মহান আল্লাহ ও রসূল স: কে নিয়ে কটূক্তি করার ঘটনাকে কেন্দ্রে করে ভোলার বোরহানউদ্দিনে পুলিশের সাথে তৌহিদী জনতার সংঘর্ষে ৪ জন নিহত হয়। পুলিশ সহ প্রায় দুই শতাধিক আহত হয়েছে। এ ঘটনার প্রতিবাদে সোমবার ৬ দফা দাবীতে ভোলা সরকারী স্কুল মাঠে সমাবেশের ডাক দেয় সর্বদলীয় মুসলিম ঐক্য পরিষদ। প্রশাসনের অনুমতি না পাওয়ায় সোমবার বেলা সাড়ে ১১টায় সর্বদলীয় মুসলিম ঐক্য পরিষদ ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ভোলার পুলিশ সুপার ও বোরহানউদ্দিন উপজেলার ওসির অপসারণসহ ৬ দফা দাবিতে ভোলা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে। এসময় তিন দিনের কর্মসূচী ঘোষণা করেন নেতৃবৃন্দ। সংবাদ সম্মেলন শেষে ভোলা শহরে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে তারা। মিছিলটি শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এদিকে, পুলিশের সাথে ভোলার বোরহানউদ্দিন এর ঘটনাকে কেন্দ্র করে আজও ভোলায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।নিরাপত্তার কারন দেখিয়ে ভোলা জেলার সকল রুটে বাস চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে বলে জানান বাস মালিক সমিতির সভাপতি আকতার হোসেন।বিকালের দিকে বাস চলাচল স্বাভাবিক হয়ে যায়। অন্যদিকে জেলা প্রশাসক মাসুদ আলম সিদ্দিকি আজ সকালে সাংবাদিকদের বলেন ভোলা শান্তিপূর্ণ অবস্থা বিরাজ করছে। এলাকায় যাতে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে তার জন্য সকল সভা সমাবেশ পরবর্তী ঘোষণা না দেয়া পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।বর্তমানে ভোলা বোরহাউদ্দিনে ৪ প্লাটুন বিজিবি,র্যাব,পুলিশ, কোস্টগার্ড মোতায়েন রয়েছে আর ৪ প্লাটুন বিজিবি আসতেছে। এদিকে সকাল থেকেই বিজিবি, র্যাব,পুলিশ এলাকায় টহল দিতে দেখা গেছে। দোকান পাট অনেকাংশে বন্ধ রয়েছে।মুসলিম ঐক্য পরিষদ সদস্য মাওলানা তরিকুল ইসলাম জানান মরা আমরা কর্মসুচী শান্তিপূর্ন ভাবে করতে চেয়ে ছিলাম কিন্তু প্রশাসন অামাদের অনুমতি না দেয়া দুঃখজনক। একটা গনতান্ত্রিক দেশে এভাবে কোন সভা সমাবেশ না করতে দেয়া অগনতান্ত্রিক অাচরন। তবে আজ সরকারি স্কুল মাঠে ঐক্য পরিষদের বিক্ষোভ মিছিল হওয়ার কথা ছিল সেখানে এক্য পরিষদের কোন লোকজন না দেখা গেলেও ফাকা মাঠে পুলিশ, র্যাব, ডিবির উপস্থিতি দেখা গেছে অনেক।
সর্বদলীয় মুসলিম ঐক্য পরিষদের সংবাদ সম্মেলন : মহানবী হযরত মোহাম্মদ ( সঃ) কে কুটুক্তি করা বিপ্লব চন্দ্র শুভর ফাসির দাবী, প্রতিবাদী মুসলিম জনতার উপর পুলিশ কর্তৃক বর্বোরোচিত হামলা করে চার জন শহিদের বিচার,৭২ ঘন্টার মধ্যে ৬ দফা দাবী করে সংবাদ সম্মেলন করেছে সর্বদলীয় মুসলিম ঐক্য পরিষদের অায়োজনে । সকাল ১১.৪০ টায় ভোলা জেলা প্রেস ক্লাবে লিখিত বক্তব্য রাখেন পরিষদের অাহব্বায়ক মাওঃ মিজানুর রহমান।বক্তব্য রাখেন যুগ্ন অাহব্বায়ক মাওঃ তৈয়বুর রহমান,মাওঃ বশির উদ্দিন,মাওঃ তাজ উদ্দিন ফারুকি প্রমুখ।এসময় বক্তারা বলেন এসপি ও ওসির অপসারন সহ তাদের ৬ দফা দাবী অাগামী ৭২ ঘন্টার মধ্যে পুরনের সার্বিক ব্যাবস্থা সরকারের পক্ষ থেকে না করা হলে তারা অারো কঠিন অান্দোলনের কর্মসুচী দিতে বাধ্য হবে। নতুন করে কিছু কর্মসুচীর ঘোষনা দেন ১. মঙ্গলবার বিকালে প্রতি উপজেলায় বিক্ষোভ মিছিল,২. বিথার জেলা শহরে মানব বন্ধন,৩. বৃহস্পতি ও শুক্রবারে মসজিদে মসজিদে দোয়া করা। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে বক্তারা বলেন গতকালকের ঘটনার সঠিক তথ্য উৎঘাটন করে তদন্ত সাপেক্ষে প্রকৃত দোষীদের বিচারের অাওতায় এনে বিচারের দাবী জানান তারা।এক্ষেত্রে সাংবাদিক ও প্রশাসনের সঠিক ভুমিকা পালনের আহব্বান জানান। তারা বলেন গতকালকের ঘটনা পুলিশ গুলি না করে কাঁদুনে গ্যাস বা টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে জনতাকে ছত্রভঙ্গ করে দিতে পারত। কিন্তু তা না করে তারা গুলি করে চারটা তাজা প্রান কেড়ে নিল।এর দায়ভার কে নেবে? একজন প্রকৃত মুসলমান কখনও কোন ফেসবুক আইডি হ্যাক করে মোহাম্মদ( সঃ) নামে কুটুক্তি করতে পারেনা।সঠিক মুসলমান কখনও কোন সন্ত্রাসী বা এধরনের অন্যায় কাজের সাথে জড়িত হতে পারেনা।এক প্রশ্নের জবাবে তারা বলেন একদল সুযোগ সন্ধানী লোক থাকতে পারে হিন্দু ভাইদের উপর বা তাদের ধর্মীয় উপাসানালায়ে হামলা করে মুসলিমদের উপর দোষ চাপিয়ে প্রকৃত ঘটনাকে অন্যদিকে চাপানোর চেস্টা করতে পারে।সেক্ষেত্রে সংখ্যালগুদের উপর যাতে কোন রকম সমস্যা না হয় সেদিকে সকলকে খেয়াল রাখার কথা বলেন। প্রেস ক্লাবের সামনে শত শত মুসলিম জনতা সংবাদ সম্মেলনের সাথে একাত্বতা ঘোষনা করে শান্তিপূর্ন বিক্ষোভ করেন। সংবাদ সম্মেলন শেষে বিক্ষোভ মিছিল করে।সংবাদ সম্মেলনে যে ৬ দফা দাবী করা হয় তা হলঃ ১। অনতিবিলম্বে ভোলা জেলা পুলিশ সুপার, বোরহানউদ্দিনের ওসিকে এবং তদন্ত সাপেক্ষে গুলির হুকুমদাতা ও গুলি বর্ষণকারীদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি দিতে হবে।
২। মহান আল্লাহ তায়ালা, মহানবী হযরত মুহাম্মদ স: ও ইসলাম নিয়ে ব্যাঙ্গ এবং কটুক্তিকারীর বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তির আইন করতে হবে।
৩। আমাদের মহানবী (স.) ও মহান আল্লাহ তায়ালা এবং ইসলাম নিয়ে ব্যাঙ্গ ও কটুক্তিকারী বিপ্লব চন্দ্র শুভকে সর্বচ্চ শাস্তি ফাাঁসি দিতে হবে।
৪। ভোলার বোরহানউদ্দিনের ঘটনায় সংঘর্ষে শাহাদাত বরণকারী ব্যাক্তিদের পরিবারকে সর্বোচ্চ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
৫। সরকারি খরচে আহতদের উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।
৬। বোরহানউদ্দিনের ঘটনায় গ্রেফতারকৃতদের নি:শ্বর্ত মুক্তি দিতে হবে এবং হয়রানিমূলক মামলা বা কাহাকেও গ্রেফতার করা যাবে না। এদিকে এখন পর্যন্ত কোন অপৃতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায় নাই।জানাযায় হাজারো মানুষ অংশগ্রহন করে। ঐক্য পরিষদের নেতা তাজ উদ্দিন ফারকী বলেন জেলা প্রশাসক মাসুদ অালম সিদ্দিক অামাদের দাবী মেনে নিয়ে পোস্ট মর্টেম ছাড়া লাশ দাফনের অনুমতি দিয়েছে। তাদের পারিবারিক ভাবে দাফন করা হয়েছে। এদিকে ভোলা পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কাউসার জানান, ফেসবুকে এ কটূক্তির ঘটনায় হিন্দু বিপ্লব চন্দ্র শুভ, মো. শাকিব ও লিমনসহ তিনজনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা (নং ১৭) দেয়া হয়। এ মামলায় তাদের ভোলা কোর্টে পাঠানো হয়েছে।পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় বোরহানউদ্দিন থানার এসআই আজিজুল হক বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা পাঁচ হাজার জনকে আসামি করে একটি মামলা করেন, যার মামলা নং-১৮, তারিখ: ২০-১০-২০১৯।উল্লেখ্য, রোববার সকাল ১০টায় বোরহানউদ্দিন পৌরসভার ঈদগাহ মাঠে সমাবেশ শেষে শুরু হওয়া এ সংঘর্ষে গুলি, টিয়ারশেল ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। তাতে চারজন নিহত ও শতাধীক অাহত হয়।নিহতরা হলেন- বোরহানউদ্দিন উপজেলার মহিউদ্দিন পাটওয়ারীর মাদ্রাসাছাত্র মাহবুব (১৪), উপজেলার কাচিয়া ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের দেলোয়ার হোসেনের কলেজপড়ুয়া ছেলে শাহিন (২৩), বোরহানউদ্দিন পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মাহফুজ (৪৫) এবং মনপুরা হাজিরহাট এলাকার বাসিন্দা মিজান (৪০)। সর্বশেষ খবর পওয়া পর্যন্ত বোরহাউদ্দিন বিকাল থেকে কিছু দোকানপাট খুলতে শুরু করেছে। ভোলায় মোতায়েনকৃত বিজিবি,র্যাব,পুলিশ রাস্তায় টহল দিচ্ছে। ভোলা শহরে অপৃতিকর ঘটনা এড়াতে অাইনশৃঙ্খলা বাহিনী টহল দিতে দেখা গেছে। দুটি তদন্ত কমিটি গ্রহন করা হয়েছে একটি ডিঅাইজিকে প্রধান করে অন্যটি ভোলা ডিডিএলজিকে প্রধান করে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন