মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

গ্যাস সিলিন্ডারের রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক করতে হবে

| প্রকাশের সময় : ১৯ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:০২ এএম

অত্যন্ত ভয়াবহ ও মর্মান্তিক ঘটনা। গত বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম থেকে চিকিৎসা শেষে অ্যম্বুলেন্সে করে বাড়ি ফিরছিলেন একই পরিবারের সদস্যরা। অম্বুলেন্সটি আনোয়ারা উপজেলার চাতরী বাজারে পৌঁছালে এর গ্যাস সিলিন্ডার বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হয়। অ্যাম্বুলেন্সটি চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে পড়ে এবং যাত্রীদের মধ্যে দুইজনের দেহ ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। পরিবারটির অভিভাবক ও তার দুই পুত্রবধূ নিহত হয় এবং তিনজন গুরুতর আহত হয়। এই দুর্ঘটনায় বলা যায়, একটি পরিবার শেষ হয়ে গেল। প্রত্যক্ষদশীরা জানান, বোমা বিস্ফোরণের মতো ভয়ংকর শব্দে এলাকাটি কেঁপে ওঠে। তারা কোনো কিছু বুঝে উঠতে পারছিলেন না। পরে দেখতে পান একটি অ্যাম্বুলেন্স ঘটনাস্থলে দুমড়ে-মুচড়ে পড়ে আছে। উল্লেখ্য, গাড়িসহ বাসা-বাড়িতে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ নতুন কোনো ঘটনা নয়। প্রায়ই সিলিন্ডার বিস্ফোরণে অনেক মানুষ আহত ও নিহত হচ্ছে। একেকটি বিস্ফোরণে পুরো পরিবার নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ার মতো ঘটনাও ঘটছে। গত কয়েক মাসে রাজধানীতেই গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। এতে বেশ কয়েকজন আহত ও নিহত হয়েছে।

গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের মূল কারণ হচ্ছে সময়মতো সিলিন্ডার পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করা। এক্ষেত্রে বিআরটিএসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের গাফিলতি রয়েছে বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন। তারা বলছেন, গ্যাসের সিলিন্ডার মূলত এক ধরনের বোমা সদৃশ। সময়মতো যথাযথভাবে এর মেয়াদ এবং নিরাপত্তার বিষয়টি পরীক্ষা করা না হলে তা বোমার মতোই বিস্ফোরিত হয়। এ পর্যন্ত যতগুলো বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে, তা এই পরীক্ষা না করার কারণেই হয়েছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সারাদেশে প্রায় পাঁচ লাখ সিএনজি চালিত যানবাহন চলাচল করছে। এর মধ্যে এখনও প্রায় দেড় লাখ যানবাহনের গ্যাস সিলিন্ডার পরীক্ষা-নিরীক্ষার বাইরে রয়েছে। এ এক ভয়াবহ ব্যাপার। বলা যায়, এই দেড় লাখ যানবাহন একেকটি বোমা হয়ে দেশব্যাপী ঘুরে বেড়াচ্ছে। যে কোনো সময় একেকটি বিস্ফোরিত হয়ে ভয়ংকর পরিস্থিতির সৃষ্টি এবং বহু মানুষ আহত-নিহত হতে পারে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়া এসব যানবাহন চলাচল নিশ্চিতভাবেই কর্তৃপক্ষ এবং এসব যানবাহনের মালিকদের চরম গাফিলতি ছাড়া কিছুই নয়। শুধু যানবাহনেই নয়, বাসা-বাড়িতে ব্যবহৃত গ্যাস সিলিন্ডার নিয়মিত পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যাপারেও সংশ্লিষ্ট গ্যাস সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর উদাসীনতা রয়েছে। তা নাহলে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হবে কেন? আমরা এখন গ্যাস সিলিন্ডারের যুগে প্রবেশ করছি। আগামীতে বাসা-বাড়িতে গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার করা ছাড়া পাইপে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাবে। এ প্রেক্ষিতে, বলা যায়, এসব সিলিন্ডার যদি যথাযথ মানসম্পন্ন ও পরীক্ষা না করা হয়, তবে প্রতিটি বাসা ভয়াবহ ঝুঁকির মধ্যে থেকে যাবে। বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে, সারাদেশে পাঁচ লাখ যানবাহন গ্যাস সিলিন্ডার নিয়ে চলাচল করলেও এগুলোর পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য রয়েছে মাত্র ২৭টি পরীক্ষা কেন্দ্র যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। তার উপর যেসব যানবাহন গ্যাস ব্যবহার করছে, সিলিন্ডারের নিরাপত্তা নিশ্চিতের ক্ষেত্রে তাদের গাফিলতিও রয়েছে। বিআরটিএ-এর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার করার সাথে সাথে তা নির্দিষ্ট মেয়াদন্তে পরীক্ষা করার বাধ্যবাধকতা থাকলেও অনেকেই তা প্রতিপালন করছে না। লোকবলের অভাবে বিআরটিএ-এর পক্ষ থেকেও পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজটি পুরোপুরি করা যাচ্ছে না। এতে বোঝা যাচ্ছে, পর্যাপ্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থা এবং লোকবল নিয়োগ না করেই একের পর এক গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহারের অনুমোদন দেয়া হচ্ছে। এটা যে মৃত্যুর সাথে বসবাস করার জন্য ঠেলে দেয়া, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

এ কথা অনস্বীকার্য, যতই দিন যাবে যানবাহন থেকে শুরু করে বাসা-বাড়িতে গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার বৃদ্ধি পাবে। এই বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে সিলিন্ডারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরি। এক্ষেত্রে সরবরাহকৃত প্রতিষ্ঠানসহ গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহারকারিদের নিজেদের এবং অন্যের নিরাপত্তার স্বার্থে সতর্ক হওয়ার বিকল্প নেই। আমরা মনে করি, বিআরটিএ ও গ্যাস সিলিন্ডার সরবরাহকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে এ ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি কার্যকর ও সচেতনতামূলক ভূমিকা নিতে হবে। যানবাহনের ফিটনেস পরীক্ষার সাথে সাথে গ্যাস সিলিন্ডারের ফিটনেসের পরীক্ষা করার ব্যবস্থা করতে হবে। গাড়ির রেজিস্ট্রেশনের মতো সিলিন্ডারের রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক করতে হবে। বাসা-বাড়ির গ্যাস সিলিন্ডারের ক্ষেত্রেও তা করতে হবে। রেজিস্ট্রেশন ছাড়া গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহারের অনুমোদন দেয়া যাবে না। সড়কে যেসব ট্র্যাফিক পুলিশ গাড়ির কাগজ-পত্র পরীক্ষার দায়িত্বে থাকেন, তাদেরকে গ্যাস সিলিন্ডারের মেয়াদ এবং রেজিস্ট্রেশন পরীক্ষার দায়িত্ব পালন করতে হবে। মেয়াদোত্তীর্ণ গ্যাস সিলিন্ডারের ক্ষেত্রে জরিমানার বিধান এবং তা দ্রুত পুনঃপরীক্ষা করার নির্দেশ দিলে চালক ও মালিকদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি হবে। এছাড়া টেলিভিশন চ্যানেল ও গণমাধ্যমে বিআরটিএ ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জনসচেতনতামূলক প্রচার-প্রচারণা চালাতে হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন