সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

দেশি-বিদেশি মুদ্রা ও মাদক উদ্ধার

অনলাইন ক্যাসিনো হোতা সেলিম প্রধানের বাসায় অভিযান

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:০১ এএম

অনলাইন ক্যাসিনো চালানোর মূল হোতা সেলিম প্রধানের বাসায় অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ দেশি-বিদেশি মদ, নগদ টাকা ও বিদেশি মুদ্রা জব্দ করেছে র‌্যাব। গত সোমবার দুপুরে তাকে আটকের পর রাত ১০টা থেকে গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ২টা পর্যন্ত এ অভিযান চলে। অভিযানে তার সহযোগী আক্তারুজ্জামান ও রহমানকে আটক করা হয়।

র‌্যাব জানায়, অনলাইন ক্যাসিনো থেকে সেলিমের মাসিক আয় ৯ কোটি টাকা। চীন, হংকং, কোরিয়াসহ ৫ দেশ থেকে বাংলাদেশে অনলাইনে ক্যাসিনো বা জুয়া খেলা নিয়ন্ত্রণ করতেন সেলিম। অভিযান শেষে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সারওয়ার বিন কাশেম বলেন, অভিযানে ৪০ বোতল বিদেশী মদ, ২৩ দেশের ৭৭ লাখ টাকা মূল্যের মুদ্রা, ৮ কোটি টাকার চেক, দুটি হরিণের চামড়া, নগদ ২১ লাখ ২০ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। সেলিম প্রধানের বাসা থেকে হরিণের চামড়া পাওয়ায় বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন, টাকা জব্দের ঘটনায় মানি লন্ডারিং আইন ও মদ পাওয়ায় মাদকদ্রব্য আইনে মামলা করা হবে। এ সব মামলায় সেলিম প্রধান ও তার দুই সহযোগী আক্তারুজ্জামান ও রহমানকে গ্রেপ্তার দেখানো হবে।

তিনি বলেন, সোমবার রাতে প্রথমে গুলশানের ৯৯ নম্বর সড়কের ১১ নম্বর বাড়ির চতুর্থ তলায় সেলিমের অফিসে অভিযান শুরু করে র‌্যাব। ওই অফিস থেকেই অনলাইন ক্যাসিনো পরিচালনা করা হতো। সেখান থেকে ক্যাসিনোর সার্ভার ও ল্যাপটপ জব্দ করা হয়। পরে গতকাল মঙ্গলবার সকালে ফের বনানীর ২ নম্বর রোডের ৬ নম্বর বাড়িতে অভিযান চালানো হয়।

র‌্যাব কর্মকর্তা বলেন, অনলাইনে ক্যাসিনো খেলতে তিনটি গেটওয়েতে জমা হতো। খেলায় জিতলে টাকা গ্রাহকের অ্যাকাউন্টে ফেরত যেত, আর হারলে টাকাগুলো গেটওয়েতে থেকে যেত। সেলিমের সহকারী মো. আক্তারুজ্জামান প্রতি সপ্তাহে সেই গেটওয়ের টাকা উত্তোলন করে তিনটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা করতেন। এরপর সে সব টাকা হুন্ডির মাধ্যমে অথবা সঙ্গে করে বিদেশে পাচার করা হতো। সেলিম বিভিন্নভাবে লন্ডনেও টাকা পাঠিয়েছেন বলে জানা গেছে। একটা গেটওয়ে থেকে প্রতি মাসে ৯ কোটি টাকা লেনদেনের তথ্য পেয়েছে র‌্যাব।

র‌্যাব কর্মকর্তা বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সেলিম জানিয়েছেন, ১৯৮৮ সালে সে বড় ভাইয়ের মাধ্যমে জাপান যান। সেখানে একজন থাই ও একজন কোরীয় নাগরিকের সঙ্গে পরিচয় হয়। কোরীয় নাগরিকের মাধ্যমেই তিনি অনলাইন ক্যাসিনো ব্যবসায় নামেন। তিনি ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন আল মামুনকে বিএমডবিøউ গাড়ি উপহার দিয়েছিলেন।

আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সামনে-পেছনে গাড়ির বহর ও সশস্ত্র দেহরক্ষী নিয়ে কোটি টাকার ল্যান্ডক্রুজার হাকিয়ে চলতেন সেলিম প্রধান। প্রটোকল দেখেই মনে হবে তিনি প্রভাবশালী কেউ। দেশে-বিদেশে তার গাড়ি, বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। বিদেশের ব্যাংকে রয়েছে হাজার হাজার কোটি টাকা। থাই পাসপোর্ট ব্যবহার করেন। ব্যাংক থেকে বিপুল টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাত করেছেন সেলিম প্রধান। অভিযোগ রয়েছে, হাজার হাজার কোটি টাকা দেশের বাইরে পাঠিয়েছেন প্রভাবশালী কয়েক নেতা।

সূত্রমতে, দু’জন বাংলাদেশী স্ত্রী ছাড়াও জাপানি, আমেরিকান ও রাশিয়ান মিলে মোট পাঁচ স্ত্রী রয়েছে তার। প্রায় প্রতিটি বিয়েই করেছেন সংশ্লিষ্ট দেশে বিনিয়োগ ও বসবাসের সুযোগ সৃষ্টির জন্য। বাংলাদেশি স্ত্রীদের মধ্যে রয়েছেন চট্টগ্রামে কর্মরত একজন কাস্টমস কমিশনার। থাইল্যান্ড ও জাপানে রয়েছে তার বিপুল অর্থ ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। থাইল্যান্ডের পাতায়া শহরে ২০০৪ সালের শেষের দিকে হোটেল ও ডিস্কো বার চালু করেছেন। থাইল্যান্ডের আদলে ঢাকার গুলশানে গড়ে তোলেন স্পা সেন্টার। সেলিম প্রধানের স্পা সেন্টারটি পরিণত হয়েছিল প্রমোদালয়ে।

সুবিধাবাদী সেলিম এখন যুবলীগ নেতা হিসেবে নিজেকে পরিচয় দেন। বিএনপির সরকারের আমলে প্রভাবশালী ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন আল মামুনের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা ছিল। তার বিরুদ্ধে বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগ উঠে ২০১৪ সালে। রূপালী ব্যাংকের ১শ’কোটি টাকা আত্মসাত করার অভিযোগ রয়েছে। জাপানে থাকাবস্থায় বিয়ে করেন সেখানে। অপরাধমূলক কর্মকান্ডের জন্য জাপান ছাড়েন। আমেরিকায় আশ্রয় নিয়ে সেখানেও বিয়ে করেন। আমেরিকা থেকে ফের জাপানে গেলে তাকে গ্রেফতার করে বাংলাদেশে পাঠানো হয়। সূত্র আরও জানায়, শুধু অনলাইন ক্যাসিনো পরিচালনা নয়, রাজশাহীসহ সীমান্ত এলাকায় ভারতীয় গবাদিপশুর সব খাটাল ও মাদক সিন্ডিকেটের হোতা তিনি। এমনকি সীমান্তে জালটাকার মূল সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণও তার হাতে।

প্রসঙ্গত, গত ১৮ সেপ্টেম্বর দেশে ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরু হলে আতঙ্কে ছিলেন সেলিম প্রধান। অভিযান চলাকালে আত্মগোপনে ছিলেন তিনি। তবে গত সোমবার দুপুরে থাইল্যান্ডে যাওয়ার সময় থাই এয়ারওয়েজের টিজি-৩২২ নম্বর ফ্লাইট ছাড়ার আগমুহূর্তে গ্রেফতার করা হয় তাকে। তার গ্রামের বাড়ি নারায়ণগঞ্জে। ঢাকার মোহাম্মদপুরের নূরজাহান রোডে তার বাসা রয়েছে। তার বাবার নাম হান্নান প্রধান। অনলাইনে ক্যাসিনো ছাড়াও তিনি ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের সহসভাপতি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন