জঙ্গি অভিযানে সক্ষমতা বাড়ানোর লক্ষ্যে রাজধানীর বনানীতে নরডিক হোটেলে কমান্ডো মহড়া পরিচালনা করেছে র্যাব। মহড়ায় র্যাবের স্নাইপার ও কমান্ডো টিমসহ বিভিন্ন ইউনিটের সদস্যরা অংশ নেন। গতকাল শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে জঙ্গিবিরোধী মহড়াটি শুরু হয়। মহড়া শেষে সংবাদিকদের অভিযানের বিষয়ে ব্রিফ করেন র্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ। তিনি বলেন, এখন সব ক্যাসিনো বন্ধ। এটা করতে গিয়ে হয়তো অন্যান্য অনেক ইস্যু বেরিয়ে আসছে। আমি অনুরোধ করবো, কোনও ধরনের গুজব ও আতঙ্ক ছড়াবেন না। এতে দেশ ক্ষতিগ্রস্তু হবে। ভালো করতে গিয়ে দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হোক এটা কিন্তু আমরা চাই না।
ক্যাসিনোর সংখ্যা নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত রিপোর্টের সমালোচনা করে র্যাব ডিজি বলেন, কেউ বলছেন নগরীতে ৬০টি ক্যাসিনো আছে, কেউ বলছেন ১৫০। আবার কেউ বলছেন ৬০০ ক্যাসিনো আছে। তালিকাটা কোথায়? আমাদের কাছে যে তালিকা আছে, সে অনুযায়ী আমরা কাজ করছি। আমাদের পরিষ্কার কথা— ক্যাসিনো বন্ধ করতে নেমেছি, ক্যাসিনো বন্ধ হয়েছে। কিন্তু ৬০, ১৫০, ৬০০, হাজার, ঘরে ঘরে ক্যাসিনো, এসব ভালো কথা নয়। এতে মূল বিষয়টা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। গুজবনির্ভর কথা নিয়ে যদি নাড়াচাড়া করি, তাহলে মূল উদ্দেশ্য ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আমরা যদি সেক্টর বাই সেক্টর ধরে, লক্ষ্য স্থির করে কাজ করি, তাহলে সবচেয়ে ভালো হয়। সরকারের উদ্যোগে দেশবাসীর সমর্থন রয়েছে। দয়া করে কেউ গুজব ছড়াবেন না, তাতে অভিযানের ক্রেডিবেলিটি নষ্ট হয়ে যায়। আমরা আমাদের লক্ষ্যে স্থির থাকতে চাই।
ক্যাসিনোর অভিযানের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে র্যাব ডিজি বলেন, অভিযান মুখ থুবড়ে পড়ার কোনও কারণ নেই। ক্যাসিনোর অভিযান নির্মোহভাবে দেখতে হবে। আমরা দেখছি অভিযান নিয়ে অনুমাননির্ভর কথাবার্তা বলা হচ্ছে। চরিত্রহনন করা হচ্ছে। এগুলো ঠিক নয়। ক্যাসিনোর অভিযানে র্যাব-পুলিশের কোনও সমন্বয়হীনতা আছে কিনা, জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দীন বলেন, বাংলাদেশের যেখানেই কোনও ঘটনা ঘটুক, সেখানে র্যাব-পুলিশসহ অন্যান্য আইন-শৃংখলা বাহিনী যাবে। এখানে সমন্বয়হীনতার কোনও বিষয় নেই। তবে সবাই সব অভিযানে সবকিছু পাবে, এমন কথা নেই। অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
অন্যদিকে মহড়ার শুরুতে একটি হলুদ রংয়ের ট্যাক্সিক্যাবে করে একজন নারী জঙ্গিসহ চারজন জঙ্গি নরডিক হোটেলে ঢুকেন। তার আগে থেকেই হোটেলটিতে জঙ্গিদের আরও কয়েকজন সহযোগী অবস্থান করছিলেন। জঙ্গিদের আমিরকে র্যাবের হাত থেকে ছেড়ে দেয়ার জন্য হোটেলের সবাইকে জিম্মি করে জঙ্গিরা। তারা দাবি জানায়, আমিরকে ছেড়ে না দিলে হোটেলের দেশি-বিদেশিদের মেরে ফেলা হবে। জিম্মিদের একজনের আত্মীয় র্যাবের কন্ট্রোলরুমে ফোন দিয়ে বিস্তারিত জানায়। খবর পেয়ে হোটেলটিতে অভিযানে নামেন র্যাব সদস্যরা। প্রতীকী এ অভিযানের প্রথমে র্যাবের স্নাইপার টিম মূলরাস্তা দিয়ে গিয়ে পজিশন নেয়। এসময় হোটেলের সামনে কয়েকটি গ্যাস বোমা নিক্ষেপ করা হয়। জঙ্গিদের বিভ্রান্ত করতে তিন দিক থেকে একইসঙ্গে অভিযান পরিচালনা করা হয়। অন্যদিকে হেলিকপ্টারে করে ওই হোটেলের পাশের ভবনে নামেন র্যাবের কমান্ডো দলের সদস্যরা। জঙ্গিরা ছত্রভঙ্গ হয়ে গেলে সেখানে ঢুকে কমান্ডো ও স্নাইপার টিম। ২০ মিনিটের অভিযান শেষে জঙ্গিদের সবাই নিহত হন এবং হোটেলের সবাইকে জীবিত উদ্ধার করা হয়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন