সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলায় শিশু তুহিনকে নৃশংস কায়দায় খুনের ঘটনায় ক্ষোভে ভাসছে সামাজিক যোগাযোগ্য মাধ্যম। ফেইসবুকে এনিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন নেটিজেনরা। অপরাধীদের দ্রুত গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তারা।
সোমবার (১৪ অক্টোবর) সকালে গাছে ঝোলানো অবস্থায় ওই শিশুর ক্ষতবিক্ষত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তার বয়স সাড়ে পাঁচ বছর। কদমগাছের ডালে ঝুলছিল তুহিনের নিথর দেহ। দুই কান কাটা। পেটে ঢোকানো দুটি ছুরি। নির্মমতার এখানেই শেষ নয়। তার যৌনাঙ্গটিও কেটে নেওয়া হয়।
নিহত শিশু তুহিন হাসান (৫) উপজেলার রাজানগর ইউনিয়নের কেজাউড়া গ্রামের আব্দুল বাছির ও মনিরা বেগমের ছেলে।
ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে শাহিন লিখেছেন, ‘‘এই শিশুর মরদেহ যেভাবে গাছে ঝুলছিল শরীরে ধারালো অস্ত্র বিধ্য অবস্থায়, তা জাহিলিয়াত যুগের মতোই নির্মম! বিচারহীনতার সংস্কৃতিই আমাদের এই নির্মমতা চাক্ষুষ করতে বাধ্য করছে! এর দায় আমাদেরও।’’
অপরাধীদের শাস্তির দাবি জানিয়ে ইকবাল হাসান লিখেছেন, ‘‘দ্রুত তদন্ত করে দোষীদের বিচারের ব্যবস্থা করার অনুরোধ করছি। সন্তান হারা পিতা-মাতাকে আল্লাহ ধৈর্য ধরার তৌফিক দান করুন। আমিন। আমি ব্যত্তিগত ভাবে ক্রস ফায়ারের পক্ষে না। তবে লোমহর্ষক ঘটনা পড়ে আমি অত্যান্ত মর্মাহত তাই এই নিবেদন করছি ।আমারও ঐ বয়সের সন্তান আছে।’’
‘‘বাচ্চাটি আমার ছেলের সমবয়সী। ভেতরের খবর পড়ার মতো মানসিক শক্তি আমার নেই। ইয়া আল্লাহ তুমি সন্তান হারা পিতামাতার সহায় হয়ে যাও। আর হত্যাকারীর জন্য কঠিন থেকে কঠিনতম বিচারের ব্যবস্থা কর’ লিখেছেন মোহাম্মাদ সোলাইমান হোসেন।
আক্ষেপের সাথে মো. রাফি জুবাইদ লিখেছেন, ‘‘এই দেশে কোন বিচার নাই। এক কথাই বলতে গেলে মানুষ নামে সব নর পিসার্চ বাস করতেছে দেশের আনাচে কানাচে। সহজ সরল মানুষের পেছনেই পড়ে রয়েছে। কথাই আছেনা শক্তের ভক্ত নরমের জম।’’
চরম ক্ষোভের সাথে সাইফুল তাসলিম লিখেছেন, ‘‘আমি এই বাচ্চার খুনিদের কখনও ফাঁসি চাইনা। শুধু চাই এই খুনিদের অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে গিয়ে কান কেটে, জিওবা অর্ধেক কেটে, দুই হাতের কনুই পর্যন্ত এবং দুই পায়ের গুড়ালী পর্যন্ত কেটে ছেড়ে দেয়া হোক। এরা এই সমাজে আরো ১০০ বছর বাঁচুক, সারাটা জীবন যেন ঘুমাতে না পারে, সারাটা জীবন যেন এই পাপের শাস্তি বয়ে বেড়াই, এদের জীবনের প্রতিটা মুহুর্ত যেন যন্ত্রণাময় হয় । আমার ক্ষমতা থাকলে তাই করতাম।’’
‘‘এটা কোন মানুষ অথবা কোন জানোয়ারের কাজ হতে পারে না। এই জঘন্য নৃশংসতা এবং নির্দয়তার কাজ একমাত্র মানুষরূপী অমানুষ নামের জানোয়ারের দ্বারাই সম্ভব’’ মন্তব্য শাহীন আলমের।
জাফর ইকবাল লিখেছেন, ‘‘এই বাচ্চার হত্যাকারীদের দ্রুত ক্রসফায়ার করা না হলে হবে মানবতার সাথে চরম অন্যায়। বাবু সোনা ক্ষমা করে দিও এদেশে জন্ম নেওয়া তোমার কোন অপরাধ ছিলনা।’’
দুঃখ প্রকাশ করে সুমন লিখেছেন, ‘‘বর্বরোচিত নাকি বর্বরতা, মুখটা বন্ধ হয়ে গেল; বলতে পারছিনা, ভাবছি আর ঘামছি কখনো ভয়ে হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসে। আমিও বাবা আমারও সন্তান আছে। ঘটনার বর্ণনা শুনে গাঁয়ের লোম দাঁড়িয়ে যাচ্ছে, যে জানোয়ারের এমন খুন করছে তাদের ফাঁসি ছাড়া কোনো বিচার নাই!’’
আমিনুল ইসলাম সুমন লিখেছেন, ‘‘কি বলবো বুঝতে পারছিনা, খুব খারাপ লাগছে এই নিষ্পাপ শিশুটির জন্য, কতো নিকৃষ্ট জানোয়ার হলে এতো কষ্ট দিয়ে একটা বাচ্চা ছেলেকে এই ভাবে মারতে পারে। কেয়ামত আলামত আমাদের দেশে থেকেই শুরু হয়ে গেছে মনে হয়।’’
‘‘মানুষের তৈরি আইন ও সংবিধান দিয়ে দেশ পরিচালনা করলে এমনটাই হবে। মুসলিম রাষ্ট্রে ইসলামিক আইন ও সংবিধান দিয়ে পরিচালনা করলে এমনটা হত না। মানুষ আজ ইসলাম থেকে দূরে তাই এমনটা হচ্ছে। তবুও বলবো অপরাধীদের ধরে তাদের সর্বচ্চো শাস্তি (মৃত্যুদণ্ড) দেওয়া হোক প্রকাশ্য জনসম্মুখে’’ এমন দাবি শায়েখ শাহিনের।
পুলিশ ও নিহতের স্বজনরা জানান, রবিবার রাতে তুহিনের সঙ্গে ঘুমিয়েছিলেন তার বাবা। মধ্যরাতে ঘর থেকে বের হওয়ার সময় তিনি লক্ষ্য করেন ছেলে তুহিন বিছানায় নেই। ঘরের দরজাও খোলা। পরে বাছির ঘটনাটি স্বজন ও প্রতিবেশীদের ডেকে তুহিনকে খুঁজতে শুরু করেন। এর এক পর্যায়ে বাড়ির সামনের রাস্তায় রক্তের দাগ দেখতে পান তুহিনের বাবা বাছির। ওই রক্তের দাগ ধরে এগিয়ে যেতেই গ্রামের পাশে একটি কদম গাছে সন্তানের লাশ ঝোলানো অবস্থায় দেখতে পান তিনি। এসময় তুহিনের শরীরে ধারালো অস্ত্রের আঘাত ছিল। তার পেটে দু’টি ছুরি ঢোকানো ছিল, দু’টি কান কাটা, এমনকি যৌনাঙ্গটিও কেটে ফেলা হয়েছে। পরে সোমবার সকালে পুলিশকে খবর দেন স্থানীয়রা। পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন