বিভিন্ন জীবাণুর (ব্যাকটেরিয়া) কারণে বিশেষ করে ঝঃৎবঢ়ঃড়পড়পপঁং সঁঃধহং ব্যাকটেরিয়ার কারণে দাঁতের ফাঁকে প্লেক জমে, যার ফলে মুখে দূর্গন্ধ হয়। কোন কোন সময় কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণে হয় এবং অনেক সময় মাড়ির প্রদাহ হওয়া কিংবা সঠিক নিয়মে উত্তমরূপে দাঁত পরিষ্কার না করার কারণেও হয়ে থাকে। মনে রাখা প্রয়োজন যে, মুখের লালা রসে থাকে ঝঃৎবঢ়ঃড়পড়পপঁং ংধষরাবৎরহ. যা আমাদের বন্ধু ব্যাকটেরিয়া। এরা মুখের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া মেরে ফেলে এবং মুখে দুর্গন্ধ হতে দেয় না। এভাবে এরা মুখ গহবরের পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে। তাই আমাদের সে সকল খাবার বেশি বেশি খেতে হবে যা বেশি পরিমাণে লালারস উৎপাদন করে। যেমন-দই, আনার, ক্যানবেরি, ধনিয়া পাতা, সবুজ শাকসবজি ইত্যাদি। যার মুখে দুর্গন্ধ তাকে পরিবার ও সমাজের কেউ গ্রহণ করতে চায় না। এটা একটা অত্যন্ত বিব্রতকর অবস্থা। কেউ তার সান্নিধ্য কামনা করে না। এমনকি নিজের স্ত্রীও তাকে এড়িয়ে চলতে চায়। অনেক ক্ষেত্রে স্বামী-স্ত্রী ছাড়াছাড়ি হয়ে যায় এই মুখে দুর্গন্ধজনিত সমস্যার কারণে। সমাজে, অফিসে, হাটে ও বাজারে কেউ তার কাছাকাছি বা মুখোমুখি হয়ে আলাপ করতে চায় না।
এখন এ সমস্যার সমাধান কী? অনেকে তাদের এই সমস্যা সম্বন্ধে সচেতন নন। আবার অনেকে জানেন। অনেকের শ্বাস-প্রশ্বাসেও এই দুর্গন্ধ থাকে। এ থেকে মুক্তি পেতে অনেকেই নানা প্রকার টুথপেস্ট ও মাউথওয়াশ ব্যবহার করেন। এতে কারো উপকার হয়, আবার কারো হয় না। বিজ্ঞানীরা এ নিয়ে গবেষণা করেছেন। এখানো কোনো সুনির্দিষ্ট কারণ আবিস্কার করতে সক্ষম হননি। তবে সম্প্রতি একজন গবেষক বলছেন-যাদের পেটের অসুখ আছে, হজমের গোলযোগ রয়েছে এবং পেট পরিষ্কার হয় না তাদের মুখে দুর্গন্ধ হয়।
দ্বিতীয় কারণ হলো-যারা মুখ পরিষ্কার রাখেন না তাদের মুখে দুর্গন্ধ হয়।
তৃতীয়ত, যারা নিয়মিত দিনে দুইবার দাঁত ব্রাশ করেন না, তাদের দাঁতের ফাঁকে খাদ্যকণা আটকে থেকে পচে দুর্গন্ধ হয়। আর সেই দুর্গন্ধ শ্বাস-প্রশ্বাসের সাথে মুখ থেকে বেরিয়ে এসে পরিবেশ দূষিত করে। এজন্য তারা মিন্ট ফ্লোরাইড ব্যবহার করেও কোনো উপকার পান না।
একজন গবেষক বলছেন, মুখের এই দুর্গন্ধ দূরীকরণে ম্যাগনোলিয়া ফুলের গাছের ছাল বেশ কার্যকর বলে পরীক্ষিত। অনেকে জানেনই না যে, তাদের শ্বাস-প্রশ্বাসে বা মুখে দুর্গন্ধ। এ ব্যাপারে নিজের স্ত্রীর কাছে প্রকৃত তথ্য জানা যেতে পারে। চিকিৎসকেরা এই সমস্যাকে বলেন হ্যালিটোসিস। তাদের পরামর্শ হলো, যে ব্যাকটেরিয়া মুখের ভেতর এই দুর্গন্ধ সৃষ্টি করে তা দূর করতে অ্যালকোহলমুক্ত মাউথওয়াশ ব্যবহার করা যেতে পারে। প্রতিবার খাওয়ার পর দাঁত ব্রাশ করে এটা ব্যবহার করতে হবে। তবে অ্যালকোহলযুক্ত মাউথওয়াশ ব্যবহারে অনেক সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। তা হলো মুখের ভেতর শুষ্ক করে ফেলে। মাথা ঝিমঝিম করতে পারে।
দিনে দ্ইুবার নয়, তিনবার খাওয়ার পর ভালো করে দাঁত ব্রাশ বা মেসওয়াক করে গরম পানিতে সামান্য লবণ দিয়ে তিন-চারবার কুলকুচি করলেও মুখের ভেতর পরিষ্কার থাকবে। ব্যাকটেরিয়া জন্মাতে পারবে না। মুখে দুর্গন্ধও তৈরি হবে না। মূলত মুখের ভেতর অপরিষ্কার থাকায় ব্যাকটেরিয়া জন্মে, যা মুখের দুর্গন্ধের জন্য দায়ী। যাদের কোষ্ঠকাঠিন্য আছে , তারা পেট পরিষ্কার রাখতে রাতে শোয়ার আগে এক গ্লাস পানিতে এক টিপ ইসপগুরের ভুসি নিয়ে খেয়ে নেবেন। পেট পরিষ্কার হবে । মুখের ভেতর যাতে শুষ্ক না হয়, সেজন্য বারবার পানি পান করতে হবে । চিনি ছাড়া চুইংগাম মুখে রাখলেও মুখের ভেতর শুষ্ক হয় না। কফি পান থেকে বিরত থাকতে হবে । কারণ, কফি, এলকোহল ও মদ মুখে শুস্কতা সৃষ্টি করে। ব্যাকটেরিয়া জন্মাতে সাহায্য করে। ধূমপান থেকে বিরত থাকতে হবে। এটাও মুখে দুর্গন্ধ সৃষ্টি করে। শুধু দাঁত নয়, জিহ্বাও পরিষ্কার রাখা জরুরি। অনেকের ধারণা, পান-সুপারি-জর্দা খেলে মুখে দুর্গন্ধ হয়। এটা ভুল ধারণা, বরং এতেও মুখ শুষ্ক হয়ে যায় । মুখের ভেতর লালা থাকতে হবে। তাহলেই কেবল এই সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়া যায়। অনেকে মনে করেন, মুখের ভেতর একটা লবঙ্গ বা এলাচি বা সামান্য দারচিনি বা জ্যৈষ্ঠ মধু রাখলে মুখের দুর্গন্ধ থাকে না। মুখের ভেতর দাঁতের গোড়ায়, জিহ্বায় যদি কোনো ঘা বা ক্ষত থাকে, তাহলেও দুর্গন্ধ হতে পারে। তাই এই ক্ষত দ্রুত চিকিৎসা করাতে হবে। সবশেষে বলা যায়, নিয়মিত কোনো দন্ত ও ওরাল বিশেষজ্ঞের সাথে পরামর্শ করে চিকিৎসা নেয়া উচিত। অন্যথায় পারিবারিক ও সামাজিকভাবে একঘরে হয়ে মনোকষ্টে জীবন যাপন করতে হবে।
পরামর্শ-*আহারের পর এবং শয়ন কালে সঠিক নিয়মে উত্তমরূপে দাঁত পরিষ্কার করতে হবে। * কোষ্ঠকাঠিন্য এবং বদহজম যাতে না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। * ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। * প্রচুর পানি পান করতে হবে।
চিকিৎসক-কলামিস্ট, মোবা : ০১৭১৬২৭০১২০।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন