মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

মহানগর

ফ্রিল্যান্সারদের রেজিষ্টেশন করা গেলে বছরে ১ বিলিয়ন ডলার আয় করা সম্ভব

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৬ অক্টোবর, ২০১৯, ৩:৫১ পিএম

দেশে ফ্রিল্যান্স বা আউটসোর্সিং করে অনেক যুবক বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করলেও রেজিস্ট্রেশন না থাকায় সমাজে তাদের মর্যাদা দেয়া হয় না বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান৷ তিনি বলেন, আমরা ফ্রিল্যান্সের রেজিস্ট্রেশন দেয়ার জন্য ডাটাবেজের কাজ শেষ করে এনেছি। আমা করছি আগামী জানুযারি থেকে তাদের রেজিস্ট্রেশনের আওতায় আনতে পারবো। আর এটা হয়েগেলে বছরে প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব বলে জানান তিনি।

শনিবার (২৬ অক্টোবর) ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) নিজস্ব কার্যালয়ে 'দ্য রোল অব মিডিয়া ইন প্রোমটিং এসএমই ডেভেলপমেন্ট এ্যান্ড সাস্টেইনেবিলিটি' শর্ষীক কর্মশালার উদ্বোধনকালে তিনি এসব কথা বলেন। ইআরএফ, বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) এবং প্রজম বাংলাদেশ এ কর্মশালার আয়োজন করে।
ইআরএফএর প্রেসিডেন্ট সাইফুল ইসলাম দিলালের সভাপতিত্বে কর্মশালায় প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্ট্যা সালমান এফ রহমান। বিশেষ অতিথি ছিলেন শিল্প সচিব আবদুল হালিম, বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান মোস্তাক হোসাইন, ইউরোপিয় ইউনিয়নের ফুড সিকিউরিটি এন্ড ন্যাশনাল সাস্টেন্যাবল ডেভোলেপমেন্ট প্রতিনিধি ম্যানফ্রেড ফারনহোলজ প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে সালমান এফ রহমান বলেনন, একদিন এক যুবক আমাকে এসে বললো আমি ফ্রিল্যান্সার। অস্ট্রেলিয়ার এক মহিলার প্রতিষ্ঠানের ওয়েব পেজ ডেভেলপ করে দেয়ার বিনিময়ে তিনি আমাকে ৫০০ ইউএস ডলার পেইড করেছেন। কিন্তু ব্যাংক আমাকে টাকা দিচ্ছে না। ব্যাংক জানতে চায় ওই মহিলার সাথে আমার সম্পর্ক কি, কেনো টাকা পাঠালো, এই সব। এছাড়া বিয়ের বাজার থেকে শুরু করে বাচ্চাকে স্কুলে ভর্তি করতে গেলে নানা বিপত্তিতে পড়েন তারা। তাই ফ্রিল্যান্সারদের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি চান তিনি।

তিনি বলেন, এ ধরনের অনেক অভিযোগ পাওয়ার আমি আইসিটি প্রতিমন্ত্রীসহ বাংলাদেশ ও অন্যান্য ব্যাংকের প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক করলাম। এরপর আমরা ফ্রিল্যান্সাররদের একটি ডাটাবেজ করার উদ্যোগ গ্রহণ করি। এ ডাটাবেজের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এ কাজ শেষ হলেই প্রত্যেক ফ্রিল্যান্সারকে রেজিস্ট্রশনের আওতায় আনা হবে। এ রেজিস্ট্রার্ড থাকলেই তার টাকা উঠাতে ব্যাংক কোনো প্রশ্ন করবে না। এ সনদ দিয়েই তারা অন্যান্য কাজ সহজেই করতে পারবেন।'

সালমান এফ রহমান বলেন, ডাটাবেজ শুরুর আগে আমাদের ধারনা ছিলো দেশে হয়তো দু'এক লাখ ফ্রিল্যান্সার রয়েছে। কিন্তু এ কাজ করতে গিয়ে দেখলাম ফ্রিল্যান্সারের সংখ্যা ৬ লাখেরও বেশি। এবং এরা প্রতিবছর প্রচুর পরিমানে রেমিট্যান্স আয় করছে। এর বেশির ভাগ আসে অবৈধ ভাবে। এদের বৈধতা দিলে বছরে ১ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স দেশে আসবে বলে জানান তিনি।

শিল্প সচিব আবদুল হালিম বলেন, আমাদের সরকারের পলিসিতে দেশের জাতীয় অর্থনীতিকে ২০৩০ সালের মধ্যে বিসিকের অবদান ৪০ শতাংশে নিয়ে যাওয়া। এরমধ্যে এসএমই'র অবদান ২৮ শতাংশ। যা আগেছিল ২৫ শতাংশ। দিন দিন জাতীয় অর্থনীতিতে এসএসই'র অবদান বাড়ছে। বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ হলেও জাতীয় অর্থনীতিতে শিল্পের অবদান সবচেয়ে বেশি। ফলে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আমাদের এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে দেশে দারিদ্র শূর্ণের কোঠায় নামিয়ে আনতে কাজ করে যাচ্ছে। একটা দেশের অতিদারিদ্র ৩ শতাংশে পৌছালে তাকে দারিদ্রমুক্ত দেশ বলা যায়। সেখানে আমাদের দেশে অতি দারিদ্র ১২ শতাংশ। এই দারিদ্র কমাতে সরকারের পাশাপাশি বিসিক কাজ করছে। বিসিকের মাধ্যমে আমরা যে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করছি যাতে আমাদের উৎপাদিত পণ্য দেশের বাইরে নিয়ে যেতে পারে। কিন্তু বিসিকের বাজার ব্যবস্থাপনায় দুবল থাকায় সেটা করতে পারে না। তাই বাহার ব্যবস্থাপনায় গুরুত্ব দিতে হবে। কারন বিসিক যে বাজার তৈরি করছে সেটা দেশের ভিতরে। তাই আমাদের বিদেশের বাজারে প্রবেশ করতে হবে। এজন্য প্রয়োজন দক্ষজনবল। যাতে তারা দেশের তৈরি পণ্য বিদেশের বাজারে নিয়ে যেতে পারে।

মোশতাক হোসাইন বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে সরকার দেশে ৩ কোটি লোকে কর্মসংস্থানের ঘোষনা দিয়েছে। উক্ত সময়ে আমরা ২০ হাজার একর জমিতে ৫০ টি বিসিক শিল্পনগরি গড়ে তুলে এক কোটি লোকের কর্মসংস্থান তৈরি করতে পারবো। এছাড়া প্রায় ১০ হাজার লোককে প্রশিক্ষন দেয়া হবে। বর্তমানে বিসিক শিল্প নগরিতে সর্বোচ্চ এক হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ করেছে উদ্যোক্তারা। আমরা ওয়ান স্টপ সেন্টার চালু করেছি। ফলে দিন দিন এখাত বড় হচ্ছে।

তিনি বলেন, এসএমই উদ্যোক্তাদের সুযোগ না দিলে তারা অপরিকল্পিতভাবে শিল্প গড়ে উঠবে।যা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। এজন্য দেশের আনাচে কানাচে যে শিল্প নগড়ি ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে সেখানে উদ্যোক্তাদের প্লট দেয়া, ঋণের ব্যবস্থাসহ ব্যবসার সুযোগ দিতে হবে। গত ৬২ বছরে দেশে ৭৬ টা শিল্প নগড়িতে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার উদ্যোক্তাকে প্লট দেয়া হয়েছে। এতে সাড়ে ৮ লাখ লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে। এছাড়া দেশের রফতানি বাজারে বিসিকের অবদান ১০ শতাংশ। আমরা প্রায় ৬ বিলিযন মূল্যের পণ্য উৎপাদন করে থাকি। এটা অভ্যন্তরিণ বাজার থেকে সংগ্রহ করা হয়। এর সিংহভাগ রফতানি করা হয়।

মোশতাক হোসাইন বলেন, বিসিকের সফলতার পাশাপাশি ব্যার্থতাও কম নয়। যেমন দেশে ৭৬ টা শিল্প নগরি আছে। কিন্তু চাহিদা ভিত্তিক শিল্পনগড়ি তৈরি করতে পারি নি। ফলে নরসিংদি, মুন্সিগঞ্জ, গাজীপুরসহ ৬/৭ টি জেলায় অপরিকল্পিতভাবে শিল্প গড়ে উঠছে। ফলে নদীর পানি দূষিত হচ্ছে। এপর্যন্ত আমরা সারা দেশে ২ হাজার একর শিল্প নগড়ি তৈরি করতে পেড়েছি। যেটা হওয়া উচিত ছিল ২ লাখ একর জমিতে। এজন্য সেসমস্ত এলাকায় ব্যবসায়ীদের চাহিদা বেশি সেখানে অনেকগুলি শিল্পনগড়ি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন