হঠাৎ করেই বাজারে ডলারের ক্রয় বেড়ে গেছে। এজন্য ডলারের সংকট প্রতিদিনই তীব্র হচ্ছে। ফলে বেড়ে যাচ্ছে ডলারের দাম। কমে যাচ্ছে টাকার মান। দীর্ঘদিন থেকেই খোলাবাজারে ডলারের দাম যে চড়েছে তা এখনো পড়েনি। বিভিন্ন মানি এক্সচেঞ্জ হাউসের সাথে কথা বলেও ডলারের চড়া দামের সত্যতা মিলেছে। এদিকে বৈদেশিক মুদ্রাবাজার ঠিক রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার লেনদেনের বিষয়ে বিভিন্ন সীমা বেঁধে দিলেও তার বাস্তবায়ন হচ্ছে না। নীতিমালা উপেক্ষা করে মূল্যের বাইরে গিয়ে ডলার বেচা-কেনা করছে ব্যাংকগুলো। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মানি এক্সচেঞ্জের কর্মকর্তা জানান, দেশে চলছে ক্যাসিনোর সাথে জড়িত এবং অসাধু ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি বিরোধী অভিযান। এ অভিযানের কারনে যাদের কাছে অধিক পরিমানে নগদ টাকা আছে তারা নগদ টাকার কমাতে ডলার এবং ইউরো ক্রয় করে রাখছেন। হঠাৎ করে অধিক পরিমানে ডলার ক্রয়ের কারনে ডলার সংকট তীব্র হয়েছে। আর তাই ডলারের দাম বেড়েছে।
সূত্র মতে, গত কয়েক মাসের ধারাবাহিকতায় কিছুটা বাড়তির দিকে ডলারের দাম। তবে গতকাল খোলা বাজারে ডলারের দাম সব রেকর্ড ছাড়িয়েছে। কোন কোন মানি এক্সচেঞ্জে ৮৭ টাকা ২০ পয়সা থেকে ৮৭ টাকা ৫০ পয়সায় বিক্রি করেছে। গত আগস্টেও খোলাবাজারে প্রতি ডলার বিক্রি করছে ৮৬ টাকায়। ১ মাসের ব্যবধানে ১ টাকা ৫০ পয়সা টাকা পর্যন্ত বেড়েছে ডলারের দাম। তবে খোলাবাজারে বাড়লেও বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে ডলারের দাম ৮৪ টাকা ৫০ পয়সাই দেখাচ্ছে। যদিও বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে ডলার ক্রয়ের জন্য গেলে তারা খোলা বাজারকে দেখিয়ে দিচ্ছে। সূত্র আরও জানায়, আগস্টের প্রথম সপ্তাহেও এই দাম ছিল ৮৪ থেকে সাড়ে ৮৪ টাকা। গত মে মাসেও ছিল ৮৪ টাকা ৫০ পয়সা। ফলে গত ৫ মাসের ব্যবধানে ৩ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে ডলারের দাম।
ডলারের দাম বৃদ্ধি প্রসঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, ক্যাসিনো ব্যবসায়ীসহ অবৈধ উপায়ে অর্থ উপার্জনকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান চলায় অনেকেই নগদ টাকার বিপরীতে ডলার কিনে রাখছেন। যাতে করে অল্প নোটে অধিক টাকা রাখা যায়। এছাড়া বিভিন্ন দেশে ভ্রমণ বেড়েছে। বিশেষ করে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে এবং নানান কারনে বিদেশে ভ্রমন বেড়েছে। আবার কেউ কেউ চিকিৎসার জন্যও বিদেশে যাচ্ছেন। আর এ শ্রেণির মানুষ এখন নগদ ডলারের চাহিদা মেটাতে খোলাবাজারে বেশি ভিড় করছেন। এতে খোলাবাজারে ডলারের দাম একটু বেশি চড়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের শীর্ষ এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে বাংলাদেশ থেকে বড় একটি প্রতিদিনধি দল গেছে। এ সময়ে হঠাৎ করে ডলারের চাহিদা বাড়ে। এতে বাজার অস্থির হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এটা রোধে বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি করছে।
সূত্র মতে, আমদানি ব্যয় বাড়ার কারণে দীর্ঘদিন ধরেই ডলারের দাম ৮৪ টাকা থেকে ৮৫ টাকার মধ্যে রয়েছে। পণ্য আমদানি এবং সরকারি পর্যায়ে এলএনজি ও জ্বালানিসহ কয়েকটি পণ্যের আমদানি ব্যয় মেটাতে কয়েক দিন ধরে ডলার সংকটে আছে ব্যাংকগুলো। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংকটে পড়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো। বাধ্য হয়েই তারা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে ডলার কিনছে। এতে ব্যাংকগুলোর তারল্য প্রবাহে চাপ পড়ছে। বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রতিদিনই বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি করছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
ডলারের দাম বৃদ্ধির কারন সম্পর্কে ওয়েলকাম মানি এক্সচেঞ্জ লিমিটেডের পরিচালক আনোয়ার হোসেন আনু ইনকিলাবকে বলেন, আমদানি-রপ্তানির উপর ডলারের দাম নির্ভর করে। তবে এখন ডলারের দাম কেন বাড়ছে সঠিকভাবে বলতো পারছি না। তবে কেউ কেউ বলছে দেশে ধরপাকোর চলছে। তাই দেশে অনেকে নিরাপদ মনে করছেন না। তাই অনেকেই বিদেশমুখী। একই সঙ্গে টাকার নগদ নোট একসঙ্গে রাখতে গিয়ে অনেকে বিপদ মনে করছেন। তাই নগদ টাকার পরিবর্তে ডলার ক্রয় করে রাখছেন। আর এসব কারনে ডলারের দাম বাড়ছে। তিনি জানান, গতকাল ৮৭ টাকা ২০ পয়সা পর্যন্ত ছিল ডলারের দাম।
দোহার মানি এক্সচেঞ্জের স্বত্তাধিকারী মুরাদ হোসেন জানান, হঠাৎ করে ক্যাসিনো ও দুর্নীতি বিরোধী ধরপাকোর শুরু হওয়ায় ডলারের সঙ্কেট দেখা দিয়েছে। অনেকেই অভিযান থেকে বাঁচতে বিদেশে চলে যাচ্ছেন। আর এ জন্য অধিক ডলার ক্রয় করছেন। অপর একটি মানি এক্সচেঞ্জের ডলার বিক্রয়কারী আবুল বাশার জানান, গতকাল ৮৭ টাকা ৩০ পয়সায় ডলার বিক্রি করেছেন।
হঠাৎ করে ডলারের দাম বৃদ্ধি প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম ইনকিলাবকে বলেন, সাধারণত রপ্তানি কম হলে বা আমদানি বেশি হলে ডলারের দাম বাড়ে। আর তাই মাঝে মাঝে ডলারের দাম বাড়ে-কমে। তবে ক্যাসিনো বা দুর্নীতি বিরোধী অভিযানের কারনে নগদ টাকার পরিবর্তে ডলার কিনে রাখছে বা বিদেশমুখী হচ্ছে এটা যৌক্তিক নয়।
তিনি বলেন, এক শ্রেণির মানুষ এখন নগদ ডলারের চাহিদা মেটাতে খোলাবাজারে ভিড় করছেন। এতে খোলাবাজারে ডলারের দাম বাড়তে পারে। তাই খোলাবাজরের দাম নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন বলে উল্লেখ করেন সিরাজুল ইসলাম।
সূত্র মতে, গত অর্থবছরে ডলারের জোগান দিতে বাংলাদেশ ব্যাংক মোট ২৩১ কোটি ডলার বিক্রি করেছিল। জানা যায়, বাজারব্যবস্থার ওপর ডলারের দাম ছেড়ে দেওয়া হয় ২০০৩ সালে। এরপর ডলারের দাম স্বয়ংক্রিয়ভাবে নির্ধারতি হওয়ার কথা থাকলেও তা হচ্ছে না। বাংলাদেশে পেছন থেকে ডলারের দাম নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। সংকটকালীন সময়ে সরবরাহ বাড়িয়ে ডলারের বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করা হয়। এতে অর্থনীতিতে এক ধরনের চাপ তৈরি হচ্ছে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন