রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

বিএনপির প্রশ্নবিদ্ধ নিষ্ক্রিয়তা

মোবায়েদুর রহমান | প্রকাশের সময় : ২৯ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:০২ এএম

সম্প্রতি বিএনপি নিয়ে আবার কথা উঠেছে। কথা উঠেছে বিএনপির ভেতর থেকেই। কথা উঠেছে ঐক্যফ্রন্টের ভেতর থেকে। কথা উঠেছে আরো দুই একটি পত্র পত্রিকায়।

গত রবিবারের ‘ইনকিলাবের’ ২য় পৃষ্ঠায় প্রকাশিত ডাবল কলাম খবরের শিরোনাম, ‘বিএনপি সময়মত কর্মসূচি দিতে ব্যর্থ/ আইনজীবী সমাবেশে খন্দকার মাহবুব।’ খবরে বলা হয়, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের আহবায়ক অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গে বলেন, ২৯ ডিসেম্বর একটি নির্বাচনের নামে ভোট ডাকাতি হয়েছে। আমরা প্রতিবাদ করতে পারলাম না এই অবৈধ নির্বাচনের বিরুদ্ধে। বিএনপি সময়মত কর্মসূচি দিতে ব্যর্থ। এটা আমাদের ব্যর্থতা, আমাদের দুর্ভাগ্য। তাই বলছি, সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাজপথে আসুন। এই অবৈধ সরকার পদত্যাগে বাধ্য হবে। আমাদের দুর্ভাগ্য, রাজনৈতিক অঙ্গনে বিরোধী দল থেকে যে ধরনের নেতৃত্ব আসার কথা ছিল, তা আসে নাই। আমরা সে কারণে ক্ষুব্ধ। একটি অবৈধ সরকার দেশের ওপর অত্যাচার, অনাচার, অবিচার করে যাচ্ছে। আমরা প্রেসক্লাবে বক্তব্য দেওয়া ছাড়া জনগণকে নিয়ে রাজপথ উত্তপ্ত করতে পারিনি। আমি আজকে ওয়াদা করে যাচ্ছি, ইনশাআল্লাহ বাংলাদেশের আইনজীবী সমাজ জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এই অবৈধ সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করবে। অনেক ক্ষেত্রে বিএনপি সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি এমনটি স্বীকার করে বিএনপির এই নেতা বলেন, আমাদের চেয়ারপারসন মিথ্যা মামলায় কারাগারে, আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসনকে মিথ্যা মামলা দিয়ে বিদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাই অনেক ক্ষেত্রে আমরা সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারিনি। সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নিতে পারলে ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচন বানচাল করে দিয়ে নতুন নির্বাচনের দাবি করতে পারতাম। আমাদের দুর্ভাগ্য সেটা আমরা পারি নাই।
এলডিপির প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে অনুষ্ঠিত এক আলোচনা সভায় দলটির মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদ বিএনপির কঠোর সমালোচনা করে বলেন, খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে বিএনপি রাজপথে আন্দোলন করতে পারে না। নেত্রীর মুক্তির জন্য যারা আজকে রাজপথে নামবে সে সব নেতারা সরকারের সাথে আঁতাত করে কোনো আন্দোলনে যাচ্ছে না। আপনারা অভিশপ্ত নেতৃত্ব, আপনাদেরকে মানুষ কোনোদিন শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবে না, এটুকু আমি এলডিপির মহাসচিব হিসেবে বলতে পারি। মওদুদ ভাই বলেন, একমাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে নেত্রীকে বের করব, খন্দকার মোশাররফ বলেন, একমাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে নেত্রীকে বের করব; নেত্রীর যে অবস্থা তাতে আর কয়েকদিন পরে মারা যাবেন। আমরা মনে করি, এর দায় শেখ হাসিনাকে নিতে হবে। তিনি বলেন, আমাদের ওই রকম শক্তি থাকলে রাজপথ কাঁপিয়ে দিতাম এবং বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার মাধ্যমে এদেশের গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতাম।

বিএনপির নেতাকর্মীদের আরও সাহসী হওয়ার আহবান জানিয়েছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, বিএনপির কর্মীরা সাহসী, নেতারা দুর্বল। তাদের কেউ কেউ এত পয়সা বানিয়েছেন যে, রাজপথে রোদ লাগাতে ইচ্ছে করে না। এই সরকার অত্যন্ত দুর্বল সরকার। বিএনপির নেতার্কমীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা মাঠে নামুন, ইনশাআল্লাহ সরকার বিদায় হয়ে যাবে। গত বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবে মুক্তিযোদ্ধা দল আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, বাংলাদেশ থেকে ভারতের আর কী নেওয়ার আছে? সে বিষয়ে তাদের একটি কমিশন গঠন করা বাকি মাত্র। এখন তাদের কমিশন বসাতে হবে, বাংলাদেশ থেকে নেওয়ার মতো আর কী আছে? নদীর মাছ ও সাগরে মাছ তারা ধরে নিয়ে যায়। সুন্দরবন ছিল, তা পুড়ে যাচ্ছে। তিতাস নদী বন্ধ করে তাদের গাড়ি ঘোড়া চলবে। সবকিছুই তারা নিয়ে নিচ্ছে। এই সরকার ভারতের পদলেহী একটা সরকার। আমরা সাহসী সরকার চাই, মধ্যরাতের সরকার চাই না।

বিএনপিকে নিয়ে কথা উঠেছে। চতুর্দিক থেকে। বিএনপির ভেতর থেকে উঠেছে, যেমন মেজর হাফিজ উদ্দিন। এলডিপি থেকে কথা উঠেছে। ঐক্যফ্রন্ট থেকেও কথা উঠেছে। বিএনপি যে কোন দিকে যাবে সেটা তারা দিশা পাচ্ছে না। যে ড. কামাল হোসেন নির্বাচনে তাদেরকে ডুবিয়েছেন সেই কামাল হোসেনের দুয়ারে আবার তারা ধরণা দিয়েছেন। গত সপ্তাহে ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির একাধিক মিটিং হয়ে গেলো। মিটিংয়ের সিদ্ধান্ত ছিলো গত ২২ তারিখে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভা করা। সরকার অনুমতি দেয়নি। সুতরাং জনসভা বাতিল করা হয়েছে। জানা গেছে, কামাল হোসেন নাকি বলেছেন যে, সরকারের সাথে কনফ্রন্টেশন করে তিনি রাজনীতি করতে চান না। অন্যকথায় তারা দরখাস্ত করার রাজনীতি করতে চান। সরকারের কাছে কোনো বিষয়ে দরখাস্ত করবেন। দরখাস্ত মঞ্জুর হলে সভা সমিতি করবেন। মঞ্জুর না হলে ঘরে গিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য করবেন বা ঘুমাবেন। ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরী সাম্প্রতিক বাংলাদেশ-ভারত অসম চুক্তির বিরুদ্ধে সংবাদপত্রে দেওয়ার জন্য একটি বিবৃতি লিখে ড. কামালকে দেখান। ড. কামাল নাকি বলেন, ভারত বিরোধী রাজনীতিতে তিনি নাই। অবশেষে ঐক্যফ্রন্টের একটি টিম বন্দী খালেদা জিয়ার সাথে দেখা করার জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে বৈঠক করেন। তারপর ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের খালেদা জিয়ার সাথে দেখা করার আর কোনো খবর নাই। জানা গেছে যে, ড. কামাল নাকি বেগম জিয়ার সাথে দেখা করতে ভয় পাচ্ছেন, পাছে তিনি সরকারের রুদ্র রোষে পড়েন।

বিগত ১২ বছর ধরে বিএনপি ক্ষমতার বাইরে আছে। এই ১২ বছরে বিএনপির ওপর দিয়ে অনেক ঝড় বয়ে গেছে। জেল, জুলুম, হুলিয়া এগুলিই বছরের পর বছর চলেছে। ১ বছর ১০ মাস অর্থাৎ ২০ মাস হয়ে গেলো নেতা বেগম জিয়া কারাগারে আছেন। তাকে মুক্ত করার জন্য প্রেসক্লাবের গেটের সামনে মানববন্ধন অথবা কোনো হল রুমে আলোচনা সভা ছাড়া বিএনপির মতো একটি বিশাল দলের কোনো খবর নাই। এখনো বিএনপি ডাকলে বিপুল জনসমাগম হয়। তার অর্থ এই নয় যে সকলেই বিএনপিকে সমর্থন করে। জনগণ এই সরকারের ওপর এতই ত্যক্ত-বিরক্ত যে বিএনপির সেমিনার করলেও সেখানে অনেক লোক হয়। কারণ মানুষ চায়, অবিলম্বে এই সরকারের পরিবর্তন। কিন্তু পরিবর্তনের কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। এ জন্য কর্মসূচি দিতে হবে। জেলে যেতে হবে, টিয়ার গ্যাস খেতে হবে। হাজারে হাজারে স্বেচ্ছা কারাবরণের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। কিন্তু বিগত ১০ বছর বিএনপির কীর্তিকলাপ দেখে মনে হচ্ছে, এগুলোর কিছুই হবে না। আসল কথা হল, বিএনপি আর আন্দোলনের পার্টি নাই। তাই সরকার পরিবর্তনের ক্ষীণতম রশ্মিও চোখে পড়ছে না। গণতন্ত্র নির্বাসিত হয়ে গেছে। এত জুয়াড়ি ধরা পড়লো, বিএনপি এই জুয়াড়ি ইস্যুটি টেকাপ করতে পারলো না। বুয়েটের ফাহাদ মারা গেলো। কিন্তু ছাত্রদল ইস্যুটি টেকাপ করতে পারলো না। কত কাহিনী আর বলবো? এখনো পিঁয়াজের দাম ১২০ টাকা। ভারতের সাথে অসম চুক্তি হলো। এর প্রতিবাদে মিছিল তো দূরের কথা, একটি মানব বন্ধনও হলো না। দেখে শুনে মনে হচ্ছে, সামনে ঘনঘোর অন্ধকার।
Email: journalist 15@gmail.com

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (7)
দীনমজুর কহে ২৮ অক্টোবর, ২০১৯, ৯:১৯ পিএম says : 0
দেশ,মা,মাঠি,মানুষ,রাজনিতি,সমাজতন্ত্র গনতন্ত্র,এসব নিয়ে আপনার লেখা কামনা করে ছিলাম।বহুদিন পর আপনার লেখাটা মনোযোগ সহকারে পড়লাম।খুব ভাল লাগলো।ইনকিলাব আমার প্রিয়পত্রিকা। আর আপনি আমার প্রিয় লিখক।আমার জীবনে আপনার লেখা উদূতি দিয়ে মন্চে বক্তৃতা করেছি।আপনার দীর্ঘায়ু কামনা করি।।
Total Reply(0)
আবু আব্দুল্লাহ বিন বাসার ২৯ অক্টোবর, ২০১৯, ১:৫১ এএম says : 0
তাহলে বিএনপিকে বিলুপ্ত ঘোষনা দিয়ে,জামায়াতের নেত্রীত্বে নতুন করে শুরু করুন। দেখুন আন্দোলন কাকে বলে,আনোলন কতো প্রকার ও কি কি??
Total Reply(0)
Md Anwar ২৯ অক্টোবর, ২০১৯, ১:৫১ এএম says : 0
তোমরা খালেদা জিয়ার অযোগ্য সন্তান, মাকে জেলে রেখে যে সন্তান শান্তির কথা বলে, তার মতো কুলাঙ্গার সন্তান আর কে হতে পারে?
Total Reply(0)
Abdul Mannan ২৯ অক্টোবর, ২০১৯, ১:৫২ এএম says : 0
আমি বলবো ব্যর্থতা নয় মিথ্যা ভন্ড প্রতারণার রাজনীতির কাছে সৎ রাজনীতি হেরে গেছে,
Total Reply(0)
Raju Khan ২৯ অক্টোবর, ২০১৯, ১:৫২ এএম says : 0
বিএনপি যা ক্ষতি করার ১৯৯০ সালেই করছে, আন্দোলন আর গনতন্ত্রের নামে লুটপাট চালু করছে।
Total Reply(0)
Nahar Rahman ২৯ অক্টোবর, ২০১৯, ১:৫২ এএম says : 0
১০০% ব্যর্থতা
Total Reply(0)
Azad Islam ২৯ অক্টোবর, ২০১৯, ১:৫৩ এএম says : 0
আন্দোলন করতে পারে না তাই তো বিএনপিকে পছন্দ করি। বিএনপি মানে পরিবর্তন, বিএনপি মানে বাংলাদেশ, বিএনপি মানে জাতীয়তাবাদ।এই পরিবর্তনের ভিত্তিতে আগামীর বাংলাদেশ রচিত হবে..
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন