শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

উদ্ধারকৃত অর্থ-সামগ্রীর নিরাপদ হেফাজত নিশ্চিত করতে হবে

| প্রকাশের সময় : ১ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:০২ এএম

ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানে এ পর্যন্ত ৭ কোটি ২৫ লাখ ৯৮ হাজার টাকা, ১১টি অস্ত্র, ৭২০ ভরি সোনা, ১৬৫ কোটি টাকার এফডিআর, ৫ লাখ মূল্যের মার্কিন ডলার, ৭৫২ সিঙ্গাপুরী ডলার এবং ২০ হাজার কোটি টাকার জালনোট উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানা গেছে। জানা গেছে, অভিযানকালে আরো উদ্ধার করা হয়েছে, মদ, হেরোইন, সিগারেট, কষ্টিপাথরের মূর্তি ও ক্যাসিনো জুয়ার সরঞ্জাম। ২৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অভিযান চালানো হয়েছে ৩৫টি, যার ১৮টি চালিয়েছে র‌্যাব ও ১৭টি পুলিশ। এই ৩৫টি অভিযানে বর্ণিত টাকা ও সামগ্রী উদ্ধার করা হয়েছে। ইতোমধ্যে অভিযানের দায়িত্ব এককভাবে র‌্যাবের ওপর ন্যস্ত হয়েছে। অভিযান আপাতত বন্ধ। অচিরেই শুরু হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নতুন করে ঘোষণা দিয়েছেন, দুর্নীতিবিরোধী অভিযান আরো জোরদার করা হবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, অভিযান ক্যাসিনোর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না। সব ধরনের অপরাধীর বিরুদ্ধে অভিযান চলবে। পর্যবেক্ষকদের মতে, অভিযান বিস্তৃত ও অব্যাহত থাকলে অভিযানলদ্ধ অর্থ ও সামগ্রীর পরিমাণ আরো বাড়বে, যা এমন কি ধারণাকেও ছাড়িয়ে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে অর্থ ও সামগ্রীর যথাযথভাবে সংরক্ষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়াবে। এ ব্যাপারে পুলিশের ওপর মানুষের আস্থা নেই বললেই চলে। অতীতের কিছু ঘটনা এই আস্থা ‘প্রায় নেই হয়ে যাওয়ার’ জন্য দায়ী। র‌্যাবের মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক জানিয়েছেন, অভিযানলদ্ধ অর্থ-স্বর্ণালংকার মামলা করার সময় থানায় জমা দেয়া হয়েছে। সেগুলো আদালতের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা হয়ে যাবে। অভিজ্ঞ মহল মনে করে, মামলা বিচারের জন্য আদালতে ওঠার প্রক্রিয়াটা বেশ দীর্ঘ। এই সময়ের মধ্যে অর্থ ও সামগ্রী ঠিকঠাক মত থাকবে কিনা সেটাই বড় প্রশ্ন। যেখানে উদ্ধার করা হেরোইন পাওডার হয়ে যাওয়ার, নতুন অস্ত্র পুরানো জংধরা পরিত্যাক্ত অস্ত্রে পরিণত হওয়ার, উদ্ধারকৃত আলামতের সংখ্যা কমে যাওয়ার বা হারিয়ে যাওয়ার নজির অতীতে যথেষ্ট, সেখানে কোনোভাবেই পুলিশের ওপর ভরসা করা যায় না। দুদকের অবসরপ্রাপ্ত একজন পরিচালক এ বিষয়ে তার অভিজ্ঞতার যে বিবরণ ইনকিলাবকে দিয়েছেন তা থেকেই বিষয়টি সম্যক উপলদ্ধি করা যায়। এ প্রসঙ্গে এটাও বলা আবশ্যক, উদ্ধারকৃত মালসামান মামলার গুরুত্বপূর্ণ আলামত। এগুলো যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা মামলার প্রয়োজনেই খুব দরকার। যদি কোনো কারণে এর হেরফের হয় বা এর প্রকৃতি বদলে যায় কিংবা পরিমাণ কমে যায় তাহলে বিচার প্রক্রিয়ায় তার প্রভাব পড়তে বাধ্য। তাছাড়া উদ্ধারকৃত অর্থ ও সামগ্রী যদি মামলার রায়ে মালিককে ফেরৎ দিতে হয়, সেক্ষেত্রেও তাদের নিরাপদ সংরক্ষণ অত্যাবশ্যক।

বাস্তবতার এই দিকগুলো আমলে নিয়ে অভিজ্ঞ মহল মনে করে, এমন একটা ব্যবস্থা থাকা উচিৎ যাতে উদ্ধারকৃত অর্থ ও সামগ্রী সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা করে দেয়া যায়। এব্যাপারে একটি আইন বা বিধান করলেই হয়। ওয়াকিবহাল মহলের অজানা নেই, ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ‘ট্রুথ কমিশনের’ মাধ্যমে আদায়কৃত ‘দুর্নীতিলব্ধ অর্থ’ সরাসরি বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা করে দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়। সে মোতাবেক অনুকম্পায় দায়মুক্তি পাওয়া ২৬৫ জন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর ৩৩ কোটি ৮০ লাখ ২১ হাজার ৬৬৮ টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা করা হয়। তখন যে বিধান বা ব্যবস্থায় এটা করা হয়, এখনো সেটা করা যেতে পারে। আর যদি স্থায়ী আইনের প্রয়োজন হয়, সেটাও করার পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে। উল্লেখ করা যেতে দুদকের তরফে ‘অপরাধলদ্ধ সম্পত্তি’ ব্যবস্থাপনার জন্য গত বছর একটি সেল গঠন করা হয়েছে। আদালতের নির্দেশে দুর্নীতিবাজদের সম্পত্তি উদ্ধার করে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেবে এই সেল। সম্পত্তি দেখভাল করা ছাড়াও জরিমানার টাকা আদায় করার দায়িত্বও এই সেল পালন করবে। বলা বাহুল্য, এটা দুদকের নিজস্ব উদ্যোগ ও ব্যবস্থাপনা। দুদকের ক্ষমতা ও কার্যপরিধি বাড়ার কারণে তার আলাদাভাবে অনেক কিছু করতে হচ্ছে। পুলিশ বা অন্য কোনো সংস্থার ওপর থেকে নির্ভরশীলতা কমিয়ে আত্মনির্ভরশীল হতে হচ্ছে। অপরাধলব্ধ সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা সেল গঠন সেরকমই একটা উদ্যোগ বা পদক্ষেপ বলে মনে হয়।।
নানা উপলক্ষে র‌্যাব ও পুলিশকে অভিযান পরিচালনা করতে হয়। অর্থসহ সম্পদ-সামগ্রী উদ্ধার করতে হয়। এ অর্থ ও সামগ্রী সুনির্দিষ্ট কোনো জায়গায় জমা রাখা, নিয়মিত তত্ত্বাবধান করা ও যথার্থ সুরক্ষা নিশ্চিত করা র‌্যাবপুলিশের পক্ষে কতটা সম্ভবপর সেটা অবশ্যই বিবেচনার দাবি রাখে। র‌্যাব এ দায়িত্ব পালন করে না। র‌্যাবের উদ্ধারকৃত অর্থ ও সামগ্রী থানায় জমা দেয়া হয়। পুলিশের উদ্ধারকৃত অর্থ, ও সামগ্রীও থানায় জমা হয়। অথচ থানা-পুলিশ এ দায়িত্বপালনে উপযুক্ত সক্ষমতা দেখাতে পারছে না। এসবের হেফাজত করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, যা নানা কারণে ব্যহত হচ্ছে। অর্থ-সামগ্রী বেহাত বা লোপাট হচ্ছে। সরকারকে এদিকে গুরুত্বসহকারে নজর দিতে হবে। উল্লেখের অপেক্ষা রাখেনা, উদ্ধারকৃত অর্থ ও সামগ্রী দ্রুত ও সরাসরি বাংলাদেশ ব্যাংক জমা করার ব্যবস্থা হলে নিরাপদ থাকবে, সুরক্ষিত থাকবে। লোপাট বা নষ্ট হওয়ার আশংকা থাকবে না। বাংলাদেশ ব্যাংকে এ ধরনের ব্যবস্থাও আছে। কাজেই, যত দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া যায়, ততই মঙ্গল।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন