শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সারা বাংলার খবর

বিশ্ব বসতি দিবস উদযাপিত

৪৬ লাখ মানুষের আবাসন নিশ্চিত করতে পারেনি গৃহায়ন মন্ত্রণালয়

পঞ্চায়েত হাবিব : | প্রকাশের সময় : ৮ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

বসতভিটা নেই, দেশে এমন পরিবারের সংখ্যা ৪৬ লাখ। নিজেদের ভিটা না থাকায় তারা থাকেন বেড়িবাঁধে না হয় বস্তির ঝুপড়িঘরে ভাড়া। এসব পরিবারের আয়ের ৫০ ভাগই যায় বাড়িভাড়ার পেছনে। জীবন-জীবিকার তাগিদে শহরমুখী জন¯্রােত অব্যাহত থাকায় বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ছে রাজধানী ঢাকাসহ বিভাগীয় শহর-নগরগুলো। এমন প্রেক্ষাপটে গতকাল সোমবার পালিত হয়েছে বিশ্ব বসতি দিবস। প্রতি বছরের মতো এবারও ফাঁকা বুলিতে সরকারিভাবে দিবসটি পালিত হয়েছে। বস্তিবাসী গৃহহীনদের আবাসনের কথা বলে বিভিন্ন সময় নানা প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। এসব প্রকল্পের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা লুটেপুটে খাওয়া হয়, কিন্তু কোনো প্রকল্প বাস্তবায়ন হয় না। বসতবাড়িহীন ৪৬ লাখ পরিবারের ভাগ্যবদলের কোনো পরিবর্তন হয় না। তাদের বিষয়ে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং অধীন প্রতিষ্ঠানগুলো এখন পর্যন্ত কথার ফুলঝুরি ছাড়া কিছুই করতে পারেনি।

প্রতি বছরের মতো এবারও বাংলাদেশে যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি পালিত হয়। এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় ‘বর্জ্যকে সম্পদে পরিণত করতে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার’। সবার জন্য আবাসন নিশ্চিতকরণসহ বাসযোগ্য ও নিরাপদ আবাসস্থলের বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ১৯৮৫ সালে জাতিসংঘ বিশ্ব বসতি দিবস উদযাপনের সিদ্ধান্ত নেয়। ১৯৮৬ সাল থেকে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে অক্টোবর মাসের প্রথম সোমবার বিশ্ব বসতি দিবস উদযাপিত হয়ে আসছে।

গতকাল রাজধানীর শাহবাগে বিশ্ব বসতি দিবস উপলক্ষে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় আয়োজিত র‌্যালির উদ্বোধনকালে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেছেন, দেশের একজন লোকও আবাসনহীন থাকবে না। জনগণের সাংবিধানিক অধিকার বাসস্থান বাস্তবায়নে সরকার কাজ করছে।

তিনি বলেন, দেশের বিত্তবান, মধ্যবিত্ত, নিম্ন-মধ্যবিত্ত, এমনকি যাদের কোনো কিছু নেই অর্থাৎ যারা ভাসমান বস্তিবাসী তাদের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করেছে। একজন লোকও দেশে আবাসনহীন থাকবে না।

গণপূর্ত মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার মনে করে সকলের জন্য আবাসন, কেউ থাকবে না গৃহহীন। এটি ছিল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নির্বাচনী অঙ্গীকার। এ অঙ্গীকার বাস্তবায়নের জন্য সরকার কাজ করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, আমাদের আবাসন প্রকল্পের অন্যতম লক্ষ্য হচ্ছে বাসযোগ্য, পরিবেশসম্মত আধুনিক আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। ঢাকা শহর থেকে গ্রাম পর্যায়ে এবং ‘আমার গ্রাম-আমার শহর’ ধারণাকে কার্যকর করে নাগরিক সুবিধা সকল মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়ার জন্য সরকার কাজ করছে।
স¤প্রতি বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) এক জরিপে উঠে আসে সারা দেশে নিজের বাড়ি আছে তিন কোটি ২৪ লাখ ৬৯ হাজার পরিবারের। ভাড়াবাড়িতে থাকেন ৪৬ লাখ ২০ হাজার, ভাড়া ছাড়াই বাড়িতে বসবাস করেন সাড়ে ছয় লাখ পরিবার। মানুষের আয়ের ৫০ ভাগই যাচ্ছে বাড়িভাড়া দিতেই।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে বহুতল ভবনের সংখ্যা ১৮ লাখ ৫০ হাজার (পাঁচ তলার ওপরে)। পাঁচ তলার নিচে ৩৭ লাখ ৯০ হাজার। সেমিপাকা এক কোটি ১৮ লাখ ৬০ হাজার। কাঁচা দুই কোটি নয় হাজার এবং ঝুপড়ি দুই লাখ ৫০ হাজার। বসবাসের ঘরের গড় আয়তন ৪২৫ বর্গফুট।

পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব বিকাশ কুমার দাস ইনকিলাবকে বলেন, দেখা গেছেÑ বাসার আকার যত বড় ভাড়া তুলনামূলক তত কম। এ ছাড়া ছোট বাসার ভাড়া গুনতে হচ্ছে বেশি। সেই সঙ্গে বস্তিতে যারা থাকছেন তাদের আবাসিক সুযোগ-সুবিধা কম থাকলেও ভাড়া দিতে হচ্ছে বেশি। যে পরিবেশে বাস করুক না কেন, মানুষের আয়ের ৫০ ভাগই যাচ্ছে বাড়িভাড়া দিতেই।

জেলা প্রশাসন সূত্র জানা গেছে, গত কয়েক বছর থেকে শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে পদ্মা নদীর ভাঙন দেখা দেয়। পরে তা আগ্রাসী রূপ নেয়। কয়েক বছরে পদ্মার ভাঙনে নড়িয়া উপজেলার মোক্তারের চর, কেদারপুর ইউনিয়ন ও নড়িয়া পৌরসভার ১৬ গ্রামের পাঁচ হাজার ৩৭০টি পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া পদ্মার ভাঙনে ভেঙে পড়েছে নড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একটি ভবন। অসংখ্য মসজিদ, একটি মন্দিরসহ নড়িয়া-মুলফতগঞ্জ পাকা সড়কের প্রায় ৭ কিলোমিটার এখন পদ্মার পেটে। সাহেবেরচর গ্রামের বাসিন্দা সাগেদ আলী বলেন, আমাগো গ্রামটাই তো নাই। আমরা এখন ভূমিহীন হয়ে গেছি। পাশের একটি গ্রামে জমি ভাড়া নিয়ে ঘর তুলে বসবাস করছি। সরকার যদি আমাগো স্থায়ীভাবে থাকার একটু ব্যবস্থা করে দিত তাহলে বাঁচা যেত।

উল্লেখ্য, সরকারের এক হিসাবে বলা হয়েছে, দেশে এখন ১০ লাখ ৬৯ হাজার ২৬৪ জন ভ‚মিহীন এবং ২ লাখ ৮০ হাজার ৬৩৪ জন গৃহহীন মানুষ রয়েছে। গতকাল প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ বিকালে ঢাকায় শেরেবাংলা নগরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বিশ্ব বসতি দিবস ২০১৯-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিয়েছেন। এর আগে সকাল সাড়ে ৭টায় ঢাকার শাহবাগে ঢাকা ক্লাবের সামনে থেকে সেগুনবাগিচায় গণপূর্ত অধিদপ্তর প্রাঙ্গণ পর্যন্ত এক বর্ণাঢ্য র‌্যালি অনুষ্ঠিত হয়। র‌্যালি উদ্বোধন করবেন গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম। দিবসটি উপলক্ষে হাউজিং অ্যান্ড বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউটের আয়োজনে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র প্রাঙ্গণে গতকাল থেকে তিন দিনব্যাপী গৃহায়ন মেলা শুরু হয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন