রোববার, ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

গ্যাস সিলিন্ডার ঝুঁকিমুক্ত করতে হবে

| প্রকাশের সময় : ২ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:০২ এএম

প্রাকৃতিক গ্যাসের আভ্যন্তরীণ মজুদ কমে আসলেও দেশে গ্যাসের চাহিদা ক্রমে বেড়ে চলেছে। এই সুযোগে রমরমা হয়ে উঠেছে এলপি গ্যাস সিলিন্ডারের ব্যবসা। গৃহস্থালির রান্নার কাজে এলপিজি সিলিন্ডার ব্যবহারের পাশাপাশি যানবাহনে এলপিজি ব্যবহারের হারও দিন দিন বেড়ে চলেছে। সারাবিশ্বেই পেট্টোলিয়াম ও বিদ্যুতের পাশাপাশি এলপিজি ব্যবহারের হার বাড়ছে, সেই সাথে বাড়লে নবায়নযোগ্য জ্বালানীর ব্যবহার। তবে আমাদের দেশের মত এতটা ঝুঁকিপূর্ণভাবে বিশ্বের আর কোথাও এলপিজি সিলিন্ডার ব্যবহৃত হয় কিনা তা আমাদের জানা নেই। প্রায় প্রতিনিই দেশের কোথাও না কোথাও এলপি গ্যাসের সিলিন্ডার বিষ্ফোরিত হয়ে হতাহতের খবর পাওয়া যাচ্ছে। গতকাল ইনকিলাবে প্রকাশিত এক রিপোর্টে জানা যায়, ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ণ ইউনিটে চিকিসারত রোগীদের শতকরা ৪২ ভাগই গ্যাসের আগুনে দগ্ধ রোগী। বার্ণ ইউনিটের সংশ্লিষ্টরা গড়ে প্রতিমাসে ৫০০ রোগী ভর্তির তথ্য দিয়েছেন। এটা শুধু ঢাকা মেডিকেলের বার্ণ ইউনিটের তথ্য। সারাদেশে এ সংখ্যা আরো অনেক বেশি। এসব রোগীর মধ্যে কিছু সিলিন্ডার বিষ্ফোরণের শিকার হলেও অনেকেই নিজেদের অসর্তকতার কারণে দুর্ঘটনার শিকার। গ্যাস লিকেজ হয়ে আগুন ধরে যাওয়া অথবা ত্রুটিপূর্ণ সিলিন্ডারের বিস্ফোরণে ক্ষয়ক্ষতির দায় সংশ্লিষ্ট গ্যাস কোম্পানী এবং মান নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থাগুলো এড়াতে পারে না। দুর্ঘটনা ও মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে মেয়াদোত্তীর্ণ ও মানহীন গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি করছে কোম্পানী ও এজেন্টরা।

গ্যাস সিলিন্ডার থেকে বিস্ফোরণ ও দুর্ঘটনায় ক্ষয়ক্ষতি ও হতাহতের সংখ্যা দ্রæত বেড়ে গেলেও এর বিরুদ্ধে সরকারের সংশ্লিষ্টদের পক্ষ থেকে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না। গ্যাস সিলিন্ডারের নিরাপত্তা ও মাননিয়ন্ত্রণের কার্যকর ব্যবস্থা না থাকায় বাসাবাড়ি ও যানবাহনে সিএনজি ব্যবহারকারীদের মধ্যে কে টাইমবোমার উপর বসে আছে তা কেউ বলতে পারে না। তবে গাড়ীর চাইতে বাসাবাড়ির গ্যাস সিলিন্ডারেই দুর্ঘটনা ও অগ্নিকান্ডের ঘটনা বেশি ঘটছে। গত বছর মোট প্রায় সাড়ে তিনহাজার অগ্নিকান্ডের তথ্য দিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। প্রকৃত সংখ্যাই যাই হোক, এটা খুবই উদ্বেগের বিষয় যে, দেশে গ্যাসের ক্রমবর্ধমান চাহিদা সিলিন্ডারের মাধ্যমে পুরণের বিকল্পহীন ব্যবস্থার দিকে ঠেলে দেয়া হলেও গ্যাস সিলিন্ডারের মান, ঝুঁকি এবং প্রতারনার বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো নজরদারি ও মাননিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করেনি। একদিকে মেয়াদোত্তীর্ণ ও মানহীন গ্যাস সিলিন্ডারের অবাধ বিপণন চলছে, অন্যদিকে চলছে সিলিন্ডারে গ্যাসের বদলে ২৫-৩০ ভাগ পানি ভরে গ্রাহকদের ঠকাচ্ছে গ্যাস রিফিল কোম্পানী। নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে যেনতেন প্রকারে ভিন্ন কোম্পানী থেকে সিলিন্ডার রিফিল করে বিক্রির অভিযোগও পাওয়া যাচ্ছে।

দেশীয় গ্যাস ক্ষেত্রগুলোর মজুদ ফুরিয়ে আসায় নতুন নতুন গ্যাস ক্ষেত্র আবিষ্কার ও উন্নয়ন করা না হলে আমদানীকৃত এলপি গ্যাস দিয়েই ভবিষ্যতের ক্রমবর্ধমান চাহিদা পুরণ করা হবে। আমদানীর মাধ্যমে গ্যাসের চাহিদা পুরণে ইতিমধ্যে দেশের দক্ষিনের সমুদ্রোপুকূলে এলপিজি টার্মিনাল নির্মান করা হয়েছে। দেশের শিল্পায়ণ এবং জ্বালানী চাহিদা পুরণে সরকারের এসব উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই। তবে জ্বালানী সরবরাহ ব্যবস্থাকে নিরাপদ রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বাসাবাড়িতে পাইপলাইনে গ্যাস সরবরাহ করা হলে সিলিন্ডারের ব্যবহার এতটা ব্যাপক হত না। এক শ্রেনীর উদ্যোক্তা গ্যাস সিলিন্ডারের ব্যবসার প্রসারে ব্যস্ত থাকলেও সিলিন্ডারে গ্যাসের পরিমান এবং নিরাপত্তামূলক মান নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে তাদের অনীহা ক্ষমাহীন। ভেজাল বিরোধী অভিযানের আওতায় গ্যাস সিলিন্ডারের নিরাপত্তা ও মান নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার জন্য সংশ্লিষ্টদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। গ্যাস সিলিন্ডার থেকে যে সব দুর্ঘটনা ঘটছে সে সবের সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে সংশ্লিষ্ট কোম্পানী ও এজেন্টদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এবং ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপুরণ দিতে বাধ্য করতে হবে। অননুমোদিত ও মানহীন সিলিন্ডার রিফিলিং প্লান্টের ব্যবসা করার সুযোগ বন্ধ করতে হবে। মেয়াদোত্তীর্ণ গ্যাস সিলিন্ডার বাজার থেকে তুলে নিতে হবে। গাড়ীতে এবং বাসাবাড়িতে অদক্ষ ব্যক্তিদের দিয়ে সিলিন্ডার স্থাপন ও সংযোজনের কাজ থেকে বিরত রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। সেই সাথে গ্রাহক পর্যায়ে গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহারে প্রয়োজনীয় নজরদারি, রক্ষণাবেক্ষণ, সতর্কতা ও সচেতনতা নিশ্চিত করতে হবে। মানহীন, মেয়াদোত্তীর্ণ ও পানিভর্তি ভেজাল গ্যাস সিলিন্ডারের বিরুদ্ধে সারাদেশে জোরদার অভিযান চালাতে হবে। সিলিন্ডার ক্রয় এবং স্থাপনের আগে নিরাপত্তার বিষয়টি আগে ভাবতে হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন