শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

গণতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ পরিবর্তনই কাম্য

মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, বীর প্রতীক | প্রকাশের সময় : ২০ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:০২ এএম

বুয়েটের মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদকে উল্লাসে আনন্দে উৎফুল্লতায় হত্যা করেছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ নামক ছাত্র সংগঠনের বুয়েট শাখার কিছু নেতাকর্মী। ছাত্রলীগের সাংগঠনিক অভিভাবক হলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভারত সফর শেষে দেশে ফেরত এসে ৯ অক্টোবর প্রেস কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী অনেক বিষয়ে যুক্তিসঙ্গত উত্তর দিতে পারেননি। তার মধ্যে একটি বিষয় হলো, কেন ছাত্রলীগ আবরারকে হত্যা করল? এখানে তিনটি প্রশ্ন জড়িত। এক. আবরারকে ‘শিবির’ সন্দেহে অথবা ভারত-বাংলাদেশ চুক্তির বিরোধিতা করায় ছাত্রলীগ সদস্যরা হত্যা করেছে। ছাত্রলীগের এইরূপ মানসিকতার জন্য কে দায়ী? দুই. ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত, সা¤প্রতিকতম চুক্তি ও সমঝোতাগুলোর পরিপ্রেক্ষিতে আবরার তার নিজস্ব ফেসবুকে দ্বিমত পোষণ করেছে। সেই দ্বিমত পোষণ করার অধিকার তার আছে কি না। স্বাধীন দেশের নাগরিকরা নিজ মত প্রকাশে স্বাধীন হওয়ার কথা। কোন প্রেক্ষাপটে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতাপ্রাপ্ত সংগঠন এই মত প্রকাশে বাধা দিয়েছে? তিন. বুয়েটের ভিসি যে নিয়মে বা যে কর্মকান্ডের মাধ্যমে এই হত্যাকান্ডকে পরোক্ষভাবে প্রশ্রয় দিলেন এবং হত্যাকান্ডের ঘটনা, সাক্ষ্যপ্রমাণাদি প্রকাশিত হওয়ার কর্মটিকে বিলম্বিত করলেন, সেটা কি একজন ভিসির জন্য শোভনীয় কাজ? তিনি কি ক্ষমতাসীন দলের প্রতিনিধি, না কি সরকার কর্তৃক নিযুক্ত, ছাত্র, ছাত্রীদের নিরপেক্ষ অভিভাবক?
এই প্রশ্নগুলোর বিস্তারিত উত্তর নিয়ে আলোচনার অবকাশ এখানে নেই। এর আগে অন্য একটি আলোচনায় আমরা বলতে চেষ্টা করেছি এবং এখনও বলছি, বর্তমান সরকার অর্থনৈতিক অঙ্গনে দুই-চারটি সাফল্যজনক কাজ করেছে বটে; স্বাস্থ্য অঙ্গনে দুই-চারটি ভালো কাজ করেছে বটে; কিন্তু সামাজিক ও রাজনৈতিক অঙ্গনে, নৈতিকতার অঙ্গনে এক ধরনের ধ্বংসাত্মক কাজ করেছে। পররাষ্ট্রনীতি বা আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অঙ্গনে দেশের স্বার্থগুলোকে লঙ্ঘন করেছে তাদের নিজের দলীয় স্বার্থের জন্য। এর পরিণতি বাংলাদেশের মানুষকে দীর্ঘমেয়াদে পোহাতে হবে। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য মহান আল্লাহর সাহায্য চাই এবং নিজেদের সুচিন্তিত কর্মকান্ড চাই।
রাজনৈতিক নেতারা ও কর্মীরা চেষ্টা করতে থাকবেন, পরিকল্পনা করতে থাকবেন, কর্মসূচি প্রণয়ন করতে থাকবেন। বর্তমানে ক্ষমতায় যারা আছেন, তাদের লক্ষ্য আরো এক মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা; এবং এই চাওয়ার স্বপক্ষে তারা যুক্তি উপস্থাপন করেই যাচ্ছেন। ক্ষমতাসীন ১৪ দলীয় জোট ব্যতীত অন্য সব দল, যারা রাজপথের বিরোধী দল, তারা চান দেশের শাসন ক্ষমতা পরিবর্তন হোক এবং এই চাওয়ার স্বপক্ষে তাদেরও যুক্তি আছে। ক্ষমতাসীনরা নিজেদের অনুকূলে যুক্তি উপস্থাপন করেই যাচ্ছেন; বিরোধী অঙ্গনও যুক্তি উপস্থাপন করে যাচ্ছেন। উভয় মহলে মতে, ক্ষমতায় থেকে যাওয়া বা ক্ষমতার পরিবর্তন হওয়া, বাংলাদেশের মঙ্গলের জন্যই প্রয়োজন। জাগতিক দৃষ্টিভঙ্গিতে, পার্থিব নিয়মে, আমরা যার যার চাহিদা উপস্থাপন করব এবং নিজেদের চাহিদা পূরণের জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করব; সরকারি ক্ষমতাসীন অঙ্গন কিংবা জনগণের বক্তব্য উপস্থাপনকারী রাজপথের বিরোধী অঙ্গন। কিন্তু মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের জন্য কী ঘটনা কী অবস্থা বা কী অবস্থান বরাদ্দ করে রেখেছেন, সেটা আমরা কেউ জানি না। বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে শতকরা ৮৫ শতাংশের বেশি, মুসলিম উম্মাহর অংশ। এ দেশের মানুষেরা দক্ষিণ এশিয়ার গণতান্ত্রিক সমাজের অংশ। অতএব, বাংলাদেশের মানুষের ভালোমন্দ, সুবিধা-অসুবিধা ইত্যাদির সাথে দক্ষিণ এশিয়ার এবং বিশ্বব্যাপী মুসলিম উম্মাহর সম্পর্ক থাকতেই পারে। অতএব পার্থিব সব প্রচেষ্টার পাশাপাশি, আন্দোলনের পাশাপাশি, রাজনৈতিক সব চেষ্টার অতিরিক্ত, আমরা মহান আল্লাহর নিকটও প্রার্থনা করতেই থাকব, বাংলাদেশের কল্যাণ বা মঙ্গলের জন্য, দেশের স্থিতিশীল রাজনৈতিক অবস্থানের জন্য, জুলুম ও বৈষম্যবিহীন সামাজিক রাজনৈতিক অবস্থার জন্য। বাংলাদেশের মানুষের জন্য, কল্যাণ পার্টির জন্য, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের জন্য, বাংলাদেশ শাসনকারী ক্ষমতাসীন স¤প্রদায়ের জন্য, বাংলাদেশের মজলুম জনতার জন্য, যেটা ভালো বা যেটাই কল্যাণজনক, সেটাই যেন আল্লাহ তায়ালা দান করেন; এটাই আমাদের প্রার্থনা। মহান আল্লাহ তায়ালা অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ সব জ্ঞানের মালিক। এরূপ উদাহরণ যেহেতু আছে যে, অতীতে তিনি বিশেষ বিশেষ বান্দাহকে বিশেষ জ্ঞান দিয়েছেন, সেহেতু আমরা উৎসাহিতবোধ করতেই পারি যে, তিনি বর্তমানেও তাঁর কোনো না কোনো প্রিয় বান্দাহকে এরূপ বিশেষ জ্ঞান দিতেও পারেন; অবশ্যই আমাদের দৃষ্টির অন্তরালে তথা আমাদের অগোচরে ও অপ্রকাশিতভাবে এবং ওইরূপ প্রিয় বান্দাহরা বাংলাদেশের মানুষকে যেন সঠিক পথের ইশারা দিতে পারেন, তার সুযোগ-অবকাশ-পরিবেশ আমরা মহান আল্লাহর কাছ থেকেই কামনা করছি। আর কোনো নবী আসবেন না; কিন্তু নবীদের আত্মিক বা আধ্যাত্মিক জ্ঞানভিত্তিক উত্তরসূরিরা, মুসলিম উম্মাহর মধ্যে বা সমাজে আছেন এবং ভবিষ্যতেও থাকবেন- এটাই বাস্তবতা। সৎকর্মশীল বা সালেহিন বান্দাহরা আছেন এবং ভবিষ্যতেও থাকবেন এটাই সত্য কথা। কোনোমতেই নিশ্চিতভাবে বলতে পারব না কোনো কিছু, কিন্তু কোনো একজন বিপদগ্রস্ত বান্দাহ, অথবা বিপদগ্রস্ত বান্দাহরা সমষ্টিগতভাবে বা গোষ্ঠিগতভাবে, মহান আল্লাহর কাছে সাহায্য কামনা করতে পারেন; আমরা সেই সাহায্যই কামনা করছি। কেন কামনা করছি? তার ব্যাখ্যা পরের দু’টি অনুচ্ছেদে আছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ইতিহাস থেকে এবং বিশ্ববিখ্যাত সাহিত্য থেকে কয়েকটি কথা ধার করে নিচের অনুচ্ছেদটি লিখলাম। এর পরে বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে বলব। সেই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য আমাদের নিজেদের যেমন চেষ্টা চালাতে হবে, তেমনি মহান আল্লাহর সাহায্যও কামনা করতে হবে।
যেকোনো একটি দেশের ভবিষ্যৎ নির্ভর করে বর্তমানের ওপর এবং বর্তমান উজ্জ্বল হবে না অন্ধকার হবে, সেটা নির্ভর করে নেতা ও কর্মীদের ত্যাগের ওপর। ইতিহাস থেকে একটি উদাহরণ টানছি। বর্তমান ভারতের উত্তর-পূর্ব অংশে তথা বাংলাদেশের উত্তরে এবং উত্তর-পূর্বে ভারতের যে সাতটি প্রদেশ আছে সেই প্রদেশগুলোর একযোগে আমরা পরিচয় দেই ‘সেভেন সিস্টার’ বলে। সেখানে সাতটি প্রদেশের মধ্যে একটির নাম মনিপুর, সেই প্রদেশের রাজধানীর নাম ইমফল। আরেকটি প্রদেশের নাম নাগাল্যান্ড, সেই প্রদেশের রাজধানীর নাম কোহিমা। এখন ভারত এবং মিয়ানমার আলাদা দু’টি রাষ্ট্র। ১৯৪৭ সালের আগে ভারত ছিল ব্রিটিশ কলোনি এবং মিয়ানমার তথা বার্মাও ছিল ব্রিটিশ কলোনি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপান যুদ্ধ করেছিল আমেরিকা ও ইউরোপিয়ান স¤প্রদায়ের বিরুদ্ধে। জার্মানি চেয়েছিল ইউরোপের পরাশক্তি হতে, তেমনি জাপান চেয়েছিল পূর্ব-এশিয়া এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় পরাশক্তি হতে। জাপানি আক্রমণের মুখে তৎকালীন ব্রিটিশ সামরিক বাহিনী দক্ষিণ ও মধ্য বার্মা থেকে পশ্চাৎপসরণ করতে করতে উত্তর দিকে তথা পেছনের দিকে সরে আসতে বাধ্য হয়। এই প্রক্রিয়া এক-দেড় বছর ধরে চলে। এই প্রক্রিয়ায় অনেকগুলো জায়গায় ভীষণ যুদ্ধ (ইংরেজি ‘ব্যাটল’) সংঘটিত হয়েছিল। এরকমই একটি যুদ্ধ হয়েছিল ইমফলে এবং তার থেকেও বড় যুদ্ধ হয়েছিল ইমফল থেকে উত্তরে তৎকালীন কোহিমা শহরে (এপ্রিল ১৯৪৪)। ‘জাপানি সেনাবাহিনীর ৩১ ডিভিশন’ আক্রমণ করেছিল কোহিমা এবং কোহিমা প্রতিরক্ষার দায়িত্বে ছিল ‘ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর দ্বিতীয় ডিভিশন’। সেই যুদ্ধে অনেক হতাহত হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত জাপানিরা কোহিমা দখল করতে পারেনি। জাপানিরা পশ্চাৎপসারণ করে দক্ষিণ দিকে সরে যেতে বাধ্য হয়। যখন কোহিমা সুরক্ষিত বা শান্তি স্থাপিত হয়, তখন ব্রিটিশ বাহিনী তাদের মৃত সৈনিকদেরকে গুছিয়ে সুন্দরভাবে কবর দেয়। কোহিমা যুদ্ধের স্থানে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়, সেই স্মৃতিস্তম্ভের গায়ে একটি বাণী (এপিটাফ) উৎকীর্ণ করা হয়। জন ম্যাক্সওয়েল এডমন্ডস (১৮৭৫-১৯৫৮) নামক ইংরেজ কবি, নাট্যকার তথা সাহিত্যিকের রচিত বাক্যগুলো সেই স্মৃতিস্তম্ভের গায়ে উদ্ধৃত হয়েছে। কোহিমা স্মৃতিস্তম্ভে উদ্বৃত বাক্যটি নি¤œরূপ: ‘হোয়েন ইউ গো হোম, টেল দেম অভ আস অ্যান্ড সে, ফর দেয়ার টুমোরো উই গেইভ আওয়ার ডে।’ এর বাংলা অনুবাদ: যখন তোমরা বাড়ি ফিরে যাবে, তখন আমাদের কথা তাদের স্মরণ করিয়ে দেবে এবং তাদেরকে বলবে যে, ‘আমরা আমাদের বর্তমানকে উৎসর্গ করেছি তাদের ভবিষ্যতের জন্য।’ কথাটা আরেকটু ব্যাখ্যা করে বলি। ধরুন, কোহিমা যুদ্ধের একজন সৈনিক শত্রুর গুলিতে নিহত হওয়ার প্রাক্কালে তার আরেকজন সহকর্মী সৈনিককে বলছেন, যে সহকর্মী ইংল্যান্ডে ফেরত যাবে বা বোম্বাই ফেরত যাবে বা ময়মনসিংহ বা চট্টগ্রাম ফেরত যাবে এবং সেখানে অর্থাৎ ইংল্যান্ড বা বোম্বাই বা ময়মনসিংহ বা চট্টগ্রামে বন্ধু-বান্ধবের সাথে দেখা হবে; দেখা হওয়ার পর হাসিখুশি ভাব বিনিময় হবে এবং বন্ধ-বান্ধবরা ‘আমার’ (অর্থাৎ আমি সেই ব্যক্তি যে কোহিমা যুদ্ধে প্রাণ দিয়েছি) কথা জিজ্ঞাসা করবে, তখন তুমি তাদের বলবে, আমার বর্তমান অর্থাৎ আমার জীবন উৎসর্গ করেছি তোমাদের ভবিষ্যতের জন্য যেন তোমরা হাসিখুশিভাবে খেলতে পারো, ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পারো, দেশ-বিদেশ ঘুরে বেড়াতে পারো। কোহিমা যুদ্ধ-ক্ষেত্রের একটি পাহাড়ের ঢালে যুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভের গায়ে উৎকীর্ণ এই বাণী বিশ্ববিখ্যাত। এখান থেকে উপসংহার নিতে পারি এরকম: একটি প্রজন্মকে ত্যাগ স্বীকার করতে হয় পরবর্তী প্রজন্মের স্বার্থে। ১৯৭০-৭১ সালের তরুণরা ত্যাগ স্বীকার করেছেন, পরের প্রজন্মের জন্য। পরবর্তীকালের প্রজন্ম যদি সে ত্যাগকে সম্মান না করে, সেই ত্যাগ থেকে উদ্দীপনা আহরণ না করে, তাহলে সেটা দুর্ভাগ্য বৈকি!
আমি একজন রাজনৈতিক কর্মী, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান। আমাদের লক্ষ্য একটি কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা। অর্থাৎ বর্তমান অবস্থা থেকে পরিবর্তন না আনলে, আমরা কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে পারব না। অতএব, আমাদেরকে পরিবর্তন আনতেই হবে। তাই আমাদের ঘোষিত নীতিবাক্য হলো ‘পরিবর্তনের জন্য রাজনীতি’। এই পরিবর্তন আনার লক্ষ্যেই রাজনীতিতে নাম লিখিয়েছি। আমি নিজে পরিবর্তনের একজন জোরালো প্রবক্তা। আমরা একা এই পরিবর্তন করতে পারব না; তাই অন্যদের সহায়তা প্রয়োজন। কিন্তু বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিবেশে, পরিবর্তনে আগ্রহী বন্ধু পাওয়া অসম্ভব না হলেও কঠিন। এরূপ আশা-নিরাশার সন্ধিক্ষণে, মহান আল্লাহ তায়ালার একটি বাণী বারবার মনে আসে।
পবিত্র কুরআনের ৩৯ নম্বর সূরার নাম, আজ-জুমার। এই সূরার ৫৩ নম্বর আয়াতের মধ্যে বলা হয়েছে: (আরবিতে) ক্বুল ইয়া ইবাদিয়াল্লাজিনা আসরাফু আলা আনফুসিহিম লা তাকনাতু মির রাহমাতিল্লাহি ইন্নাল্লাহা ইয়াগফির যুনুবা জামিয়া ইন্নাহু হুয়াল গাফুরুর রাহিম। পুরো আয়াতের বাংলা অর্থ এরূপ: ‘বলুন, হে আমার বান্দারা, যারা নিজেদের ওপর জুলুম করেছ, তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহ সমস্ত গোনাহ মাফ করেন। তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ আমি আশাবাদী এই মর্মে যে, আমরা বাংলাদেশের মানুষ, যারা মহান আল্লাহ তায়ালা এবং তাঁর নির্দেশাবলিতে বিশ্বাস করি এবং ওই মর্মে চলতে চাই, আমরা আশাবাদী হবো পরিবর্তনের ব্যাপারে। জুলুম বন্ধ হবে, ন্যায় প্রতিষ্ঠিত হবে, নিষ্ঠুরতা বন্ধ হবে, দয়া প্রতিষ্ঠিত হবে। আমি নিরাশ হতে চাই না। আশাবাদী থাকতে চাই। আমি মনে করি, অনেক কষ্টের এবং অনেক বঞ্চনার কারণে নিশ্চয়ই বাংলাদেশের মানুষ একটি পরিবর্তন চান। সে জন্য ভোটারদেরও পরিশ্রম করতে হবে। একটি উদাহরণ দিচ্ছি। আমার মতে, প্রধানমন্ত্রী তথা আওয়ামী লীগের প্রধান একটি অন্যায় কাজ করেছেন। সে কাজটি হলো: তিনি ২০১১ সালে তত্তব্বধায়ক সরকারপদ্ধতি বাতিল করেছেন। এই অন্যায় কাজটি করার জন্য, অনেক বুদ্ধি, ধৈর্য এবং কৌশল প্রয়োগ বা অবলম্বন করা হয়েছে। কাজটি যত বড় অন্যায়ই হোক না কেন (আলবৎ আমার দৃষ্টিতে বা অনেকের দৃষ্টিতে), কিন্তু হয়েছে একটি নির্বাচিত পার্লামেন্ট দ্বারা। সেজন্যই একটি কথায় জোর দিচ্ছি। দুর্নীতি পরিহার করে সুনীতি যদি আনতে চাই, অনৈতিকতা পরিহার করে নৈতিকতা যদি প্রতিষ্ঠা করতে চাই, পররাষ্ট্রনীতিতে পরনির্ভরশীলতা পরিহার করে যদি আত্মনির্ভরশীলতা আনতে চাই- তাহলে ওইরকম সাহসী পরিবর্তনে আগ্রহী মানুষদের সংসদ বা পার্লামেন্ট প্রয়োজন। বর্তমান (২০১৯) পার্লামেন্টের সদস্যরা আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মানিত হলেও বাস্তবে বা সরেজমিনে নয়। কারণ, বিগত ২৯ ডিসেম্বর দিবাগত রাত্রির ভোট-ডাকাতির মাধ্যমে, এমন পার্লামেন্টের বেশির ভাগ সদস্যই তথাকথিতভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। অতএব, এই পার্লামেন্টের দ্বারা কোনো পরিবর্তন আশা বা কামনাও করা যায় না। আমাদের মূল্যায়নে, বর্তমান সরকারের ওপর বাংলাদেশের মানুষের আর কোনো আস্থা নেই, তাই এই সরকারের পরিবর্তন হওয়া বাঞ্ছনীয়। পরিবর্তনের মাধ্যম গণতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ হওয়াটাই কাম্য।
লেখক : চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন