ডাকাতিয়া নদীর মাছ মরে পানিতে ভেসে উঠছে। পানিতে অ্যামোনিয়া, পিএইচ ও অক্সিজেনের পরিমান ক্ষতিকর মাত্রায় রয়েছে বলে প্রাথমিক ভাবে ধারণা করা হচ্ছে। সেই সাথে ডাকাতিয়া নদীর তীরে গড়ে ওঠা দুটি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের কেমিক্যাল মিশ্রিত পানির প্রভাবেও ‘মাছ মারা’ যাচ্ছে কিনা তা খতিয়ে দেখছে স্থানীয় মৎস্য বিজ্ঞানীরা।
হঠাৎ মাছে মড়ক লাগায় দেশীয় প্রজাতির মাছসহ আড়াই হাজার ভাসমায় খাঁচায় চাষকৃত কোটি টাকার মাছ মরে ভেসে উঠছে। লোকসানের মুখে পড়েছে আড়াই শতাধিক জেলে। বেকার হচ্ছে চার শতাধিক শ্রমিক।
চাঁদপুর শহরের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া ডাকাতিয়া নদীতে ২০০২ সাল থেকে খাঁচায় মাছ চাষ শুরু হয়। বর্তমানে শহরের নতুনবাজার-পুরানবাজার সেতু থেকে গাছতলা চাঁদপুর সেতু পর্যন্ত প্রায় ৫ কিলোমিটার এলাকায় ডাকাতিয়া নদীতে আড়াই হাজার ভাসমান খাঁচায় চাষ করা হয় কার্প জাতীয় মাছ। এ কাজের সাথে জড়িত রয়েছে আড়াই শতাধিক জেলে।
ক্ষতিগ্রস্থ মাছচাষী মো. তাজুল ইসলাম গাজী বলেন, ডাকাতিয়া নদীতে আমার ৮টি খাঁচা রয়েছে। এসব ভাসমান খাঁচায় তেলামিয়া, রুই, কাতল মাছ চাষ করছি। গত কয়েকদিনে হঠাৎ মাছে মড়ক দেখা দেয়ায় সব মাছ মরে ভেসে উঠছে। কি কারণে হচ্ছে, তা বলতে পারছি না। এতে আমরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।
মৎস্য চাষে জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত সোহেল গাজী জানায়, প্রতিবছর প্রতিটি খাঁচায় স্বল্প সংখ্যক মাছ মারা গেলেও গত ৬ অক্টোবর থেকে ডাকাতিয়া নদীতে ভাসমান চাষকৃত আড়াই হাজার খাঁচার শত শত মণ মাছ মরে ভেসে উঠছে। দীর্ঘদিন মাছ চাষ করলেও এ ধরনের মাছে মড়ক দেখিনি। পানি দুষণ নাকি অন্য কোন কারণে মাছগুলো মরে যাচ্ছে, তা বলতে পারছি না।
চাঁদপুর ডাকাতিয়া নদীতে ভাসমান খাঁচায় মাষ চাষ সমিতির সভাপতি মো. আলমগীর মিয়াজী বলেন, কয়েকদিন যাবত মাছ মরা শুরু হলেও মঙ্গলবার বেশি পরিমাণ মাছ মরে ভেসে উঠতে শুরু করে। খাঁচায় চাষকৃত মাছ তেলাপিয়া, রুই, কাতল, মৃগেলসহ ডাকাতিয়া নদীর দেশীয় মাছ তথা বাইম, আইড়, কালিবাউস মাছও মরে পানিতে ভেসে উঠছে। কি কারণে হঠাৎ মাছ মরে ভেসে উঠছে তা আমরা বলতে পারছি না। মাছ মরে ভেসে উঠায় চাষীরা আর্থিকভাবে অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
তিনি জানান, চাঁদপুরের খাঁচায় মাছ চাষে আড়াইশ’ জন চাষী রয়েছেন। তাদের এই মৎস্য খামার কাজে চার শতাধিক শ্রমিক জড়িত রয়েছে। নদীতে মড়ক লাগায় এই কাজে জড়িত জেলে ও শ্রমিকরা এখন বেকার হওয়ার পথে।
চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আসাদুল বাকি বলেন, নদীতে মাছ মরার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি খাঁচায় চাষকৃত মাছ ও নদীর অনেক মাছ মরে পানিতে ভেসে রয়েছে। এতে মাছ চাষীদের আনুমানিক ৫ কোটি টাকার মত ক্ষতি হয়েছে। প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে পানিতে অ্যামোনিয়া, পিএইচ ও অক্সিজেনের পরিমান ক্ষতিকর মাত্রায় রয়েছে। মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের বৈজ্ঞানিকদের জানিয়েছি তারা পানি, মাটি ও মরা মাছ পরীক্ষা করে রিপোর্ট দিলে প্রকৃত কারণ জানা যাবে।
তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, খাঁচায় মাছ চাষের পাশে নদীতে অবৈধভাবে ‘ঝাঁক’ তৈরি করার কারণে কচুরিপানার জটলা সৃষ্টি হয়। তখন পানির অক্সিজেন ক্ষমতা কমে যায়। ‘ঝাঁক’ দিয়ে মাছ ধরতে গিয়ে ‘বিষ’ দেয়ায় ‘খাঁচায় মাছচাষে’ প্রভাব পড়তে পারে। এ কারণে হয়তো খাঁচায় তেলাপিয়া চাষ ‘অক্সিজেন’ সংকটে মারা যেতে পারে।
তিনি আরো বলেন, চাঁদপুরে ডাকাতিয়া নদীর তীরে দুুটি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র থাকায় সেখানকার কেমিক্যাল মিশ্রিত পানির প্রভাবেও ‘মাছ মারা’ যাচ্ছে কিনা সেটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন