মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

বুলবুলের গতিমুখ সুন্দরবনে, ধেয়ে আসছে উপকূলে

খুলনা ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ৮ নভেম্বর, ২০১৯, ৬:১৮ পিএম

* খুলনায় ৩৩৮ টি, বাগেরহাটে ২৩৪ টি, সাতক্ষীরায় ১৩৭টি সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত

* বাগেরহাটে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল
* সুন্দরবনে রাসমেলা বন্ধ
* নিরাপদ আশ্রয়ে ফিরছে জেলেরা

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের গতিমুখ এখন সুন্দরবনের দিকে। সোয়াশ কিলোমিটার বেগের বাতাসের শক্তি নিয়ে উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছে ঝড়টি। শনিবার বিকালের পর বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় ঝড়ের প্রভাব অনুভূত হতে পারে।
ঘূর্ণিঝড় বুলবুল দিক পরিবর্তন করে ক্রমশ বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের দিকে এগোচ্ছে। ইতোমধ্যে এটি শক্তি বৃদ্ধি করে ক্যাটাগরি ২ ক্ষমতাসম্পন্ন ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় বুলবুল আগামী ১০ ই নভেম্বর ভোররাত থেকে দুপুরের ভেতরে খুলনা, সাতক্ষীরা, সুন্দরবনসহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় প্রবল শক্তি নিয়ে আঘাত করে অতিক্রম করতে পারে এসময় বাতাসের গতি হতেপারে ঘণ্টায় ১৫০ থেকে ১৬৫ কিলোমিটার, বা তারচেয়েও বেশি। দেশের সমুদ্রবন্দর গুলোকে ৪ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হচ্ছে। রাশ উৎসব স্থগিত করা হয়েছে।
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ এর প্রভাবে উপকূলীয় জেলা খুলনার আকাশ মেঘে আচ্ছন্ন রয়েছে। শুক্রবার সকাল থেকে কোথাও কোথাও গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি শুরু হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের মোকাবিলায় খুলনা জেলা সদরসহ ৯ উপজেলায় কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। সরকারি-বেসরকারি ৩৩৮টি সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত করা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় বুলবুল-এর প্রভাবে সৃষ্ট বৈরী আবহাওয়ার কারণে সুন্দরবনের দুবলার চরে এবারের ঐতিহ্যবাহী রাসমেলা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
শুক্রবার দুপুরে বাগেরহাট জেলা প্রশাসনের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা শেষে গণমাধ্যমে এ তথ্য জানানো হয়।
প্রতিবারের ন্যায় এ বছরের আগামী ১০ নভেম্বর থেকে ১২ নভেম্বর পর্যন্ত তিন দিনব্যাপী রাসমেলা অনুষ্ঠিত হওয়া কথা ছিল। ইতিমধ্যে সুন্দরবনের দুবলারচরে রাসমেলাকে ঘিরে উপকূলীয় অঞ্চলে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। মেলায় যেতে পুণ্যার্থী ও দর্শনার্থীদের প্রস্তুতিও শুরু করেছিল সবাই। এ মেলায় যাওয়াকে কেন্দ্র করে লঞ্চ, ট্রলার, সাম্পান, জালি বোট, স্পিড বোট ভাড়াসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু দুবলার চর রাস উৎসব জাতীয় কমিটির পক্ষ থেকে মানুষের নিরাপত্তা বিবেচনায় এ উৎসব বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে জানানো হয়েছে, ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’-এর কারণে সাগর উত্তাল হয়ে উঠেছে। শুক্রবার ভোর ছয়টা থেকে মংলা সমুদ্রবন্দরকে ৪ নম্বর সতর্কতা সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত নৌযানগুলোকে সাগরে চলাচল না করে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
এদিকে, ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের মোকাবিলায় খুলনা জেলা সদরসহ ৯ উপজেলায় কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। সরকারি-বেসরকারি ৩৩৮টি সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত করা হয়েছে। নদী তীরবর্তী শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের পাকা ভবনগুলো প্রস্তুত করা হয়েছে। স্থানীয় জেলেদেরকে নদীতে মাছ ধরা থেকে বিরত ও চরে বসবাসকারীদের নিরাপদে সরে আসার জন্য বলা হচ্ছে। সার্বিক পরিস্থিতি মোকাবিলায় মেডিকেল টিমও প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কৃষকরা ক্ষেতে আধপাকা ধান নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। জমির সব ধান এখনো পাকেনি। উপায় না পেয়ে আধপাকা ফসল তোলা হচ্ছে বলে খবর পাওয়া গেছে। ঝড়-তুফান হলে বেশি ক্ষতির আশঙ্কায় কৃষকরা আগাম ফসল তুলছেন।
খুলনা আঞ্চলিক আবহাওয়া অফিসের সিনিয়র আবহাওয়াবিদ আমিরুল আজাদ বলেন, খুলনাসহ আশপাশের উপকূলীয় অঞ্চলের আকাশে সকাল থেকে হালকা মেঘ ও গুমোট আবহাওয়া বিরাজ করছে। ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাবে দুপুর থেকে শুরু হয়েছে বৃষ্টিপাত। ঘূর্ণিঝড়ের অগ্রভাগ থেকে ভেসে আসা মেঘের থেকেই এখন উপকূলীয় অঞ্চলে বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে ‘বুলবুল’ উপকূলীয় অঞ্চল অতিক্রম করার সময় বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ১০০ থেকে ১২০ কি.মি. হতে পারে। বুলবুল এখন অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিয়েছে।
খুলনা জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আজিজুল হক জোয়ার্দ্দার বলেন, বিকেল ৪টায় খুলনা সার্কিট হাউজে ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাব মোকাবেলা ও সকল কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরি সভা আহ্বান করেছে জেলা প্রশাসন। ইতোমধ্যে সরকারি-বেসরকারি ৩৩৮টি সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত করা হয়েছে। উপকূলীয় দাকোপ ও কয়রা উপজেলার ২৪ হাজার সিপিপি স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
বাগেরহাট সংবাদদাতা জানান, ঘূর্ণিঝড় বুলবুল মোকাবিলায় ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে বাগেরহাট জেলা প্রশাসন।এর অংশ হিসেবে জেলার সব ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি সব সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিল করা হয়েছে।
শুক্রবার দুপুর ১২টায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। দুর্যোগ মোকাবিলায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. কামরুল ইসলামকে জেলার ফোকাল পার্সন হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
সভায় জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ জানান, জেলায় ২৩৪ টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রয়েছে, ১০টি কন্ট্রোলরুম খোলা হয়েছে। প্রত্যেক উপজেলায় মেডিকেল টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সাথে সমন্বয় রেখে জনসাধারণকে সচেতন করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিকেলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা উপজেলায় সভা করবেন। সমুদ্রে কোনো নৌযান নির্দেশ অমান্য করে যাতে চলতে না পারে সে জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সাতক্ষীরা থেকে স্টাফ রিপোর্টার আব্দুল ওয়াজেদ কচি জানান, ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাবে সাতক্ষীরাসহ উপকূলীয় এলাকা শ্যামনগর, আশাশুনিতে শুক্রবার ভোর থেকেই আকাশ মেঘাচ্ছন্ন। সেই সঙ্গে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। এছাড়া জেলার ১৩৭টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সবাইকে নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়া জন্য এলাকায় মাইকিং করা হচ্ছে। একইসঙ্গে উপকূলীয় এলাকার জেলে-বাওয়ালীদের পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নদীতে মাছ ধরা থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।
শুক্রবার বেলা ১১টায় প্রস্তুতি মূলক সভা শেষে সাতক্ষীরার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. বদিউজ্জামান (সার্বিক) একথা জানিয়েছেন।
সাতক্ষীরা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জুলফিকার আলী রিপন বলেন, শুক্রবার ভোর ৬টা থেকে মংলা সমুদ্র বন্দরের জন্য ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেওয়া হয়েছে। বেলা ১২টার সময় মংলা থেকে ঘূর্ণিঝড় বুলবুল ৫৭৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছিল। ঘূর্ণিঝড়টি ভারতের উড়িষ্যা, পশ্চিমবঙ্গ হয়ে বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রম করার আশঙ্কা রয়েছে। এর প্রভাবে শুক্রবার ভোর থেকে সাতক্ষীরাসহ উপকূলীয় এলাকার গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। শুক্রবার ভোর থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ১ মিলিমিটার এবং ১২টা থেকে দুপুর ৩টা পর্যন্ত ৩ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়টি শনিবার সন্ধ্যার দিকে এ অঞ্চল অতিক্রম করতে পারে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন