আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে টানা পঞ্চম দিনের মত বিক্ষোভ করছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থীরা।
দশ দফা দাবিতে আন্দোলনরত এই শিক্ষার্থীরা শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টায় বুয়েটের শহীদ মিনার চত্বরে সমবেত হলে স্লোগানে স্লোগানে উত্তাল হয়ে উঠে ক্যাম্পাস।
দাবি আদায়ে বিকাল ৫টায় বুয়েট অডিটোরিয়ামে উপাচার্য সাইফুল ইসলামের সঙ্গে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। দাবি মানা না হলে বুয়েটের সব ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে রেখেছে শিক্ষার্থীরা।
আবরারের খুনিদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা, তাদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আজীবন বহিষ্কার, আবরার হত্যা মামলার সব খরচ এবং ক্ষতিপূরণ বুয়েট থেকে বহ করান, দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্বল্পতম সময়ে মামলা নিষ্পত্তি, অবিলম্বে অভিযোগপত্র প্রকাশ, বিভিন্ন সময়ে নিরর্যাতনে জড়িতদের ছাত্রত্ব বাতিল এবং বুয়েটে সাংগঠনিক ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবি রয়েছে এই দশ দফর মধ্যে।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি মাহমুদুর রহমান সায়েম বেলা সোয়া ১১টায় শহীদ মিনার চত্বরের সমাবেশ থেকে বলেন, “আমরা যে দশ দফা দাবি দিয়েছি, এখনও তার দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি আমরা দেখিনি। দাবিগুলো বাস্তবয়নে সদিচ্ছার অভাব আমরা দেখতে পাচ্ছি।”
তিনি বলেন, উপাচার্য বর্তমান শিক্ষার্থীদের একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে একান্তে একটি কক্ষে কথা বলতে চান মিডিয়ার উপস্থিত ছাড়া। কিন্তু তারা জানিয়ে দেন, বর্তমান চারটি ব্যাচের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সংবাদকর্মীদের উপস্থিতিতেই আলোচনা হতে হবে।
সায়েম বলেন, উপাচার্যের সঙ্গে আলোচনায় বুয়েটের শিক্ষার্থীদের পরিচয়পত্র দেখে অডিটোরিয়ামে ঢুকতে দেওয়া হবে। টেলিভিশন চ্যানেল, দৈনিক পত্রিকা ও পরিচিত অনলাইন সংবাদপত্রগুলোর দুজন করে সংবাদকর্মীকে ভেতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে। কোনো অপ্রচলিত বা ফ্রিল্যান্স সংবাদকর্মীকে ঢুকতে দেওয়া হবে না। আলোচনা চলাকালে লাইভ টেলিকাস্ট করা যাবে না, তবে আলোচনা শেষে প্রচারের জন্য ভিডিও নেওয়া যাবে।
শুক্রবার মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচির পাশাপাশি দুপুরে প্রতিবাদী পথনাটক ও গ্রাফিতি আঁকার কর্মসূচি রয়েছে বুয়েট শিক্ষার্থীদের। এছাড়া বুয়েট ডিবেটিং ক্লাবের আয়োজনে একটি প্রতীকী বিতর্কের আয়োজন করা হয়েছে। পরে তারা সবাই একসঙ্গে অডিটোরিয়ামে যাবেন উপাচার্যের সঙ্গে আলোচনায় যোগ দিতে।
বুয়েটের শেরে বাংলা হলের আবাসিক ছাত্র ও তড়িৎ কৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরারকে গত রোববার রাতে ছাত্রলীগের এক নেতার কক্ষে নিয়ে নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করা হয়। তার পর আন্দোলন চালিয়েশ আসছেন শিক্ষার্থীরা।
আবরার হত্যাকাণ্ডের পর ‘দ্রুত ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থতার জন্য’ সমালোচনার মুখে থাকা উপাচার্য সাইফুল ইসলাম গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় শিক্ষার্থীদের সামনে এসে তোপের মুখে পড়েন। সেদিন তাকে প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টা তালাবন্ধ করে রাখে আন্দোলনকারীরা।
পরদিন কুষ্টিয়ায় আবরারের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েও এলাকাবাসীর প্রতিবাদের মুখে ফিরে আসতে হয় তাকে।
দায়িত্বে ‘ব্যর্থতার জন্য’ ইতোমধ্যে উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি করেছে বুয়েট শিক্ষক সমিতি ও বুয়েট অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন।
এর আগে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় উপাচার্যের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের বৈঠক হওয়ার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা হয়নি।
ভিসির সাথে আলোচনায় ছাত্রলীগকে রাখবে না বুয়েট শিক্ষার্থীরা
টানা পঞ্চম দিনের আন্দোলনে বুয়েটে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের সাথে আলোচনায় বসছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মো: সাইফুল ইসলাম। শুক্রবার বিকেল ৫টায় ভিসি ও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের এই আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এদিকে ভিসির সাথে আলোচনায় ছাত্রলীগের কোনো নেতাকর্মীকে নিতে রাজি নয় বুয়েটের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
এদিকে শুক্রবার বেলা আড়াইটার দিকে বুয়েটের বিভিন্ন আবাসিক হলে আন্দোলনে অংশ নেয়া ছাত্রদের প্রতিনিধিদের নিয়ে আলাদা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠক সূত্র জানা যায়, আবাসিক হলগুলোর প্রতিনিধিরা সবাই একমত হয়েছেন যে, শুক্রবার বিকেল ৫টায় ভিসি অধ্যাপক ড. সাইফুল ইসলামের সাথে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের নির্ধারিত বৈঠকের সময় সেখানে ছাত্রলীগের কোন নেতা বা কর্মী থাকতে পারবেন না।
অবশ্য বৈঠকে ছাত্রলীগকে না রাখার প্রস্তাবে কেউ কেউ দ্বিমত পোষণ করলেও শেষ পর্যন্ত ভিসির সঙ্গে মিটিংয়ে ছাত্রলীগকে না রাখার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল গেট তালাবদ্ধ করে পকেট গেট দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের আইডি কার্ড প্রদর্শন সাপেক্ষ প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে। গণমাধ্যমকর্মীদের প্রবেশেও কড়াকড়ি আরোপ করেছে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
শুক্রবার বিকেল পাঁচটা নাগাদ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সাথে আলোচনায় বসবেন বুয়েটের ভিসি। সেই আলোচনায় আন্দোলনরত ছাত্রদের ১০ দফা দাবিসহ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলোচনা হবে
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন