শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মহানগর

খুলনা বিএনপিতে নতুন মেরুকরণ

প্রকাশের সময় : ১৮ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম

এ টি এম রফিক/আশরাফুল ইসলাম নূর, খুলনা থেকে : খুলনা মহানগর ও জেলা বিএনপির শীর্ষ নেতাদের মধ্যে দূরত্ব এখন দৃশ্যমান। অতীতে উদযাপিত যৌথ কর্মসূচিসমূহ এখন অনুষ্ঠিত হচ্ছে পৃথক ব্যানারে। নগর শাখার আয়োজনে অনুপস্থিত কয়েক নেতার সরব উপস্থিতি জেলা বিএনপির কর্মসূচিতেই। অরাজনৈতিক কর্মসূচিতে একসাথে দেখা যাচ্ছে না শীর্ষ নেতাদের। দু-একটি কর্মসূচি পালন করে আলোচনায় এসেছেন বিএনপির সাবেক সংগঠকরাও। বিএনপির দুর্গখ্যাত খুলনায় ঐক্যবদ্ধতার চিরচেনা রূপ পাল্টে এভাবে শুরু হয়েছে নতুন মেরুকরণ।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৩৫তম শাহাদাতবার্ষিকী খুলনাতে পৃথকভাবে পালন করেছে মহানগর ও জেলা বিএনপি। এমনকি শীর্ষনেতারা একে অন্যের কর্মসূচিতে উপস্থিতও ছিলেন না। গত ১১ জুন জেলা বিএনপির উদ্যোগে নগরী ও জেলার বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সম্মানে খুলনা ক্লাবে অনুষ্ঠিত হয় ইফতার ও দোয়া মাহফিল। সেখানে মহানগর বিএনপির সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক কেউ উপস্থিত ছিলেন না। তবে নগর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ফকরুল আলম উপস্থিত ছিলেন গত ১০জুন নগরীর একটি অভিজাত হোটেলে অনুষ্ঠিত হাজী কল্যাণ ফাউন্ডেশনের ইফতার মাহফিলে নগর বিএনপির সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জুর পাশের চেয়ারে বসেন জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক এড. শফিকুল আলম মনা। আসন বিন্যাসের কুনকো অজুহাতে দু’জনের মাঝে বিতর্কের সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে চেয়ার ছেড়ে বিএনপি নেতা মনা অন্যত্র বসলে পরিস্থিতি শান্ত হয় বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।
অন্যদিকে, শহীদ জিয়ার শাহাদাৎ বার্ষিকীতে পৃথক কর্মসূচি পালন করেছেন মহানগর বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি শাহারুজ্জামান মোর্ত্তজা। এছাড়া সাবেক ছাত্র নেতা শিল্পপতি তরিকুল ইসলাম জহির ওরফে ভিপি জহিরের নেতৃত্বে খুলনা প্রেসক্লাবে শহীদ জিয়ার শাহাদাৎ বার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভা ও দোয়া-মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। মহানগর শাখার আয়োজনে অনুপস্থিত কয়েকজন নেতার সরব উপস্থিতি থাকছে জেলা বিএনপির কর্মসূচীতেই। আবার, নগরীতে অনুষ্ঠিত জাতীয়তাবাদ আর্দশের বা জনসেবামুলক কর্মসূচিতে মহানগর বিএনপি নেতাদের উপস্থিতি না থাকলেও উপস্থিতি জানান দিচ্ছেন জেলা বিএনপির নেতারা। গত বৃহস্পতিবার খুলনা প্রেসক্লাবের সামনে সংবাদপত্রের কালো দিবসের কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন না নগর বিএনপির শীর্ষ নেতারা। তবে উপস্থিত ছিলেন নগর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ফকরুল আলম ও নগর যুবদলের সভাপতি শফিকুল আলম তুহিন। জেলা বিএনপিসাধারণ সম্পাদক শফিকুল আলম মনার সাথে নগর বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি শাহারুজ্জামান মোর্ত্তজার রাজনৈতিক যোগসূত্রতা আছে কি না; তা নিশ্চিত নন নেতাকর্মীরা।
সুন্দরবন বাঁচাও আন্দোলন খুলনা নামের একটি পরিবেশ ও বন্যপ্রানী সংরক্ষণ রক্ষার সংগঠন করেছেন নগর বিএনপির শীর্ষ নেতারা। সেখানেও ঠাঁই হয়নি জেলা বিএনপির শীর্ষ নেতাদের! এসব নিয়ে তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে চলছে জোর গুঞ্জন।
নাম প্রকাশ না করে দ্বিতীয় সারির একাধিক নেতা বলেন, দু’টি কারণে মহানগর ও জেলা বিএনপির শীর্ষ নেতাদের মধ্যকার দূরত্বের সৃষ্টি। প্রথমত, এক নেতার এক পদের ভিত্তিতে গত ৯ এপ্রিল মহানগর বিএনপির সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জুকে বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মনোনীত করা হয়। দ্বিতীয়ত, খুলনা মহানগর ছাত্রদলের মডেল কমিটি গঠনের চেষ্টা করা। কর্তৃত্ব ও কৃতিত্বের এ দুইয়ের মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছেন নগর ও জেলা বিএনপির শীর্ষ নেতারা।
এ প্রসঙ্গে জেলা বিএনপিসাধারণ সম্পাদক এড. শফিকুল আলম মনা বলেন, ‘মহানগর বিএনপির সাথে জেলা বিএনপির কোন দূরত্ব আছে বলে আমি মনে করি না। বিএনপি দেশের বৃহৎ রাজনৈতিক সংগঠন; তাই পৃথকভাবে কর্মসূচি পালিত হতেই পারে। তবে জেলার কর্মসূচিতে কেন নগর বিএনপির শীর্ষ নেতারা আসছেন না তা আমার বোধ্যগম্য নয়।’
বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও নগর শাখার সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, ‘জেলা বিএনপি একটু সীমিত হয়ে গেছিল। দলের একাধিক সভায় এসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছিল। এখন তারা একটু নিজের পায়ে দাড়ানোর চেষ্টা করুক। একক কর্মসূচি পালন করুক। তবে মহানগর ও জেলা বিএনপির কোন সাংগঠনিক দুরত্ব নেই। জেলা বিএনপির ইফতার মাহফিলের দিন ঢাকায় চেয়ারপার্সনের ইফতার মাহফিলে উপস্থিত ছিলাম। আর ইফতার মাহফিল সম্পর্কে আমাকে কিছু জানানো হয়নি। দু-একজন নেতা নগর কমিটিতে থেকে জেলা বিএনপির প্রতি বেশি দুর্বল তা আমরা জানি।’
উল্লেখ্য, সর্বশেষ ২০০৯ সালের ২৩ নভেম্বর মহানগর এবং পরদিন ২৪ নভেম্বর জেলা কমিটির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। গত ৪ মার্চ জেলা এবং ৫ মার্চ মহানগর বিএনপির সম্মেলন হওয়ার কথা ছিল।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন