কলাপাড়ার সমুদ্র সৈকত কুয়াকাটায় আইনী জটিলতাসহ ভূমি প্রশাসনের অবহেলায় বেহাত হচ্ছে সরকারের প্রায় শত কোটি টাকার খাস জমি। প্রভাবশালীসহ ভ’মি দস্যুদের সহায়তায় এসব সম্পত্তি দখল করে টিনের একচালা ঘর থেকে বহুতল ভবন নির্মাণ করে বছরের পর বছর ভোগ-দখল রেখেছেন একটি মহল। ইতোমধ্যে এসব দখলদাররা এ খাস জমির ৭০ শতাংশ তাদের নামে দখল স্বত্বে বিএস জরিপ করিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। বহুতল ভবন তৈরীর সময় বাধাসহ আইনী মোকাবেলা করে এসব সরকারী জমি উদ্ধারে ভূমি প্রশাসন কিংবা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোন কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়া হয়নি এমন দাবী স্থানীয়দের। ভ’মি প্রশাসনের দাবী, আদালতে ভ’মি দখলদারদের করা মামলা চলমান থাকায় দখলদারদের উচ্ছেদসহ কোন আইনী পদক্ষেপ নেয়া যাচ্ছেনা। তবে দখলদারদের করা মামলার বর্তমান অবস্থা সম্পর্কেও কিছুই জানেনা ভূমি প্রশাসন।
সরেজমিনে দেখা যায়, কুয়াকাটার জিরো পয়েন্টের খাস সম্পত্তিতে আবাসিক হোটেল সী-কুইন কর্তৃপক্ষ বিশাল এলাকা দখল করে রির্সোট ও বহুতল ভবণ নির্মাণের কাজ করছে। আবাসিক হোটেল সী-কুইন মালিক জাহাঙ্গীর আলম দখল সত্তে জমি কিনেছেন ৮ শতাংশ। বর্তমানে তিনি পাউবো’র বেরীবাধের জমি ও ১নং খাস খতিয়ানের ২০ শতাংশেরও বেশি জমি দখল করে রির্সোট তৈরী করছেন। সরকারী জমি দখল ও নির্মাণ কাজে স্থানীয় ভূমি অফিস বাধা দিয়ে আসলেও থেমে নেই এ নির্মাণ কাজ।
আবাসিক হোটেল সী-কুইনের সাবেক শেয়ার হোল্ডার জাহাঙ্গীর মোল্লা জানান, সাড়ে ৬ শতাংশ জমি ক্রয় করে সী-কুইন হোটেল নির্মান করি। পরবর্তীতে আ. রহিম খান’র কাছ থেকে ৪ শতাংশ জমি ক্রয় করেন বর্তমান মালিক জাহাঙ্গীর আলম। বর্তমানে প্রায় ১ একর সরকারী খাস জমি দখল করে রিসোর্ট ও আবাসিক হোটেল নির্মান করছেন।
স্থানীয়রা জানা যায়, জেলার কলাপাড়ার লতাচাপলী মৌজার এসএ ৬৪৪ খতিয়ানের ৫৩৭৫ দাগে ২ একর ৯৪ শতাংশ জমি ছিল। পাউবো বেরীবাধ নির্মানের জন্য এ জমির ২ একর ৭০ শতাংশ অধিগ্রহন করে। ফলে ওই দাগে মাত্র ২৪ শতাংশ রেকর্ডীয় জমি অবশিষ্ট থাকে। ১৯৯৭ সালে রাখাইন মংচুমিন তালুকদার গংদের কাছ থেকে নামমাত্র মুল্যে বেরীবাধঁ লাগোয়া ওই জমি থেকে ১ একর ২০ শতাংশ জমি ক্রয় করেন হাজী চাঁন মিয়া হাওলাদার ও ইউপি সদস্য ফজলুল হক খাঁন গংরা। যা ওই মূল অবশিষ্ট জমি থেকে ৯৬ শতাংশ বেশি। দেড় শতাংশ করে ১৬টি প্লট তৈরী করে ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ তৎকালীণ সাংসদ আনোয়ার-উল-ইসলাম সেখানে পর্যটন মার্কেট নামকরণ করে একটি মার্কেট উদ্ভোধন করেন। কয়েকটি ছোট টিনের ঘরের সে মার্কেটের স্থলে গড়ে ওঠে আধাপাকা ও পাকা স্থাপনা। রেকর্ডীয় জমির পাশাপাশি প্লট মালিকরা দখলে নিয়ে যায় পাউবো ও ভূমি প্রশাসনের খাস জমি। এসব প্লটের ও পাকা ভবনের মালিকানায়ও পরিবর্তন হয়েছে একাধিকবার।
এসব জমি সরকারী দাবী করে ভূমি প্রশাসন ওয়ান ইলেভেনের সময় উচ্ছেদের উদ্যোগ নেয়। আবাসিক হোটেল তাজ, ক্যাসাব্লাংকা, সান ফ্লাওয়ার, সী-প্যালেস, হোটেল সী-গার্লসহ কয়েকটি স্থাপনার আংশিক ভেঙ্গেও ফেলা হয়। মার্কেট মালিকরা তখন উচ্ছেদ ঠেকাতে রেকর্ডীয় জমি দাবী করে আদালতের স্বরণাপন্ন হলে আদালত উচ্ছেদে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। থেমে যায় সরকারী জমি উদ্ধার অভিযান। এ সুযোগে ২৪ শতাংশ রেকর্ডীয় জমির স্থলে দুই একরেরও বেশি জমি দখলে নিয়ে যায় দখলদাররা। যার মুল্য প্রায় একশো কোটি টাকা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আবাসিক হোটেল সী-কুইনের মালিক জাহাঙ্গীর আলম জানান, জমির মালিকানা নিয়ে আদালতে মামলা চলমান রয়েছে। জমিতে আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকাকালীন কিভাবে কাজ করছেন? ভবন নির্মানের ক্ষেত্রে কোন অনুমোদন আছে কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে জাহাঙ্গীর আলম জানান, আদালত থেকে এমন কোন নির্দেশনা নাই যে তিনি কাজ করতে পারবেন না। অতিরিক্ত জমি দখলের বিষয়ে তিনি বলেন, আমার জমির দুই পাশে সরকারী জমি থাকলে তা আমার ভোগদখলে থাকবে এটাইতো নিয়ম। তিনি আরো বলেন, এ বিষয়ে পটুয়াখালী-৪ আসনের সংসদ সদস্যের সাথে ঢাকায় বৈঠক হয়েছে। তিনি কাজ করতে বলেছেন।
কুয়াকাটা পৌর মেয়র আ. বারেক মোল্লা বলেন, বহুতল ভবন নির্মানের অনুমোদন দেওয়ার ক্ষমতা পৌর কর্তৃপক্ষের নেই। অবৈধ দখলদাররা বিভিন্ন জনের নাম ব্যবহার করে দখল কাজ চালিয়ে আসছে। সী-কুইন কর্তৃপক্ষ অবৈধভাবে সরকারী জমি দখল করে ভবন নির্মাণ করছেন।
কলাপড়ার সহকারী কমিশনার (ভূমি) কর্মকর্তা অনুপ দাস জানান, উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকায় দখলদারদের বিরুদ্ধে আইনী পদক্ষেপ নিতে পারছেন প্রশাসন। তবে বর্তমানে সী-কুইন কর্তৃপক্ষের করা অবৈধ ভবণ নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মামুনুর রশিদ জানান, এ বিষয়ে তার জানা নাই। জমিতে কি ধরনের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে তা তিনি জানেন না। তবে এ বিষয়ে কলাপাড়া উপজেলা সহকারী ভূমি কর্মকর্তাকে আইনী ব্যবস্থা নিতে বলে দিবেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন