শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পাদকীয়

যানজট নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে

প্রকাশের সময় : ২১ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে রাজধানীসহ দেশের অন্যান্য মহানগরীতে যানজট ততই তীব্র হচ্ছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, স্বাভাবিক সময়েও যানজট নগরীর অন্যতম প্রধান সমস্যা হয়ে থাকে। এ নিয়ে বছরের পর বছর অনেক লেখালেখি এবং নগরবিদদের পরামর্শ বর্ষিত হলেও যানজটের কিঞ্চিত সমাধানও হয়নি। বরং দিন দিন অসহনীয় পরিস্থিতি আরও প্রকট আকার ধারণ করছে। আমরা যানজট নিয়ে অনেক বড় বড় প্রকল্প গ্রহণের কথা শুনছি, তবে সেগুলো কবে নগরবাসী চোখে দেখবে এবং সুফল পাবে তার নিশ্চয়তা নেই। ঈদ সামনে রেখে যানজট বরাবরের মতোই অসহনীয় হয়ে উঠেছে।
রাজধানীর সড়ক অব্যবস্থাপনার কারণে প্রতি নিয়ত যানজটের শিকার হচ্ছে নগরবাসী। ট্রাফিক সিগনালের অব্যবস্থাপনা ও অসম টাইমিংয়ের কারণেও যানজট লেগে থাকে। এনিয়ে বহু লেখালেখির পরও পরিস্থিতির বিন্দুমাত্র কোন পরিবর্তন হয়েছে সেকথা বলার উপায় নেই। চলমান যানজট কেবল রাজধানী ঢাকাতেই তা নয়, চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহীসহ দেশের জেলা শহরগুলোও যানজটের শিকার। সেখানেও জটে পড়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপচয় হচ্ছে। ব্যাহত হচ্ছে ব্যবসা-বাণিজ্যসহ আমদানি-রফতানি কার্যক্রম। ঈদ যতই ঘনিয়ে আসবে, ততই সড়ক-মহাসড়কে যানজটের আরো বিস্তৃতি ঘটবে। রাজধানীসহ বিভাগীয় সদর থেকে শুরু করে যেখানে যেখানে যানজট রয়েছে সেগুলো পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে কারণগুলো প্রায় অভিন্ন। সর্বত্রই অফিস আওয়ার এবং অফিস আওয়ার ছাড়ও অন্য সময়গুলোতেও যানজট পরিস্থিতি গুরুতর আকার ধারন করছে। বিশেষ করে রমজানের সময়ে যে বিশেষ বাস্তবতার সৃষ্টি হয় তা নিরসনে কোন কার্যকর উদ্যোগ নেয়া হয় না। রাস্তার খোঁড়াখুঁড়ি সারা বছর ধরেই অব্যাহত থাকে। এমনিতেই রাজধানীসহ প্রধান প্রধান বিভাগীয় শহরগুলোতে সড়ক স্বল্পতা রয়েছে। তার উপর সংস্কারের নামে সময়ক্ষেপণের ফলে যানবাহনের স্বাভাবিক চলাচল বিঘিœত হয়। অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে, সড়ক নির্মাণের পরপরই তা নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে দুর্ভোগ যেন একটা স্থায়ী রূপ নিচ্ছে। ট্রাফিক জ্যাম নিয়ন্ত্রণের জন্য বিভিন্ন সড়কে সমাবেশ মিছিল নিষিদ্ধ করা হলেও দেখা যাচ্ছে তা সকলে মান্য করছে না। মানববন্ধনের নামে প্রকারান্তরে শুধু সড়ক অবরোধই নয় বরং যানবাহন আটকে থাকার কুফল পড়েছে নগরবাসীর উপর। এটাই সত্যি যে সড়ক ব্যবস্থাপনা নিয়ে কথা যত হয়েছে কাজ তার আংশিকও হয়নি। বাংলাদেশের রাজধানীসহ গুরুত্বপূর্ণ নগরিতে যে ধরনের যানজট দেখা যায় পৃথিবীর কোন সভ্য দেশের রাজধানীতে তার নজির পওয়া ভার। এযাবৎকাল সড়ক ব্যবস্থাপনা উন্নত করতে যত ধরনের কথাবার্তা শোনা গেছে বাস্তবে তার কোন প্রয়োগ দেখা যায়নি। ফলে নাগরিক দুর্ভোগ যেখানে থাকার কথা সেখানেই থেকে গেছে।
পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে, আগে ছুটির দিনে হলেও কিছুটা যানজটমুক্ত পরিবেশ পাওয়া যেত। এখন সে অবস্থাও নেই। খোদ রাজধানীতে শুক্র শনিবারেও বিভিন্ন এলাকায় যানবাহনের লম্বা লাইন লেগে থাকতে দেখা যাচ্ছে। সকাল দুপুর বিকেল কখনোই যানজটমুক্ত থাকে না। সাধারণত রমজানে স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকার কথা থাকলেও এবারে সে অবস্থাও নেই। কোচিং বা অন্য নামে তা ঠিকই খোলা থাকছে। ত্রুটিপূর্ণ গাড়ী, অদক্ষ চালক, অবৈধ পার্কিং, ফুটপাত দখলসহ নানা অবৈধ কার্মকা-ে সড়কগুলো জনসাধারণের জন্য ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এখন পর্যন্ত প্রকাশিত খবর অনুযায়ী যানজটে বছরে ক্ষতি হচ্ছে সাড়ে ২৩ হাজার কোটি টাকা। নগরবাসীর দৈনিক নষ্ট হচ্ছে ৮০ লাখ কর্মঘণ্টা। যারা শেষ দিকে ঈদ করতে ঘরমুখী হবেন যানজটের কারণে তাদের অনেকের ভাগ্যে হয়ত স্বজনদের সাথে ঈদ করা সম্ভব হবে না। সবকিছু দেখেও যাদের নজর দেয়ার কথা তারা কিছু করছেন বা করবেন সে রকম মনে হবার মত কোন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে মনে হচ্ছে না। যানজটকে নিদেনপক্ষে সহনীয় পর্যায়ে রাখার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এখনই কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে, এটাই কাম্য।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন