শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

ক্যাসিনোতে জড়িত থানা-ওয়ার্ডের নেতারাও

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১২:০০ এএম

অবৈধ ক্যাসিনোতে আওয়ামী লীগের বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী জড়িত। টপ টু বটম ক্যাসিনোতে জড়িয়ে পড়েছে দলটির দুর্নীতিবাজ নেতারা। দলের ত্যাগী নেতাকর্মীদের প্রাধান্য দিতে চলমান দুর্নীতিবিরোধী শুদ্ধি অভিযানে বেড়িয়ে আসতে অপকর্মকারী নেতাদের নাম। চলমান ক্যাসিনো বিরোধী অভিযানে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ বা সেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্র বা মহানগর পর্যায়ের নেতারাই নন, থানা-ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতারাও ক্যাসিনোতে জড়িত।

গোয়েন্দা সংস্থা ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তদন্তে তৃণমূলের এসব দুর্নীতিবাজ নেতাদের নাম বেড়িয়ে আসছে। শুধু ক্লাব নয়, ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ফ্যাট বাসা ভাড়া করে ক্যাসিনো চালানোর অভিযোগ তৃণমূল পর্যায়ের অপকর্মকারীদের। সম্প্রতি চলমান অভিযানে যুবলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূইয়া, কলাবাগান ক্রীড়া চক্রের সভাপতি ও কৃষক লীগ নেতা শফিকুল আলম ফিরোজ, মোহামেডান স্পোর্টির ক্লাবের ডিরেক্টর ও বিসিবির পরিচালক লোকমান ভূইয়া গ্রেফতার হলেও ক্যাসিনোতে জড়িত বিপুল সংখ্যক অপরাধী অধরা। এসব অপরাধী রাজনৈতিক ছত্র ছায়ায় আওয়ামী লীগের নাম বিক্রি করে এসব অপরাধ করে আসছিল, যা টপ সিক্রেট হিসেবে সবাই জানলেও কোন প্রতিকার হয়নি।

প্রধানমন্ত্রীর অভিযানের পরই ক্লাবের ক্যাসিনোর পাশাপাশি বাসাবাড়ির ক্যাসিনোর খবর বেড়িয়ে আসছে। এসব ক্লাবের ক্যাসিনোতে খেলা এবং সেগুলো পরিচালনায় যুক্ত আওয়ামী লীগ, যুব লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রভাবশালী কয়েকজন নেতা। ক্যাসিনো খলনায়ক হিসেবে যাদের নাম এসেছে, তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের সভাপতি স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোল্লা মো. আবু কাওছার, যুবলীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন মহি, ঢাকা দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি ইসমাইল হোসেন সম্রাট, দক্ষিণ যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম রেজা, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর এ কে এম মোমিনুল হক সাঈদ, সহ-সভাপতি আরমানুল হক আরমান, সহ-সভাপতি সোহরাব হোসেন স্বপন, সাংগঠনিক সম্পাদক গাজী সরোয়ার হোসেন বাবু, সাংগঠনিক সম্পাদক জামাল, সাংগঠনিক সম্পাদক মাকসুদ, সহ-সভাপতি মুরসালিন, জামান, মুরসালিন, মনির হোসেন, রানা, শাহাদাত হোসেন, মনা, শফি ক্যাসিনো কারবারসহ টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ করতেন। মমিনুল হক সাঈদ ওয়ান্ডারার্সসহ অন্তত চারটি ক্লাবের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত।

ঢাকা উত্তর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা উত্তর সিটির ৩৩নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তারেকুজ্জমান রাজীব, সাংগঠনিক সম্পাদক শাহাদাত হোসেন সেলিম ও মামুন সরকার, মহানগর নেতা সেলিম খান।

ঢাকা মহানগর উত্তর সেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ও ঢাকা উত্তর সিটির ৭নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোবাশ্বের হোসেন চৌধুরী এবং সাধারণ সম্পাদক ও ২৭ নং ওয়র্ডের কাউন্সিলর ফরিদুর রহমান খান ইরান ক্যাসিনো সঙ্গে জড়িত। তারা দুইজনই ওয়ার্ড কাউন্সিলর। এছাড়া ঢাকা দক্ষিণ সেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি দেবাশিষ বিশ্বাস ও সাধারণ সম্পাদক আরিফুর রহমান টিটুরও নাম রয়েছে ক্যাসিনোতে জড়িত থাকার।

এছাড়াও ঢাকা দক্ষিণ সিটির ৫ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. আশ্রাফুজ্জামান, ১২ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর গোলাম আশরাফ তালুকদার, ১৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোস্তফা জামান (পপি), ২০ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফরিদ উদ্দিন রতন, ২২ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. তরিকুল ইসলাম সজীব ও ৩০ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. হাসানের বিরুদ্ধে ক্যাসিনোতে জড়িত থাকার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে অভিযোগ পাঠিয়েছে গোয়েন্দা সংস্থা।

যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার অপকর্মের সঙ্গে জড়িত অন্তত ২০ জনের নাম পেয়েছে ডিবি। এদের মধ্যে রয়েছেন গোড়ান এলাকার ২নং কাউন্সিলর আনিসুর রহমান, যুবলীগ দক্ষিণের সদস্য খায়রুল, উজ্জ্বল রাজু, রইসসহ আরো অনেকে। ৯ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হাসান উদ্দিন জামাল, ইমরান, তসলিম, জসীম উদ্দিন, গোলাম কিবরিয়ার বিরুদ্ধে রাজধানীর বিভিন্ন ক্লাবে ক্যাসিনো নিয়ন্ত্রণের অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর কাছে জমা দেয়া ভিডিওতে অনেক ক্যাসিনো ম্যানের নাম রয়েছে।

বনানীর কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউয়ে আহমেদ টাওয়ার, সুইট ড্রিমস এবং একই এলাকার আরেকটি ভবনে ক্যাসিনো পরিচালনা করেন ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহাদত হোসেন ওরফে সেলিম। তার সহযোগী গুলশানের ১৯ নং ওয়ার্ড পূর্ব যুবলীগের সভাপতি মো. শান্ত, ১৯ নং ওয়ার্ড পশ্চিম যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আলম।

উত্তরা ১ নম্বর সেক্টরের পূবালী ব্যাংকের দোতলায় ক্যাসিনো চালাচ্ছেন উত্তরা পশ্চিম থানাশ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী জাকারিয়া। উত্তরার ৪ ও ৯ নম্বর সেক্টরেও ফ্ল্যাট নিয়ে ক্যাসিনো চালাচ্ছেন ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ইসমাঈল হোসেন। তবে তিনি দাবি করেন, এই ক্যাসিনোর সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই। উত্তরার ৯নং সেক্টরের আকাশ প্লাজার একটি ফ্লোরে ক্যাসিনো চালান ঢাকা উত্তর যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মামুন সরকার।

গুলশান ১ নম্বরের ১৩ নম্বর সড়কে একটি বাড়ির নিচতলা ভাড়া নিয়ে ক্যাসিনো চালানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ এইচ এম হাশিম আহমদ ও কাজী মিশকাত হোসেন বাড়ির নিচতলা ভাড়া নিয়ে ‘৮৯ ক্লাব’ নামে একটি ক্লাব চালু করেন। তারা এখানে ক্যাসিনো ও মদজুয়ার আসর বসান।

এছাড়াও বিভিন্ন নেতার নানা অপকর্মের তথ্য উঠে আসছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে। অনেক নেতাই গোয়েন্দা সংস্থার নজরদারিতে রয়েছেন। কেন্দ্রীয় যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ফারুক হোসেন, মাহাবুবুর রহমান হীরন, আতাউর রহমান আতার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করে দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিত্তের মালিক হয়েছেন বলে অভিযোগ পেয়েছে আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী। এছাড়া দলের নেতাকর্মীরাও তাদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ করছেন।

যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ফারুক হোসেনের বিরুদ্ধে যুবলীগেরই নেতাদের অভিযোগ বিএনপি-জামাত ঘড়ানার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজ পাইয়ে দেন কমিশিনের বিনিময়ে। এছাড়া দলের পদ ব্যবহার করে কোটি কোটি টাকা বানিয়েছেন তিনি। শান্তিনগরের টুইন টাওয়ারে আলিশান কয়েকটি ফ্ল্যাট। টুইন টাওয়ার, জোনাকী মার্কেট ও পলওয়েল মার্কেটে রয়েছে তার একাধিক দোকান। পল্টন হাউজ বিল্ডিং গলিতে ভোজন নামে একটি আলিশান রেস্টুরেন্ট রয়েছে তার।

কেন্দ্রীয় যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মাহাবুবুর রহমান হীরন যুবলীগ করার সুবাদে ছিলেন রুপালী ব্যাংক ও জনতা ব্যাংকের পরিচালক। সেঞ্চুরি অর্কিড আবাসিক এলাকায় তার ১১টি ফ্ল্যাট ও বিভিন্ন মার্কেটে দশটির মতো দোকান রয়েছে। কেন্দ্রীয় যুবলীগের আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য আতাউর রহমান আতা ভিকারুননিসা নূন স্কুল এর গভর্নিং কমিটির সদস্য হয়ে কোটি কোটি টাকা কামিয়েছেন ভর্তি বাণিজ্য করার অভিযোগ রয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সম্পদের অনুসন্ধান করছেন। তাদের বিরুদ্ধে ক্যাসিনোতে জড়িত থাকার বিষয়ে অভিযোগ রয়েছে পুলিশের কাছে। এছাড়া এই তিনজনের বিরুদ্ধে আরো অভিযোগ যুবলীগ চেয়ারম্যান ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে নেতিবাচক নিউজ করানোর মাধ্যমে এই কমিটি বাতিলের চেষ্টা করছেন তারা। ইতোমধ্যে তারা প্রচারণা চালাচ্ছেন যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন মহি সাধারণ সম্পাদক হচ্ছেন।#

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (2)
Md Faruk Hossain ৫ অক্টোবর, ২০১৯, ১:১১ এএম says : 0
Amar name ja likhesen,aktao proman korte parle,je bichar hoi mene nebo,request roilo onushonddhan kore shothik news published korun.amio apnar shathe thakbo.
Total Reply(0)
Md Faruk Hossain ৫ অক্টোবর, ২০১৯, ১:১২ এএম says : 0
Amar name ja likhesen,aktao proman korte parle,je bichar hoi mene nebo,request roilo onushonddhan kore shothik news published korun.amio apnar shathe thakbo.
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন