আজ থেকে শুরু হচ্ছে পাঁচ দিনব্যাপী দুর্গাপূজা। ষষ্ঠীপূজার মধ্য দিয়ে সূচনা ঘটছে এই পূজার। ৮ অক্টোবর মঙ্গলবার বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে এর শেষ হবে। হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় এ উৎসবকে ঘিরে সারাদেশের সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মাঝে এখন উৎসবের আমেজ বইছে।
এদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার সারাদেশের পূজাম-পগুলোতে দুর্গা দেবীর বোধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। দুর্গাপূজার প্রাক্কালে এই বোধনের মাধ্যমে দক্ষিণায়নের নিদ্রিত দেবী দুর্গার নিদ্রা ভাঙার জন্য বন্দনা পূজা করা হয়। ম-পে-মন্দিরে পঞ্চমীতে সায়ংকালে তথা সল্পব্দ্যায় এই বন্দনা পূজা অনুষ্ঠিত হয়।
সনাতন বিশ^াস ও পঞ্জিকামতে, জগতের মঙ্গল কামনায় দেবী দুর্গা এবার ঘোটকে (ঘোড়া) চড়ে মর্ত্যলোকে (পৃথিবী) আসবেন (আগমন)। যার ফল হচ্ছে ফসল ও শস্যহানি। দেবী মর্ত্যলোক থেকে বিদায়ও নেবেন ঘোটকে চড়ে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, রোগ ও মহামারীর প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাবে।
এবার সারাদেশে ৩১ হাজার ৩৯৮টি পূজাম-পে দুর্গোৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে বলে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ জানিয়েছে। যা গতবারের তুলনায় ৪৮৩টি বেশি। আর ঢাকা মহানগরীর এবারের পূজাম-পের সংখ্যা ২৩৭টি, যা গত বছরের তুলনায় ১০টি বেশি। শারদীয় দুর্গাপূজার প্রথম দিনে আজ ষষ্ঠীতে দশভূজা দেবী দুর্গার আমন্ত্রণ ও অধিবাস। ষষ্ঠীতিথিতে সকাল ৯টা ৫৭ মিনিটের মধ্যে দেবীর ষষ্ঠ্যাদি ষষ্ঠীবিহিত পূজা। সায়ংকালে দেবীর আমন্ত্রণ ও অধিবাসের মধ্য দিয়ে শুরু হবে মূল দুর্গোৎসব। আগামীকাল শনিবার মহাসপ্তমী, রোববার মহাষ্টমী ও কুমারী পূজা, সোমবার মহানবমী এবং মঙ্গলবার বিজয়া দশমী। শেষ দিনে প্রতিমা বিসর্জন ও বিজয়ার শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে।
ষষ্ঠীতে কল্পারম্ভ এবং দেবী দুর্গার আমন্ত্রণ ও অধিবাস শেষে মাতৃরূপে বিভিন্ন পূজা ম-পে ঠাই করে নেবেন বিশ্বব্যাপী মঙ্গল ধ্বনি দিয়ে কৈলাশ ছেড়ে মর্ত্যে আসা মা দুর্গা। মূলতঃ দুর্গাপূজা হয় আশ্বিনের শুক্লা ষষ্ঠী থেকে শুরু করে দশমী পর্যন্ত। এ সময় ভক্তরা মেতে উঠবে আরাধনায়, ঢাকে পড়বে কাঠি আর ধূপের ধোঁয়া ও ঢাক-ঢোলের সঙ্গে দেবী দুর্গার ভক্তিতে সরব হয়ে উঠবে পূজা ম-প। চলবে বিসর্জনের আগ পর্যন্ত। ৫ দিন ব্যাপী শারদীয় দুর্গোৎসবের দশমী এবার মঙ্গলবার।
রাজধানীসহ সারাদেশেই বিভিন্ন সার্বজনীন পূজা ম-পে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। মূর্তি কারিগররা প্রতিমার অবয়ব গড়ার কাজ আগে শেষ করে ফেললেও এখন শেষ সময়ে তারা ব্যস্ত তুলির আঁচড়ে মা দুর্গাকে উদ্ভাসিত করে তোলার কাজে। বোধনের আগেই শেষ হয়েছে শেষ তুলির আঁচড়, পড়ানো হয়েছে প্রয়োজনীয় অলংকার। নিপুন শিল্পকর্মে শুধু মা দুর্গাই নয়, জেগে উঠেছে লক্ষ্মী, সরস্বতী, গনেশ, কার্তিকসহ অন্যান দেবতারাও।
গতকাল শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষে রাজধানীর ঢাকেরশ্বরী জাতীয় মন্দিরে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটি। সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন কমিটির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট কিশোর রঞ্জন ম-ল। কমিটির সভাপতি শৈলেন্দ্রনাথ মজুমদারসহ অন্যান্যরাও উপস্থিত ছিলেন।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, এবার ঢাকা মহানগরে ২৩৭টি ম-পে দুগাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। গুলশান-বনানী, ধানমন্ডি, উত্তরা, সিদ্ধেশ্বরী, সূত্রাপুর, খামারবাড়ি, কোতোয়ালি, মিরপুরসহ বিভিন্ন মন্দিরে জাঁকালোভাবে দুগাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। পূজার প্রস্তুতি নিয়ে ইতোমধ্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পুলিশের আইজি ও মহানগর পুলিশ কমিশনার, ডিজিএফআই, ঢাকা মহানগরের সংসদ সদস্যরাসহ বিভিন্ন পর্যায়ে বৈঠক হয়েছে। তারা পূজার সময় আইন-শৃঙ্খলা স্বাভাবিক থাকবে বলে আশ্বস্ত করেছেন।
শারদীয় দুর্গোৎসব যেন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয় সেজন্য মহানগর এলাকার মন্দিরগুলোতে কিছু নির্দেশনাও দিয়েছে কমিটি। এগুলো- পূজাম-পে নারী ও পুরুষের আগমন এবং নির্গমনেরর আলাদা পথ রাখা, প্রতিটি ম-পে কমপক্ষে ১০জন নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবক ২৪ ঘণ্টা তদারকি ও পাহারার ব্যবস্থা রাখা, আতশবাজি ও পটকা না ফোটানো, ৮ অক্টোবর রাত ১০টার মধ্যে বিসর্জন সম্পন্ন করা, পূজার মন্দির ও সমগ্র এলাকায় পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা রাখা, ভক্তিমূলক সংগীত ব্যতীত অন্য সংগীত বাজানো থেকে বিরত থাকা, সংশ্লিষ্ট প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখা।
শুক্রবার ষষ্ঠী পূজার মাধ্যমে শুরু হয়ে মঙ্গলবার বিজয়া দশমীর মাধ্যমে সমাপ্তি ঘটবে। প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ আবদুল হামিদ ষষ্ঠী পূজার দিন বিকেল ৫টা ১০ মিনিটে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির পরিদর্শন করবেন। ওই দিনই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল মন্দির পরিদর্শন করবেন বিকাল ছয়টায়। তার সঙ্গে পুলিশের আইজিপি, র্যাবের মহাপরিচালক, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে। এছাড়া সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও জাতীয় মন্দির পরিদর্শন করবেন বলে জানানো হয়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন