন কার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয় কিংবা ক্যাসিনোর সঙ্গে জড়িত থাকার কারণে দলের আগামী সম্মেলনে কমিটি থেকে বাদ পড়েন অথবা কমিটিতে পদ না পান এসব বিষয় নিয়ে চিন্তা যেন দিন দিন বাড়ছেই। এ বিষয়ে গোয়েন্দা সংশ্লিষ্ট একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, বিগত মন্ত্রিসভার চারজন মন্ত্রী, ক্ষমতাসীন ১৪ দলীয় জোটের তিনজন শীর্ষ নেতা, একটি সিটি করপোরেশনের বর্তমান মেয়র, ঢাকার চারজন এমপি রয়েছেন। এর মধ্যে একজন একটি অভিজাত এলাকার এমপি ক্যাসিনো কেলেঙ্কারিতে জড়িত থাকার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে রিপোর্ট রয়েছে। এছাড়া দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজিসহ নানা অপকর্মের কারণে বর্তমান ২৫ জন এমপি ও সাবেক ১২ জন এমপি প্রধানমন্ত্রীর কালো তালিকায় রয়েছেন।
ক্যাসিনোতে ঢাকা সিটি করপোরেশনের বহুসংখ্যক কাউন্সিলর আওয়ামী লীগের ঢাকা মহানগরের একজন শীর্ষ নেতার ইন্ধনের অভিযোগ এবং অঙ্গসংগঠনের শীর্ষ ৫০ জন নেতার বিরুদ্ধে বিস্তারিত প্রমাণাদি প্রধানমন্ত্রীর কাছে রয়েছে। তাই এসব সাবেক মন্ত্রী, এমপি ও নেতাদের অপকর্মের বিষয়ে অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই। সূত্র জানায়, দুর্নীতিবাজদের তালিকায় নিজেদের নাম রয়েছে কি না সেটি জানতে দলটির এমপিরা কেন্দ্রীয় নেতাদের দ্বারস্থ হচ্ছেন। কেন্দ্রীয় নেতারাও তালিকায় কাদের নাম রয়েছে বলতে পারছেন না। ফলে মন্ত্রী-এমপি এবং আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী বলে খ্যাত নেতারা কেউই এ নিয়ে মুখ খুলছেন না। তাই চিন্তা দূর হচ্ছে না দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত এসব মন্ত্রী, এমপি ও নেতাদের। বেশির ভাগ নেতা অভিযানের পক্ষেও কথা বলতে ভয় পাচ্ছেন। চুপচাপ থাকাকেই শ্রেয় মনে করছেন। আওয়ামী লীগের একজন সম্পাদকমÐলীর সদস্য বলেন, সবার এক প্রশ্ন তালিকায় সিটিং এমপিদের মধ্যে কারা রয়েছেন। এছাড়া সাবেক এমপি, উপজেলা ও জেলাপর্যায়ের নেতাদের বিষয়েও জানতে চান সবাই। দলের গুটিকয় শীর্ষ নেতা ছাড়া কেউ জানে না, তালিকায় কার নাম আছে।
দলের একাধিক নেতা এই শুদ্ধি অভিযান সম্পর্কে বলেছেন, আওয়ামী লীগ সভাপতি দলের কাউন্সিলের ছয় মাস আগে থেকেই তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত নেতাদের সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়ে থাকেন। সম্মেলনে নেতৃত্ব নির্ধারণ করতেই এটি করা হয়। এবারও সম্মেলনের আগে সব পর্যায়ের নেতার সম্পর্কে জরিপের নির্দেশ দেন, যাতে কোনো বিতর্কিত এবং দুর্নীতিবাজ দলে ভিড়তে না পারেন।
আওয়ামী লীগের একজন সাংগঠনিক সম্পাদক বলেন, যাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে কিংবা প্রধানমন্ত্রীর কাছে তাদের বিষয়ে নেগেটিভ রিপোর্ট রয়েছে, তারা কোনো কমিটিতে পদ পাচ্ছেন না এটা মোটামুটি নিশ্চিতভাবেই বলা যায়।
গত ১৪ সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, সন্ত্রাস এবং ক্যাডার রাজনীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। ওইদিনই শুদ্ধি অভিযান শুরু হয়। ছাত্রলীগের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক অপসারণের মাধ্যমে শুদ্ধি অভিযান শুরু হয়েছিল। আওয়ামী লীগের এক শীর্ষনেতা বলেছেন, এ বছরের আগস্টে প্রধানমন্ত্রী লন্ডন থেকে ফিরলে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা থেকে একটি ফাইল প্রধানমন্ত্রীর কাছে দেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী তার নিজস্ব টিম দিয়ে এসব অভিযোগ খতিয়ে দেখেন।
এ ছাড়া এর আগেও এ বছর ২৯ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগের সভাপতিমÐলীর সভায় এ বিষয়ে আলোচনা এবং দোষীদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে আলোচনা হয়। পরে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। পরে যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হয়।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেছেন, এই অভিযান শুধু ঢাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না। সুনামগঞ্জ থেকে সুন্দরবন, কুতুবদিয়া থেকে তেঁতুলিয়া যেখানে যত দুর্নীতিবাজ ও মাদকবাজ আছে, সেখানে অভিযান চলবে। মাদক, দুর্নীতি, টেন্ডারবাজি, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি যারাই করবে; তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। সে চুনোপুঁটি হোক আর রাঘব বোয়ালই হোক।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন