শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

মানবকল্যাণে মহানবী (সা.) এর একটি অসাধারণ ভাষণ

কে. এস সিদ্দিকী | প্রকাশের সময় : ৮ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

মানুষের বিপদ-আপদ ও দুঃখ-কষ্টের সময় দুর্গত মানবতার সাহায্য ও সেবা করার উপর ইসলামে বিশেষভাবে গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। এ সম্বন্ধে মানবতার দরদী নবী হযরত রসূলে করিম (সা.) তাঁর প্রদত্ত এক অসাধারণ ভাষণে বলেন, হে লোক সকল! তোমাদের প্রভু-পরওয়ারদেগার এরশাদ করেছেন, আল্লাহর পথে তোমার ধন-সম্পদ ব্যয় কর এবং ধ্বংসের দিকে তোমার স্বীয় হাত সম্প্রসারিত করো না। অর্থাৎ- প্রত্যুপকার চেয়েও ক্লেশ দিয়ে স্বীয় দানের ক্ষতি সাধন করো না এবং স্মরণ রাখবে তোমরা যা ভালো করবে, আল্লাহপাক তা অবগত আছেন এবং যারা স্বীয় ধন-সম্পদ আল্লাহর রাহে ব্যয় করে তাদের জন্য আল্লাহর নিকট বড় প্রতিদান রয়েছে এবং তারা সওয়াব হতে বঞ্চিত হবে না এবং তাদের পক্ষে কোনো আশঙ্কা নেই ও তারা দুঃখিত হবে না।

হে উপস্থিত জনতা! তোমরা কি মনে করেছ যে, তোমাদের পরওয়ারদেগার তোমাদের নিকট ধন-সম্পদের মোহতাজ? তা কখনও হতে পারে না, তিনি কারো মুখাপেক্ষী নন, সম্পূর্ণ বেনেয়াজ। তোমরা যা কিছু করে থাকো স্বীয় কল্যাণের জন্য, আর যে ব্যক্তি স্বীয় অর্থ লৌকিকতা প্রদর্শনের জন্য ব্যয় করে, সে দুর্ভাগ্যবান এবং সে রোজ কেয়ামতের উপর বিশ^াস স্থাপন করে না এবং আমি তোমাদেরকে (হে উম্মতগণ) সতর্ক করে দিচ্ছি, যে প্রত্যুপকার চায় না এমন ব্যক্তি এবং দাতা আল্লাহর নিকটবর্তী এবং জান্নাতের নিকটবর্তী ও জাহান্নামের দূরবর্তী এবং আত্মকেন্দ্রিক, স্বার্থপর ও কৃপণ ব্যক্তি আল্লাহর দূরবর্তী এবং জান্নাতের দূরবর্তী ও জাহান্নামের নিকটবর্তী। হে শ্রোতাগণ! আমি যা কিছু অবলোকন করছি তা তোমরা দেখছো না। স্মরণ রেখো, প্রতিদিন ভোরে দুইজন ফেরেশতা নাজেল হয়, তাদের মধ্যে একজন বলতে থাকে যে, ‘হে আল্লাহর দানশীল ও আত্মত্যাগী ব্যক্তির ধন-সম্পদে বরকত নাজেল কর আর অপর ফেরেশতা আরজ করতে থাকে যে, হে আল্লাহ! কৃপণ ও স্বার্থপর আত্মকেন্দ্রিক ব্যক্তির মাল ধ্বংস কর।’

এতে কোনো সন্দেহের অবকাশ নেই যে, মানব জীবনের কার্যাবলী এবং দায়িত্বসমূহের মধ্যে দান-সদকা হচ্ছে উৎকৃষ্টতম আমল এবং আমি আল্লাহর শপথ করে বলছি; যদি আমার কাছে ‘ওহোদ’ পাহাড়ের সমতুল্য সম্পদ উপস্থিত হয়, তা তিন রাত্রের মধ্যে ব্যয় করে দিতে পারলে আমি আনন্দ বোধ করবো, কিন্তু আমার কাছে তার এক পাইও যেন অবশিষ্ট না থাকে।
আমি অবগত আছি যে, ধন-সম্পদ ব্যয় করা মানবের পক্ষে মঙ্গলজনক এবং তা জমা করে রাখা অমঙ্গলের লক্ষণ। তবে প্রয়োজন অনুসারে জমা রাখা নিন্দনীয় নয় এবং আল্লাহর জন্য প্রথমে সেই

ব্যক্তিকেই দান কর যার ভরণ-পোষণ তোমার উপর অবশ্য কর্তব্য। আমি স্পষ্টভাবে এও বলে দিতে চাই, ধন-দওলত যা কিছু তোমরা আল্লাহর রাহে খরচ করে থাকো, তা নষ্ট হয় না বরং তোমাদের অর্থ এর দ্বারা বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়। অথচ তা তোমরা অনুভব করতে পার না। অধিকন্তু পরকালে তা থেকে সে সকল ব্যক্তি অশেষ সওয়াব পেয়ে থাকে, যারা পরকালের উপর বিশ^াস স্থাপন করে।

হে লোক সকল! দুনিয়া একটি পরীক্ষা কেন্দ্র ও কর্ম স্থল। তোমরা এখানে যা করবে তা পাবে এবং মান-ইজ্জত ও সুখ-শান্তি সে সব লোকের জন্য, যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করে, যাদের শির আল্লাহর দরবারে নত, যাদের জীবনের অধিকাংশ ভাগ আল্লাহর এবাদত-বন্দেগীতে অতিবাহিত হয়ে গিয়েছে এবং যারা অপরের অভাবকে স্বীয় প্রয়োজনের উপর অগ্রাধিকার দান করে, এ ধরনের লোকদেরকে আল্লাহ পাক সুখে-দুঃখে সফলকাম রাখেন এবং বিপদে-আপদেও তাদেরকে মনোবল দান করেন এবং তারা বিষণœ হয় না। আর স্বার্থপরায়ণ ও আত্মকেন্দ্রিক ব্যক্তিরা আসমানী বরকত হতে বঞ্চিত থাকে। তাদের ঈমান দুর্বল এবং তারা পরকালের সৌভাগ্যের অধিকারী হতে পারবে না, একথাও তাদের বিশ^াস করতে হবে।

হে উপস্থিত লোক সকল! যে ব্যক্তি আল্লাহর রাহে স্বীয় অর্থ ব্যয় কিম্বা নিজের প্রাণ উৎসর্গ করে, সে কোনো অবস্থাতেই ক্ষতিগ্রস্ত হয় না। সে আল্লাহর প্রেম লাভ করতে সক্ষম হয় এবং আল্লাহর দরবারে উচ্চ মর্যাদার অধিকারী হয়। কেননা, আল্লাহর প্রেমে নিজের অস্তিত্ব বিলীন করে দেওয়া অথবা তাঁর ধর্ম প্রচারের জন্য নিজের জানকে বিপদের সম্মুখে নিক্ষেপ করা কিম্বা খোদার মখলুকের শাস্তির জন্য এবং ফেৎনা-ফ্যাসাদ রোধ করার জন্য স্বীয় প্রাণকে মৃত্যুর মুখে পতিত করা সর্বোত্তম কাজ এবং আমি যা কিছু বলছি, বাহ্যত তার উপর আমল করা কঠিন মনে হলেও প্রকৃতপক্ষে তা কঠিন ব্যাপার নয়। দুনিয়াতে কি এমন কোনো লোক ছিল না, যে এটা প্রমাণ করেছে যে, মানুষ সাহস করলে কি না করতে পারে এবং দানÑখয়রাত ও আত্মত্যাগের কোনো কোনো সময়ে বহু কষ্ট ভোগ করতে হয়। কিন্তু তাতে চির শান্তি ভোগ করা যায়। বিশ^াসীদের উচিত, তারা যেন বিপদ-আপদের সম্মুখীন হলে ধৈর্য ধারণ করে। কেননা এটাও এক প্রকারের আত্মত্যাগ। পূর্ববর্তী উম্মতগণের পরীক্ষা হয়েছে। কেননা, আল্লাহর বিধান এই যে, তিনি ঈমানদারদের নানা রকমের পরীক্ষা করে থাকেন। কখনো কখনো ভয়-ভীতি প্রদর্শন দ্বারা এবং ক্ষুধা ও অর্থের ক্ষতি সাধন দ্বারা। আবার কোনো কোনো অবস্থায় প্রাণহানির মাধ্যমেও পরীক্ষা করা হয়। বান্দা যখন এ সমস্ত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়, তখন তার পদোন্নিত হয়। এটা অতি সত্য কথা যে, পরীক্ষায় সে সব লোকেরাই সফলকাম হয় যারা স্বীয় অর্থ অন্যের উপকারের জন্য উৎসর্গ করে থাকে এবং স্বার্থপর ব্যক্তিরা সফলকাম হতে পারে না এবং আল্লাহ পাক তাদের জন্য শাস্তি তৈরি করে রেখেছেন। মোসাফির, গরিব, মিসকিন এবং এতিম অসহায়দের জন্য দান করাও উত্তম আমল। আর যদি প্রতিবেশীদের মধ্যে কেউ সাহায্য পাওয়ার উপযোগী হয় তার মদদ করা উচিত।

হে মুসলমানগণ! আমি তোমাদের উপদেশ দান করছি যে, তোমরা ত্যাগী মনোভাবের অধিকারী হও এবং অভাবীদের প্রতি সাহায্য কর। আর স্বার্থপরায়ণতা হতে নিজেদের রক্ষা কর। কেননা স্বার্থপরায়ণতা তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদেরকে ধ্বংস করেছে। মনে রাখবে যে, এই উম্মতের প্রধান কর্তব্য হচ্ছে, আল্লাহর উপর ঈমান আনা ও দান করা এবং তাদের প্রধান ক্ষতির কাজ হচ্ছে স্বার্থপরায়ণতা ও বেরহমী-দয়াহীনতা (কাঞ্জুল মা আরেফ)।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন